মিয়ানমারে যাচ্ছে খাদ্যপণ্য আসছে মাদকদ্রব্য!

দীর্ঘদিন লড়াইয়ে মাধ্যমে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি রাখাইনের কিছু রাজ্য দখলে নেওয়ার পর থেকে সেখানে খাদ্যসংকট শুরু হয়েছে। এই সুযোগে কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের কিছু পাচারকারী চক্র নানা কৌশলে নিত্যপণ্য মিয়ানমারে পাচার করছে, আর সেখান থেকে নিয়ে আসছে ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। এতে করে টেকনাফে দাম বেড়েছে ভোজ্যতেলসহ নানা খাদ্যপণ্যের। আর যততত্র মাদকের ছড়াছড়ি।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে মিয়ানমারে পাচার হচ্ছে বিপুল পরিমাণ খাদ্যপণ্য। বিশেষ করে পবিত্র রমজানের শুরুতে রাখাইনে ভোজ্যতেল, মুড়ি, পেঁয়াজ-রসুন, চিনি, পানীয়সহ অন্যান্য খাদ্যপণ্যের চাহিদা বেশ বেড়ে গেছে।
কেবল খাদ্যপণ্য নয়, ইউরিয়া সার, সিমেন্টসহ গৃহসজ্জার সরঞ্জামও পাচার হচ্ছে মিয়ানমারে । পেট্রল-অকটেনসহ হাজার হাজার লিটার বিভিন্ন জ্বালানি তেলও পাচার করা হচ্ছে নিয়মিত। এতে জড়িত রয়েছে শক্তিশালী পাচারকারী সিন্ডিকেট। জড়িত রয়েছে অসাধু কিছু দোকানদারও।
বিজিবি ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে হোয়াইক্যংয়ের কাটাখালী, উলুবনিয়া, খারাইঙ্গাঘোনা, লম্বাবিল, উনচিপ্রাং, ঝিমংখালী, খারাংখালী, হ্নীলা ইউপির মৌলভীবাজার পূর্বপাড়া, ওয়াব্রাং, লেদা, বরইতলী, বাহারছড়া ইউপির কচ্ছপিয়া, নোয়াখালীপাড়া, সাবরাং ইউপির মাঝের পাড়া, ডাঙ্গর পাড়া, দক্ষিণপাড়া, টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়ার ট্রানজিট জেটি ঘাট, নাইটংপাড়া, দক্ষিণ জালিয়াপাড়া, খায়ুকখালী খালসহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রতিরাতে মিয়ানমারে পাচার হচ্ছে হাজার হাজার টন খাদ্যপণ্য ও নানা সামগ্রী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হ্নীলা ইউনিয়নের ওয়াব্রাং এলাকার এক ব্যক্তি বলেন, ‘রাতে নাফ নদী দিয়ে আমাদের এলাকা থেকে মিয়ানমারে বিভিন্ন পণ্য যায়, মিয়ানমার থেকে আসে মাদক, ইয়াবা, ক্রিস্টাল মেথ আইস। রাতের আঁধারে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নানান পণ্য পাচার করছে চোরাকারবারিরা।’
স্থানীয়দের ভাষ্য, কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রায় আমদানি করা জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেলসহ অনেক পণ্য এভাবে পাচার হওয়ায় জাতীয় স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর বিনিময়ে চোরাপথে আসছে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদ। যেকোনো মূল্যে চোরাচালান বন্ধ করার দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, গত ৭ মার্চ হোয়াইক্যংয়ের উনচিপ্রাং থেকে মিয়ানমারে পাচারের সময় ৯৫ কার্টন বিভিন্ন ধরনের কোমল পানীয়, ৩৮ কার্টন জুস, ১০ কার্টন তরল দুধ এবং ৩০ কেজি ওজনের দুই বস্তা মুড়ি ও চোরাইপণ্য পরিবহণ কাজে ব্যবহৃত দুটি গাড়ি জব্দ করা করা হয়। এসময় নুরুল কবিরের ছেলে গাড়িচালক গিয়াস উদ্দিন (৪০) এবং একই এলাকার নুরুল হাসানের ছেলে ড্রাইভার মোহাম্মদ হোছনকে (৩৪) আটক করা হয়। চোরাকারবারে জড়িত থাকার অভিযোগে স্থানীয় নুরুল হক মিস্ত্রির ছেলে আব্দুর রহমান ডালিম, ঠান্ডা মিয়ার ছেলে রমজান আলী লেদু,ও মৃত মুহম্মদ হোছনের ছেলে মো. সেলিমসহ পাঁচজনের নামে টেকনাফ মডেল থানায় মামলা করা হয়।
এর আগে দুটি অভিযানে ৮০ বস্তা চিনি, ২০ বস্তা মসুর ডাল, ৩০ বস্তা চাল, এক হাজার ৩০০ লিটার তেলসহ অন্যান্য পণ্য উদ্ধার করে পুলিশ। অভিযানে উদ্ধারকৃত পণ্য পাচারের তুলনায় সিকি ভাগও নয় বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
হ্নীলা আল ফালাহ একাডেমির পরিচালনা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক জহির আহমদ বলেন, পাচাররোধে বিজিবিসহ সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে জিরো ট্রলারেন্স নীতি অবলম্বন করা উচিত। পাশাপাশি গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে পাচার কাজে জড়িতের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করা জরুরি।
টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘এটা যেহেতু সীমান্তের বিষয়, এ ব্যাপারে আমি বিজিবিকে অবহিত করব।’
(ঢাকাটাইমস/১৭মার্চ/মোআ)

মন্তব্য করুন