বেনাপোলে আমদানি কমলেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াল রাজস্ব আদায়

বেনাপোল প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৫ মার্চ ২০২৫, ১৮:৪৯
অ- অ+

দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি কমে গেছে। তবে আমদানি কমলেও রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ।

দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যেই এই প্রবৃদ্ধি ঘটেছে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দরে।

বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে (জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি) এই বন্দরে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে পণ্য আমদানি কমেছে ১৯ হাজার ২০ দশমিক ৮২ মেট্রিক টন। তবে পণ্য আমদানি কমলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০৮.৬১ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে।

এ ছাড়া রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অর্থবছরের প্রথম আট মাসে রপ্তানি পণ্যর পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ কমলেও রপ্তানি পণ্যের মূল্য ২৮ দশমিক ০৭ শতাংশ বেড়েছে।

এ বন্দরে আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে শিল্প-কলকারখানার কাঁচামাল, তৈরি পোশাক, গার্মেন্টস, শিশুখাদ্য, মাছ, কেমিকেলসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য। আর রফতানি পণ্যের মধ্যে পাট, পাটের তৈরি সামগ্রী, গার্মেন্টস, তৈরি পোশাক, কেমিকেল, টিস্যু পেপার, মেলামাইন ও মাছ উল্লেখযোগ্য।

দেশের মোট ২৪টি স্থলবন্দরের মধ্যে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য হয় ১৬টি বন্দর দিয়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হয় বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ভারত থেকে মোট ২৭ লাখ ৪০ হাজার ৯৯ মেট্রিক টন পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল মোট ২৯ লাখ ৪৩ হাজার ৭১ মেট্রিক টন পণ্য। অর্থাৎ গত অর্থবছরের চেয়ে এবার একই সময়ে ২০ হাজার ২৭১ মেট্রিক টন পণ্য কম রপ্তানি হয়েছে। তবে রপ্তানি কম হলেও রপ্তানি মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ২৮ দশমিক ০৭ শতাংশ।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ভারত থেকে মোট ১১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৪৬ দশমিক ২৯ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়। গত অর্থবছরের একই সময়ে মোট ১১ লাখ ৫২ হাজার ৭৬৭ দশমিক ২৯ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছিল। গত অর্থবছরের তুলনায় একই সময়ে ১৯ হাজার ২০ দশমিক ৮২ মেট্রিক টন কম আমদানি হয়েছে।

কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, পণ্য আমদানি কমলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। বেনাপোল কাস্টম হাউসে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে প্রথম আট মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৪৫৩ কোটি ৩১ লাখ কোটি টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে ৪ হাজার ৬৬১ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

মাসভিত্তিক হিসাবেবে জুলাই মাসে ৪১৩.২২ কোটি টাকা, আগস্টে ৪০১.৫৫ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরে ৪৮৯.১১ কোটি টাকা, অক্টোবরে ৫২৪.৬৩ কোটি টাকা, নভেম্বরে ৬১৪.৭১, ডিসেম্বরে ৭৭৮.৯৫ কোটি টাকা, জানুযারি মাসে ৬২১.৬৩ কোটি টাকা ও ফেব্রুয়ারি মাসে ৮১৮.০৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী আব্দুল লতফি বলেন, দেশে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পরে দুই দেশের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে ভারত থেকে আমদানি কিছুটা কমলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেশির ভাগ আমদানিকারক বেনাপোল বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী। তবে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাজস্ব ফাঁকিরোধে কড়াকড়ি আরোপ করায় অসাধু ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছে।

রাজস্ব বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাণিজ্য সম্প্রসারণে নানান উদ্যোগ নিয়েছে। গত দুই মাসে বেনাপোল বন্দরের শূন্য রেখায় চালু করা হয় বন্দর কার্গোভেহিকেল টার্মিনাল ও বন্দরে বসানো হয় স্ক্যানিং মেশিন। দ্রুত পণ্য খালাস ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে জাতীয় রাজস্ব বোডের্র উদ্যোগে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাজস্ব ফাঁকিরোধে ও বাণিজ্য সহজীকরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে বর্তমানে বাণিজ্যে অনেকটা গতি ফিরে এসেছে। এটি সামনের দিনে প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে জানান তিনি।

মহসিন মিলন আরও জানান, বিগত সরকারের শেষ সময়ে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খুলতে ব্যাংক থেকে চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাওয়া যাচ্ছিল না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ধীরে ধীরে ডলার সংকট কেটে গেছে। এখন আর আমদানিকারকদের এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে না।

ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটানোর জন্য বেনাপোল স্থলবন্দরের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক বন্দর খোলা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) মো. শামীম হোসেন। সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা বন্দরে পণ্য লোড-আনলোড এবং আমদানি-রপ্তানি কার্য্যক্রম চালু রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বন্দরে নতুন করে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। এসব কাজ শেষ হলে বাণিজ্য সম্প্রসারণে বড় ভূমিকা রাখবে।

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. কামরুজ্জামান জানান, বৈধ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সহজীকরণের জন্য সময়োপযোগী প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্য্যক্রম নেওয়া হয়েছে। এতে বেনাপোলে সার্বিক আমদানি কমলেও রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০৮.৬১ কোটি টাকা বেশি আদায় হয়েছে। রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ।

এ অবস্থা বজায় থাকলে অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে বলে জানান বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার। তিনি আরও জানান, অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে রপ্তানি পণ্যের পরিমাণ ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ কমলেও রপ্তানি পণ্যের মূল্য ২৮ দশমিক ০৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৫মার্চ/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, সবাই উচ্ছ্বসিত: মির্জা ফখরুল
সাগর-রুনির হত্যাকারী দুজন, তবে শনাক্ত করা যাচ্ছে না: টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন
বাংলাদেশ বিমানে নয়, কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সেই দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া
টিসিবির ভুয়া কার্ড বাতিল করে নতুন ‘স্মার্টকার্ড’ দেওয়া হবে: খাদ্য উপদেষ্টা 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা