কপ২৯ সম্মেলন: আর্থিক সহায়তার দাবিতে ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র ও এলডিসির ‘ওয়াকআউট’
কপ২৯ জলবায়ু সম্মেলনে ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জোট তাদের মৌলিক চাহিদা এবং অর্থনৈতিক সহায়তার দাবি উপেক্ষিত হওয়ার অভিযোগ তুলে সম্মিলিতভাবে গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করে অতিরিক্ত আলোচনা থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শনিবার আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অলিম্পিক স্টেডিয়ামের নিজামি হলে সমাপনী অধিবেশনের মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণার কথা রয়েছে।
সম্মেলনের নতুন জলবায়ু অর্থায়ন চুক্তির খসড়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধিরা। তারা একে একেবারে অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন। নতুন চুক্তিতে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন তৈরির লক্ষ্যমাত্রা রাখা হলেও প্রতিবছর ৩০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। ২০৩৫ সাল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা বলা হলেও প্রথম বছরেই তা মাত্র ১০০ বিলিয়ন ডলারে সীমাবদ্ধ থাকবে, বিশেষজ্ঞদের মতে যা অত্যন্ত অপ্রতুল।
অ্যালায়েন্স অবস্মল আইল্যান্ড স্টেটস (এওএসআইএস)-এর সভাপতি সেড্রিক শুস্টার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা এখানে সুষ্ঠু চুক্তির আশা নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু যেভাবে আলোচনা এগিয়েছে তাতে আমাদের দাবি পূর্ণ হয়নি। আমরা এখন এখান থেকে বেরিয়ে এসেছি।’
এছাড়া শুস্টার উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দ্বীপগুলো দ্রুত পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া নিয়ে ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কথা উল্লেখ করেন। ঘূর্ণিঝড়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, এবং অন্যান্য জলবায়ু বিপর্যয়ের ক্ষেত্রেও এই দেশগুলো আর্থিক সহায়তা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সঠিক পথে না চললে আমাদের দেশগুলো অদূর ভবিষ্যতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় যে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না।’
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমরা আর কতক্ষণ এই পরিস্থিতি সহ্য করব? আমাদের দ্বীপগুলো পানির নিচে চলে যাচ্ছে এবং বৈশ্বিক নেতৃবৃন্দ তাদের দায়িত্ব পালন করছে না।’ এদিকে, কপ২৯ সম্মেলনে জলবায়ু সংকট মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক সহায়তার কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অন্যান্য দেশগুলোর নেতৃবৃন্দ।
সিয়েরা লিওনের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী এমানুয়েল আবদুলাহি বলেন, ‘এটি একটি গুরুতর পরিস্থিতি। ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র ও এলডিসি দেশগুলো অতিমাত্রায় জলবায়ু সংকটের সম্মুখীন। তাদের পাশে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সাময়িকভাবে আলোচনা থেকে সরে এসেছি, তবে আমাদের দাবি পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত আলোচনা অব্যাহত রাখব। আমাদের জন্য একটি ন্যায্য চুক্তি না হলে, আমাদের দেশে ফিরে যাওয়া অসম্ভব হবে।’
এখনো পর্যন্ত, কপ২৯ সম্মেলনে জলবায়ু সংকট মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক সহায়তা বা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না হওয়ায় ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র ও এলডিসি দেশগুলোর মধ্যে হতাশা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় দ্রুত ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নিলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর ভবিষ্যৎ আরও অন্ধকার হয়ে উঠতে পারে।
(ঢাকাটাইমস/২৩নভেম্বর/এমআর)
মন্তব্য করুন