জাবিতে শিক্ষার্থীকে ধাক্কা দিয়ে মেরে ফেলা সেই অটোচালক আটক
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আফসানা করিম রাচি নাম এক শিক্ষার্থীকে ধাক্কা দিয়ে মেরে ফেলা সেই অটোরিকশাচালক আরজুকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন৷
রবিবার দুপুরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী গেরুয়া এলাকা থেকে সন্দেহজনকভাবে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসেন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ৷ পরে দিবাগত রাত ২টায় তাকে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
গত ১৯ নভেম্বর দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে থাকা পথচারী নাঈম এবং রিকশার যাত্রী আবু হায়াত ও নাহিদ তাকে শনাক্ত করেন। এদের মধ্যে নাঈম নির্মাণাধীন লাইব্রেরি ভবনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অনিক এন্টারপ্রাইজের অপারেটর। অন্য দুজন সমাজবিজ্ঞান এক্সটেনশন ভবনের নির্মাণ শ্রমিক।
নাহিদ ও হায়াত জানান, আমরা ওইসময় টারজান থেকে এই অটোরিকশায় উঠি। আমরা নিশ্চিত এটাই সেই অটোরিকশা। সে অটোর সিট পরিবর্তন করেছে। এটার সামনের দিকে লাইট ভেঙে গিয়েছিল, সেগুলো এখনো আছে। হাত দিয়ে দেখলাম, অটোতে নতুন রঙ করা হয়েছে।
নাঈম বলেন, আমি তখন শহীদ মিনারের পাশ দিয়ে লাইব্রেরির দিকে যাওয়ার সময় চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই ছাত্রীকে ৭টা ৫২ মিনিটে মেডিকেলে নিয়ে আসি। আমি অটোরিকশাওয়ালাকে অনেকটা শনাক্ত করতে পেরেছি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, আমরা যখন বিভিন্ন সূত্র ধরে তাকে খুঁজে পাই, তখন তার বাম হাতে খুব ব্যথা ছিল। তার গলার পাশেও আঘাতের চিহ্ন৷ সে বলেছে, এটা ১৫ দিন আগের ব্যথা। আমরা জিজ্ঞেস করলাম কোন ডাক্তার দেখিয়েছেন। পরে মেডিকেলের ডাক্তারকে দেখানোর পর নিশ্চিত হয়েছি, সে সম্প্রতি কোথাও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। সেদিনের দুর্ঘটনা থেকেই সে আঘাত পেয়েছে বলে আমাদের ধারণা।
এছাড়া দুর্ঘটনার পর অটোরিকশায় আংশিক পরিবর্তন নিয়ে আসে এবং বিক্রির চেষ্টা করে। ক্ষতিগ্রস্ত অটোরিকশার সামনের দিকে গ্লাস ছিল না, হেডলাইট ভেঙে গিয়েছিল। সেগুলো নতুন করে মেরামত করা হয়। লাল রঙের বসার সিট বদলে নীল রঙের সিট লাগানো হয়। রিকশার যাত্রী আবু হায়াত ও নাহিদের বক্তব্য শুনে এমনটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে৷ এছাড়া রিকশায় নতুন রঙের গন্ধ ও নতুন হুড লাগানোর আলামত পাওয়া যায়৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে অটোরিকশাটি নিয়ে আসা হলে সেটি পরীক্ষা করে দেখেন পুলিশ ও নিরাপত্তা রক্ষীরা৷
এ বিষয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অটোরিকশাচালক আরজু বলেন, আমি আসলে রিকশা চালাই না। ১৫ দিন আগে থেকেই আমার হাতে ব্যথা ছিল। রিকশার ব্যাটারি একটু খারাপ ছিল দেখে কম দামে বেচে দিছি। আমি ওইদিন জাহাঙ্গীরনগরে ছিলাম না।
আরজুর দাবি, রবিবার দুপুরের আগেই সে রিকশাটি সাভারের ছায়াবিথী এলাকার ‘মাসুদ অটো পার্টস’-এর মালিক মাসুদের কাছে মাত্র ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। এমনকি সন্দেহ থেকে বাঁচতে বিক্রির কাগজপত্রে দুর্ঘটনার আগের দিন ১৮ নভেম্বরের তারিখ উল্লেখ করা হয়।
এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার এসআই অলক কুমার বলেন, ‘তাকে সন্দেহের মূল কারণ তার মোবাইল ট্রাক করে দেখা গেছে, সে ১৯ তারিখ সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগরে ছিল৷ বাকি আগে পরের সময় সে ক্যাম্পাসের বাইরে ছিল। আবার ঘটনার পর সে রিকশা বিক্রির চেষ্টা করেছে। তার কথাবার্তা অসংলগ্ন। আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে এসেছি।’
(ঢাকাটাইমস/২৫নভেম্বর/এজে)
মন্তব্য করুন