প্রয়োজনীয় সংস্কার, স্বৈরাচারের বিচার ও পিআর পদ্ধতিতে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করতে হবে: চরমোনাই পীর

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুদক ও বিচার বিভাগের সংস্কার জরুরি হয়ে দাড়িয়েছে। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার না হলে আগের তিমিরে ফেরত যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। তাই এসব ক্ষেত্রে সংস্কার হতেই হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বের নব্বইটিরও বেশি দেশে অনুসৃত সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) নির্বাচন দাবি করেছি। আমরা মনে করি জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে এবং কার্যকর ও যথাযথ প্রতিনিধিত্বশীল পার্লামেন্ট গঠিত হবে। নির্বাচনে কালো টাকা ও পেশি শক্তির ব্যবহার বন্ধ হবে।
শুক্রবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁও এর রাজনীতিবিদ, কূটনৈতিক, সাংবাদিক, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নির্বাচনহীন পরিস্থিতি দীর্ঘ হোক তা চায় না। বরং নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ করতে এবং নির্বাচনে সকলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
পীর সাহেব চরমোনাই আরও বলেন, ২০২৪ আমাদের ইতিহাসের একটি গৌরবময় ইতিহাস। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জুলাইয়ের শুরু থেকেই রাজনৈতিকভাবে স্বনামেই এই আন্দোলনের অংশ ছিল। দীর্ঘ স্বৈরশাসনের পরে একটি গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাহুমুক্ত হয়েছে। এখন সময় হলো বাংলাদেশ গড়ার। আমরা দেশের রাজনৈতিক চরিত্র পরিবর্তন করে সৌহার্দ্য ও সহযোগিতাপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ নির্মাণ করতে চাই। দুর্নীতিমুক্ত জনবান্ধব জনপ্রশাসন, স্বাধীন বিচার বিভাগ ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বয়ংক্রিয় ও দক্ষ করে তোলার জন্য আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, ইসলামে প্রতিবেশীকে সম্মান করা এবং প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেওয়ার ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেই নির্দেশনার আলোকে আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিবেশীকে সম্মান করার এবং বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে তাদের কোন ক্ষতি না করতে দেওয়ার ব্যাপারে আমরা বদ্ধপরিকর। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা ও ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের সকল মাজলুমদের ব্যাপারে আমরা সহমর্মিতা জানাচ্ছি এবং তাদের স্বাধিকারের আন্দোলনের সমর্থন ঘোষণা করছি।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, পতিত ফেসিস্ট স্বৈরাচারের আমলে অপরাধীদের যথাযথ বিচার নিশ্চিত করতে হবে। কারণ তাদের বিচার না হলে মানুষের রক্তের দায় জাতিকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তাড়া করবে। তাই যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের বিচার দ্রুত করতে হবে। তবে সতর্ক থাকতে হবে, কোন নিরপরাধ যেন কষ্ট নায় আর কোন অপরাধী যেন ছাড় না পায়।
ইফতার মাহফিলে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির ডাক্তার শফিকুর রহমান, বিএনপির প্রেসিডিয়াম সদস্য ডক্টর আব্দুল মইন খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকাতুল্লাহ ভুলু, সালাউদ্দিন আহমেদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাসেত আজাদ, মহাসচিব ডক্টর আহমাদ আব্দুল কাদের, আমার বাংলাদেশ পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার ফুয়াদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসেন রাজী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি,গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খান, ফারুক আহমেদ ছাড়াও সুইজারল্যান্ড, ইউএসএ, চিন, নেদারল্যান্ডসের হেড অফ মিশন আন্দ্রে কার্টসটেনস, পাকিস্তান, অষ্ট্রেলিয়া, ভারত, আফগানিস্তান, ইরান,ভুটান ও কসোভো কূটনৈতিক মিশনের প্রধান ও প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
দৈনিক খবরের কাগজের সম্পাদক মোস্তাফা কামাল, ইনকিলাবের সম্পাদক এ এমএম বাহাউদ্দিনসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার শীর্ষ সাংবাদিকবৃন্দ অংশ নেন।
এসময় ইসলামী আন্দোলনের সদস্য মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ মাদানী, নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল হক আজাদ, মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমেদ, যুগ্মমহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, আহমদ আব্দুল কাইয়ুম, মুফতি ইসহাক মো. আবুল খায়ের, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা নেছার উদ্দিন, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শেখ ফজলুল করিম মারুফ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইউসুফ আহমেদ মানসুর, ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আতিকুর রহমান মুজাহিদসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
(ঢাকাটাইমস/০৭মার্চ/জেবি/এমআর)

মন্তব্য করুন