বদলে গেছে সালথা নির্বাচন অফিসের চিত্র, ঘুষ-হয়রানি ছাড়াই মিলছে সেবা
মাত্র ৯ মাস আগেও ফরিদপুরের সালথা উপজেলা নির্বাচন অফিসে কেউ নতুন ভোটার হতে গেলে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার ঘুষ দেওয়া লাগতো। টাকা না দিলে মাসের পর মাস ঘুরেও ভোটার তালিকায় নাম ওঠাতে পারতেন না কেউ।
জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল সংশোধন ও ভোটার হস্তান্তরসহ সব কাজই হতো টাকার বিনিময়। তখন নির্বাচন অফিসে প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেনের ভিডিও ভাইরাল হয়। এমনকি নারী সেবাপ্রত্যাশীদের পেলে তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করতেন নির্বাচন অফিসার- এমন অভিযোগও ছিল।
সালথা নির্বাচন অফিসের সেই ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে চলতি বছরে বিভিন্ন দিনক ও অনলাইন পত্রিকায় একাধিকবার সংবাদ প্রকাশের পর বদলি করা হয় উপজেলা নির্বাচন অফিসার আব্দুল রশিদকে। এরপর গত ১৮ মার্চ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন মো. ইমরানুর রহমান। সৎ অফিসার হিসেবে তাকে এখানে যোগদান করানো হয় বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে।
ইমরানুর রহমান যোগদানের পর থেকে বদলে যেতে শুরু করেছে নির্বাচন অফিসের কার্যক্রম। ঘুষ-বাণিজ্য ও হয়রানি ছাড়াই সেবাপ্রত্যাশীরা সেবা পেতে শুরু করেছেন। নতুন ভোটার হতে এখন আর কারও টাকাও লাগছে না। অফিসের বাইরে দালালদেরও আনাগোনা নেই। ফলে ঘুষ ও ভোগান্তি ছাড়া সেবা পেয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন অনেক সেবাপ্রত্যাশী।
সম্প্রতি নির্বাচন অফিসের বর্তমান কার্যক্রম নিয়ে অনুসন্ধানে গেলে সেখানে আগের সেই ঘুষ-বাণিজ্যের দেখা মেলেনি। বরং ভোগান্তি ও ঘুষ-বাণিজ্য ছাড়াই সেবা পাওয়ার সত্যতা পাওয়া যায়।
চলতি মাসে নতুন ভোটার হয়েছেন রাব্বী হুসাইন নামে এক তরুণ। তিনি বলেন, ‘আমি নতুন ভোটার হয়েছি। মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে আমার আইডি কার্ড হাতে পেয়েছি। আমার একটা টাকাও লাগেনি। কেউ আমার কাছে টাকাও চায়নি। নির্বাচন অফিসার সরাসরি আমার কাজটি করে দিয়েছেন। তার ব্যবহারে আমি খুশি।’
আসমা বেগম নামে আরেক সেবাপ্রত্যাশী বলেন, ‘গত বছর আমার মেয়ের ভোটার করাতে গিয়ে টাকা দিতে হয়েছিল। তারপরেও অনেক ঘুরিয়েছে। তবে কয়েকদিন আগে আমার ছেলের এনআইডি কার্ডের সমস্যা সমাধান করার জন্য নির্বাচন অফিসে যাই। কেউ কোনো টাকা-পয়সা চায়নি। সবার আচরণই পরিবর্তন মনে হলো। নির্বাচন অফিসারও গুরুত্ব দিয়ে আমার কাজটি করে দিয়েছেন। বর্তমানে নির্বাচন অফিসের সেবায় আমরা সন্তুষ্ট।’
সালথা উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. ইমরানুর রহমান বলেন, ‘সরকার আমাকে চাকরি দিয়েছে মানুষকে সঠিক সেবা দেওয়ার জন্য। সেবাপ্রত্যাশীদের হয়রানি বা চুষে খাওয়ার জন্য চাকরি দেয়নি। যেহেতু অফিস নিয়ে বিগত দিনে কিছু বিতর্ক ছিল, তাই আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করছি, ঘুষ-বাণিজ্য ও কোনো রকমের হয়রানি ছাড়া যাতে মানুষকে সেবা দেওয়া যায়। সে জন্য আমি অফিসের সামনে প্রথমে অভিযোগ ও পরামর্শ বক্স বসিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন অফিসে এসে কোনো স্টাফ দ্বারা কেউ হয়রানির শিকার হলে বা কেউ ঘুষ চাইলে, সে ওই বক্সে অভিযোগ জমা দিতে পারবেন। অভিযোগের সত্যতা পেলে আমি কঠোর ব্যবস্থা নেব। তাছাড়া নির্বাচন অফিসে এসে সেবা নিতে কোনো ধরণের টাকা-পয়সা লেনদেন না করার জন্য ও দালালের খপ্পরে না পড়ার জন্য সতর্ক ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
(ঢাকাটাইমস/৫ডিসেম্বর/এজে)
মন্তব্য করুন