ঔষুধিগুণে ভরপুর দেশি ভেষজ ফল অড়বড়ই, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫৮
অ- অ+

দিন দিন হারিয়ে যাওয়া দেশি ফলের চাহিদা বেড়েই চলেছে। কারণ মানুষ বুঝতে পেরেছে দেশি এসব ফল দামে যেমন কম আবার পুষ্টিগুণে ভরপুর। এরকমই ঔষুধিগুণে ভরপুর দেশি ভেষজ ফল অড়বড়ই এখন বিলুপ্তির পথে। আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরিতে অড়বরইয়ে ব্যবহার বহুমাত্রিক। আয়ুর্বেদিক মতে, অনেক গুণে গুণান্বিত এই ফলের রস যকৃৎ, পেটের পীড়া, হাঁপানি, কাশি, বহুমূত্র, অজীর্ণ ও জ্বর নিরাময়ে বিশেষ উপকারী।

আমলকীর মতো নয়, স্বাদটা অনেকটা কামরাঙ্গা বা বিলম্বির মতো! বাংলাদেশে অঞ্চলভেদে একে নলতা, লেবইর, ফরফরি, নইল, নোয়েল, রয়েল, আলবরই, অরবরি ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়। তবে অড়বড়ইয়ের পাশাপাশি রয়েল নামটাই বেশি প্রচলিত। তবে ফলসা, নলতা, লেবইর, লবণী, ফরফরি, নইল, নোয়েল, নোয়াল, রয়েল, নোয়ার, রুয়াল, রুয়াইল, হরফল, হরিফল, ওরবরই, আলবরই, অরবরি, লিওরি ও লিয়রি নামেও ফলটি পরিচিত। ইংরেজিতে এই ফলের নাম Otaheite gooseberry। বৈজ্ঞানিক নাম Phyllanthus acidus।

পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম অড়বড়ই ফলের রয়েছে- জলীয় অংশ ৯১.৯ গ্রাম, আমিষ ০.১৫৫ গ্রাম, চর্বি ০.৫২ গ্রাম, খাদ্যআঁশ ০.৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫.৪ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১৭.৯ মিলিগ্রাম, আয়রন ৩.২৫ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ০.০১৯ মিলিগ্রাম, থায়ামিন ০.০২৫ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লেভিন ০.০১৩ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.২৯২ মিলিগ্রাম এবং ভিটামিন-সি ৪.৬ মিলিগ্রাম।

অড়বড়ই ফল গাছে গোলাপি রঙয়ের থোকা থোকা ফুল ফোটে মার্চ-এপ্রিল মাসে। আগস্টের শেষ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা হয়। হাল্কা হলুদ রং এর এই ফল এর ত্বক খাঁজ কাটা থাকে। বিভিন্ন দেশে অড়বরই গাছ লাগানো হয় সৌন্দর্য বৃক্ষ হিসেবে ।

অড়বরই প্রস্রাব বাড়িয়ে শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে সহায়তা করে। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। হৃদযন্ত্র ভালো রাখে। হাড় শক্ত করে। ওজন কমায়, হজমে সহায়তা করে। ঠাণ্ডা ও কাশি কমায়। ক্ষুধা বাড়ায়, বার্ধক্য কমায়। অড়বরইর প্রধান রাসায়নিক পদার্থ হচ্ছে এস্করবিক অ্যাসিড, ফাইটোস্টেরল ও স্যাপনিন।

এই ফলে প্রচুর জলও থাকে ফলে বেশি তৃষ্ণার্ত থাকলে এটা খেলে কিছুটা তৃষ্ণা নিবারিত হবে। এর গাছের পাতা গনোরিয়া রোগ উপশমকারী হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া এই ফলের বীজেরও অনুরূপ রোগ প্রতিরোধক্ষমতা রয়েছে।

অড়বরইয়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস।

লবণ দিয়ে, ডালে দিয়েও - নানা উপায়ে খাওয়া যায় এই ফল। তৈরি করা যায় মুখরোচক আচার।

অড়বড়ইয়ের আদি নিবাস কোথায় তা সঠিক জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় মাদাগাস্কারে এর উত্‍পত্তি। অনেক উদ্ভিদবিজ্ঞানী এটাও বলেন যে এর আদি নিবাস দক্ষিণ এশিয়া! পরে এ ফল বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে।

অড়বড়ই ফলের গাছের কচিপাতা ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে শাক হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়। ডায়াবেটিস, অকাল বার্ধক্য রোধে ও ত্বকের রোগ প্রতিরোধে অড়বড়ই ফলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। জেনে নিন অড়বড়ই ফলের ওষুধিগুণ সম্পর্কে-

ক্ষুধা বাড়ায় অড়বড়ই। অনেকে টক ফল খেতে চাই না। ভিটামিন “সিসমৃদ্ধ অনেক ফলই কিন্তু টক স্বাদের হয়ে থাকে। টক জাতীয় সকল ফল আমাদের খাবার তাড়াতাড়ি হজমে সহায়তা করে। নোয়াল ফল তেমনি খাবার হজমে সহায়তা করার পাশাপাশি রক্তের চর্বি কাটে। দ্রুত ক্ষুধা বাড়ায়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। ডায়াবেটিস রোগীরা ফলটি সরাসরি বা জুস করে খেতে পারেন। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অড়বড়ই ফল খুবই উপকারী।

কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের জন্য অড়বড়ই বেশ কার্যকরী এক দাওয়াই। এজন্য ৩ থেকে ৪ চামচ অড়বড়ইয়ের বীজ গুঁড়া করে নিন। এরপর হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে এক চামচ মধু দিয়ে পান করুন। দিনে অন্তত দুবার এই পানীয়টি পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি মিলবে। এছাড়াও অড়বড়ই গাছের সতেজ পাতা ধুয়ে পাঁচ মিনিট পানিতে ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে পান করলেও এ সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন।

অ্যাজমায় আক্রান্তদের স্বস্তি মিলবে অড়বড়ইয়ের বীজে। এজন্য ৬টি বীজ ও একটি পেঁয়াজ কেটে পানিতে ফুটিয়ে নিন। এরপর ঠাণ্ডা করে সামান্য মধু মিশিয়ে খেলেই মিলবে উপকার।

ওজন কমাতেও অড়বড়ই বেশ কার্যকরী এক ফল। এজন্য অবশ্যই অড়বড়ই গাছের কচি পাতা পানিতে ফুটিয়ে হালকা গরম অবস্থায় পান করুন। সকালে খালি পেটে ও রাতে ঘুমানোর পূর্বে নিয়মিত এটি পান করলে ওজন কমতে বাধ্য!

লিভারের সমস্যায় অড়বড়ইয়ের বীজ খুব উপকারী। লিভারে জমে থাকা ফ্যাট গলাতে পারে এই ফলটি। নিয়মিত অড়বড়ইয়ের জুস খেলে এ সমস্যার সমাধান হবে।

জ্বর প্রতিরোধে ও মুখের রুচি ফিরিয়ে আনতে অড়বড়ই অত্যন্ত সহায়ক।

অকাল বার্ধক্য রোধে ও ত্বকের রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত অড়বড়ই খেতে পারেন।

অড়বড়ইয়ের রস চুলের গোড়ায় লাগালে চুল মজবুত হয় ও খুশকিমুক্ত হয়।

অড়বড়ইয়ের বীজ পেটের সমস্যায় ও কৃমিনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

অড়বড়ইয়ের পাতার নির্যাস কফ-কাশি নিরাময়ে সহায়ক।

(ঢাকাটাইমস/২৩ এপ্রিল/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে নতুন ঘর পেল চার জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩০০ পরিবার
ঈদের আগেই আসছে নতুন নোট, নকশায় থাকছে জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি
টাঙ্গাইলে ৫ বছরেও অসমাপ্ত ব্রিজের নির্মাণকাজ! ঠিকাদার লাপাত্তা ৬ মাস 
সাবেক এনআইডি ডিজি সালেহ উদ্দিনের এনআইডি ‘ব্লকড’
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা