প্রশাসনে নতুন-পুরনো ভূত লুকিয়ে, দেশ টেকাতে সচেতন হোন: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, `আমরা এই মুহূর্তে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে নেই। প্রশাসনের মধ্যে এখনো বিগত স্বৈরাচারের ভূত লুকিয়ে আছে। কাজেই সেই ভূত এবং বর্তমানে নতুন কোনো ভূত যদি থাকে, তারা কী ষড়যন্ত্র করছে? সেই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হতে হবে। যদি আমরা সচেতন না হই, এই দেশকে টিকিয়ে রাখা মুশকিল হবে।‘
যারা মব তৈরি করছে তারা কেন গ্রেপ্তার হচ্ছে না, তাদের প্রতি সরকারের প্রচ্ছন্ন মদদ আছে কি না প্রশ্ন তোলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
শনিবার (১২ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে ছাত্রদলের শহীদ পরিবারের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদলের ১৪২ শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
তারেক রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমরা বারবার বলেছি, অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। এর পরও কেন সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তা সরকারের কাছেই প্রশ্ন। যুবদলের একজন কর্মীকে রগ কেটে হত্যা করা হয়েছে, কিন্তু এ নিয়ে কেউ কথা বলছে না। অথচ বিএনপি এ নিয়ে কথা বললে, বলা হয় আমরা লাশের রাজনীতি করছি।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিএনপি আজ থেকে তিন মাস আগে জুলাই সনদের ব্যাপারে দলের কী বক্তব্য, কী অবস্থান, সবকিছু ব্যাখ্যা করে লিখিতভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে উপস্থাপন করেছে।’
কিছু ইস্যু তৈরি করে একটি বিভ্রান্তির চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশবাসীর সামনে পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, দেশটি কারোর একার না, কোনো রাজনৈতিক বা একক দলের না, দেশটি সমগ্র বাংলাদেশের ২০ কোটি মানুষের। দেশরক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের। কাজেই এই দেশকে নিয়ে আমাদের সকলকে ভাবতে হবে।’
‘দেশের মধ্যে কারা কী করছে, কারা কী ভূমিকা রাখছে, অতীতে কারা কী বলেছে, কারা কী বর্তমানে বলছে, বলার মধ্যে পার্থক্য কী, কাদের কী অবস্থান, ঘন ঘন কারা কী পরিবর্তন করছে- এসব বিষয়ে দয়া করে আপনারা নজর রাখবেন।’ দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন তারেক রহমান।
তারেক রহমান বলেন, ‘আমি আজ থেকে ৮-৯ মাস আগে বলেছিলাম, অদৃশ্য শত্রু আছে। আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে সেই অদৃশ্য শত্রু। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে মানুষের গণতন্ত্র ও অধিকারের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করেছিল, জনগণের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছিল।’
সভায় একজন শহীদ বাবার প্রশ্নে তারেক রহমান বলেন, ‘দেশের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র ছিল, আমরা স্বৈরাচারকে বিতাড়িত করেছি। কিন্তু বিজয় অর্জন করলেও ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি।
‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে বারবার বলেছি, অন্যায়কারী যেই হোক আমরা প্রশ্রয় দেব না। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সরকার কেন ব্যর্থ হচ্ছে? এখানে যে শহীদের বাবা প্রশ্ন তুলেছেন তার সঙ্গে মিলিয়ে আমরাও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে একই প্রশ্ন করতে চাই।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত ১৫-১৬ বছরে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের বহু নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। বিএনপি ছাড়াও অনেক দলের নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। এমনকি নির্দল অনেক মানুষও শহীদ হয়েছেন দেশের মানুষের অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে। আগামীতে বিএনপি দেশের মানুষের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে পারলে এসব হত্যার বিচার সুষ্ঠুভাবে হবে। এ বিষয়ে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নেবে বিএনপি।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল।
সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির।
(ঢাকাটাইমস/১২জুলাই/জেবি/মোআ)

মন্তব্য করুন