মিষ্টি ও পাকা তরমুজ এক ঝলকেই চেনার সহজ উপায়

গ্রীষ্মকালীন জনপ্রিয় সুস্বাদু ফল তরমুজ। যার বৈজ্ঞানিক নাম সাইট্রুলাস ল্যানাটাস। পশ্চিম আফ্রিকা তরমুজের জন্মভূমি হিসেবে বিখ্যাত। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে এর দেখা মিলে। ওয়াটারমেলন নামটাও আফ্রিকানদের দেওয়া। এমন নামকরণের কারণ হলো অভিযাত্রীরা একে পানির বিকল্প উৎস হিসেবে ব্যবহার করতো। এর বহিরাবরণ খুবই পুরু ও ভিতরে সুমিষ্ট পানি সমৃদ্ধ (এন্ডোস্পার্ম) হওয়ায় অভিযাত্রীরা একে পানির আধার হিসেবে সাথে রাখত পিপাসা মেটানোর জন্য। গরমকালে শরীরের পানির ঘাটতি মেটানোর সবচেয়ে ভাল উপায় হল তরমুজ খাওয়া। তরমুজে পানির পরিমাণ ৯২ ভাগ। তাই শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে ও পানিশূন্যতা কমাতে তরমুজ অতুলনীয়। তবে শুধু পানির ঘাটতি মেটানো নয়, এ ছাড়াও তরমুজে রয়েছে নানা গুণ।
তরমুজে আছে খনিজ উপাদান: তরমুজ এর আছে অনেক পুষ্টিগুণ। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা তরমুজে রয়েছে ৯২ থেকে ৯৫ গ্রাম পানি, আঁশ ০.২ গ্রাম, আমিষ ০.৫ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, ক্যালোরি ১৫ থেকে ১৬ মি.গ্রাম। । এছাড়াও তরমুজে ক্যালসিয়াম রয়েছে ১০ মি.গ্রাম,আয়রন ৭.৯ মি.গ্রাম, কার্বহাইড্রেট ৩.৫ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.২ গ্রাম, ফসফরাস ১২ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ও ভিটামিন বি২।
গরমের ফল তরমুজে রয়েছে লাইকোপেন ও প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। মজার ব্যাপার হলো, লাইকোপেনের উপস্থিতির কারণেই এমন লাল টকটকে হয়ে থাকে তরমুজ। আর এসব উপাদানের উপকারিতাও কিন্তু বিশাল। গবেষণায় দেখা গেছে, তরমুজে থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট স্ট্রোকের মতো ঝুঁকি কমায় আর উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তরমুজে ফ্যাটের পরিমাণ একেবারেই কম, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি।
গবেষণায় আরও পাওয়া গেছে, তরমুজে থাকা উপাদান লাইকোপেন মানবদেহের কয়েক ধরনের ক্যানসারের বিরুদ্ধে খুব ভালো কাজ করে।
তরমুজে আছে অসাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। বিশেষ করে তরমুজে আছে যৌনশক্তি বৃদ্ধির অকল্পনীয় খাদ্যগুণ। এজন্য তরমুজকে বলা হয় প্রাকৃতিক ভায়াগ্রা। কেউ কেউ সহজলভ্য এই ফলটিকে ‘গরিবের ভায়াগ্রা’ মনে করেন।
তবে গ্রীষ্মের এই ফল কিনে বাড়ি ফিরে কেউ স্বস্তিতে হাসছেন, আবার কেউ ফলটি কেটে হতাশ হচ্ছেন। এসব কিছুই হয় রসালো, লাল ও মিষ্টি তরমুজ কেনার উপর। যদিও পাকা তরমুজ চিনে কেনাটা দুষ্কর বটে! জেনে নিন মিষ্টি ও পাকা তরমুজ যেভাবে চিনবেন-
তরমুজ কেনার আগে বেছে বেছে গোলাকৃতি বা ওভাল আকৃতির কিনা দেখে নিবেন। অপেক্ষাকৃত ছোট, বাঁকা তরমুজ কিনবেন না। সাধারণত পর্যাপ্ত পানি না পেলে তরমুজ ছোট ও বাঁকা হয়ে থাকে। এসব তরমুজ মিষ্টি ও রসালো হয় না।
তরমুজ হাতে নিয়ে ওজনটা দেখবেন ভারী কিনা। যদি ভারী হয় তাহলে রসে টইটম্বুর হবে। যদি হালকা বা ফাঁপা মনে হয়, তাহলে বুঝে নিবেন, সেটি ঠিক মতো পাকার আগেই বাজারে চলে এসেছে।
তরমুজের একটি অংশ হলদে রঙের হলে সেটা কিনবেন। কারণ, তরমুজের যে অংশ দীর্ঘদিন মাটির উপর থাকে, সেই অংশ হলুদ হয়ে যায়। বড় হলুদ দাগ থাকা মানে তরমুজটি ঠিক মতো পেকে যাওয়ার পর জমি থেকে ওঠানো হয়েছে। সাদা দাগ আছে এমন তরমুজ কখনো কিনবেন না। এ ধরনের দাগ থাকা মানে তরমুজ সময়ের আগেই জমি থেকে উঠিয়ে আনা হয়েছে বিক্রির জন্য। তরমুজের গোড়ায় শুকিয়ে যাওয়া অংশ, মানে তরমুজের ডাটা শুকিয়ে গেলে বুঝবেন সেটি ঠিক মতো পেকেছে। কাঁচা থাকলে কিনবেন না
তরমুজের গোড়ায় শুকিয়ে যাওয়া অংশ থাকলে বুঝবেন সেটি ঠিক মতো পেকেছে। মানে তরমুজের ডাটা শুকিয়ে গেলে। এটি সবচেয়ে সহজ উপায় রসালো, লাল ও মিষ্টি তরমুজ চেনার।
তরমুজের গায়ে টোকা দিয়ে দেখতে পারেন। ভারি আওয়াজ আসলে সেটি রসালো ও পাকা। অতিরিক্ত ভারী আওয়াজ হয় তাহলে বুঝবেন তরমুজ বেশি পেকে গিয়েছে। আর তরমুজের মাথার দিক হাত দিয়ে টিপে দেখুন। যদি বেশি শক্ত হয় তাহলে বুঝবেন কাঁচা রয়েছে। আবার বেশি নরম হলেও বুঝবেন বেশি পেকে গিয়েছে। হালকা নরম হলে তবেই কিনবেন।
তরমুজের ডোরাকাটা দাগও এর গুণমান নির্দেশ করে। যদি গাঢ় সবুজ এবং হালকা হলুদ রঙের ডোরাকাটা দাগ পরিষ্কার এবং উজ্জ্বল হয় তাহলে বুঝতে হবে তরমুজটি সম্পূর্ণ পাকা। যদি তরমুজের ভেতরে ঝাপসা, হালকা ডোরাকাটা দাগ থাকে, তাহলে তার ভেতরটা ফ্যাকাশে হতে পারে। গোল ও ভারী তরমুজের মিষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তরমুজের গায়ে চাপড় মেরে যদি শোনেন গভীর বা মোটা শব্দ হচ্ছে তাহলে তা মিষ্টি হবে।
(ঢাকাটাইমস/৮ এপ্রিল/আরজেড)

মন্তব্য করুন