আরাকান করিডর- ঐতিহাসিক সুযোগ ও কঠিন ঝুঁকি

বঙ্গোপসাগরীয় ভূ-রাজনীতি আমাদের জন্য সৃষ্টি করেছে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ। এর মধ্যে মারাত্মক ঝুঁকিও তেমন আছে। এ সুযোগ ব্যর্থ হলে, হতেই পারে। তবে এর মধ্যে আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাও আছে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করাই নীচের সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণটির উদ্দেশ্য।
বিবেচনায় নিতে হবে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
১। দীর্ঘ মেয়াদী চিন্তা নির্ভর ও দূরদর্শী "জাতীয় স্ট্রাটেজিক এপ্রোচ" নিতে হবে। সরকারের স্বার্থ বা কোন দলীয় / স্বল্প মেয়াদী স্বার্থ / অগভীর বিবেচনা প্রসূত সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।
২। সিদ্ধান্তের পূর্ব শর্ত হিসাবে, এই বিশেষ ক্ষেত্রে, বিশেষ জাতীয় স্বার্থ সংজ্ঞায়িত ও সমন্বিত করে তৈরি করতে হবে একটি জাতীয় ন্যারেটিভ। জনপ্রিয় করে তুলতে হবে এ ন্যারেটিভ। গড়ে তুলতে হবে, কোন দলীয় নয়, জাতীয় স্বার্থ ভিত্তিক ঐকমত্য।
৩। এ কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে জাতীয় স্বার্থ এগিয়ে নিতে প্রয়োজন নেতৃত্বের গভীর রাজনৈতিক বোধ, ভূরাজনৈতিক জ্ঞান ও প্রজ্ঞা এবং জাতীয় অর্থনৈতিক ও সামরিক সক্ষমতা। ৫৪ বছরে আমরা এসবের কতটুকু সৃষ্টি করতে পেরেছি? এ ব্যর্থতা যে কত বড় - বঙ্গোপসাগর এবং আরাকান তা আজ স্পষ্ট করে তুলেছে। ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা নেবার এখনই সময়, আর দেরি নয়।
শেষ কথা হল - হুজুগে রাজনীতি বন্ধ করতে হব। কঠিনভাবে সৎ, মেধাবী ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে; দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, দুঃশাসন - এই "৩ দ" মুক্ত সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে শুরু না করলে; মেধাশূন্য ও কাণ্ডজ্ঞান বর্জিত গতানুগতিক রাজনীতি চলতে থাকলে আমরা জাতি হিসাবে কোন ঐতিহাসিক সুযোগ কাজে লাগাতে পারবো না। দুঃখের সাথে বলতে হয় - রক্তস্নাত জুলাই-আগষ্ট অভ্যুত্থানও কাজে আসবে না। অবশ্যই অভ্যুত্থান পরবর্তী জাতীয় পুনর্গঠনের সুযোগ ও সময় এখনো হারিয়ে যায়নি। যারা দায়িত্ব নিয়েছেন, পুরো দায় এখন তাদের, সময় ও তাদের।
লেখক: সাবেক সেনা কর্মকর্তা

মন্তব্য করুন