নগরিয়া

দেহ ব্যবসার প্রচারণায় শিশুরা

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০১৬, ১৫:১০ | প্রকাশিত : ২৩ নভেম্বর ২০১৬, ১৫:০৫

মাথার ওপর রোদ। সবাই ব্যস্ত। যে যার গন্তব্যে ছুঁটছেন। পেছন ফিরে তাকানোর সময় নেই কারো। ঢাকার ফার্মগেট শহরের ব্যস্ততম এলাকা। রাস্তা পারাপারে লোকজন সিঁড়ি বেয়ে উঠছেন পদচারী সেতুতে (ফুটওভারব্রিজ)। কিছুদূর উঠতেই ব্রিজের রেলিংয়ে বসা এক শিশুকে চোখে পড়ল। তার হাতে একগাদা ভিজিটিং কার্ড। উপরে যেই উঠছে তাকেই একটি করে কার্ড ধরিয়ে দিচ্ছে। কেউ অফিসমুখী। কেউ স্কুল-কলেজ শেষ করে সন্তানকে নিয়ে ফিরছেন বাসায়। ছেলে-মেয়ে, বুড়ো-তরুণ সব ধরণের পথচারী আছে ওই পথে। কী দিচ্ছে, কেন দিচ্ছে- দেখার সময় নেই। কেউ হাতে নিচ্ছেন। হাত নেড়ে মানা করছেন।

ব্যস্ত এক পথচারী হাত বাড়িয়ে কার্ডটি নিয়ে দেখতে দেখতে উপরে উঠলেন। কী লেখা কার্ডে? দেখতে লাগলেন। কিছু পরে চোখমুখ খিচিয়ে, খিস্তি করে কার্ডটি ছুঁড়ে ফেললেন মাটিতে। ‘কী লেখা ছিল কার্ডে?’ জবাবে বললেন, ‘আর কী! হোটেল বিজনেস। দেহ ব্যবসা। দিনে-দুপুরে এসব চলছে। স্কুল-কলেজ ছুটি হয়েছে। বাচ্চারা বাসায় যাচ্ছে। এদের হাতে এসব কার্ড দেয়া হচ্ছে। বয়সটা তো ভালো না। এই বয়সে এরা যদি বখে যায়, তাহলে নৈতিকতার কতটা অধপতন হবে বুঝতে পারছেন?’

পাশের আরেকজন মাঝবয়সী পথচারী বললেন, ‘দেখেন কত খারাপ এরা। শিশুদের ব্যবহার করছে এসব অসামাজিক কাজে। এগুলো দেখার মত কেউ কি নেই?’

দাঁড়িয়ে সবার কথা মন দিয়ে শুনছিলেন মোস্তাফিজ। এই স্কুল শিক্ষকও কথার মধ্যে ঢুকলেন। দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘এই দেশে সবই সম্ভব। আমরা নিজেরা কতটা অসামাজিক, নির্বোধ, নির্লিপ্ত হয়ে পড়েছি- তা একটু চোখকান খোলা রাখলেই দেখা যায়।’

কথা হল ওই শিশুটির সঙ্গে। ওভারপাসের রেলিংয়ে বসে যে কার্ড বিলি করছে। ওর বয়সটা দুরন্তপনার। স্কুলে যাওয়ার। খেলাধুলা আর ছুটোছুটির। কিন্তু ওরা আর সব শিশুদের মত নয়। আলাদা। ওদের একটা পরিচয় আছে। পথশিশু। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিভাবকহীন ছিন্নমূল এই শিশুদের দেখভালের দায়িত্ব আসলে কাদের? এই শিশুরাই এতটুকু বয়সে নিজের জীবনের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে নিয়েছে। নিজের অন্ন, বস্ত্র, থাকার জায়গা খুঁজতে হচ্ছে নিজেদের। এই সুযোগটা নিচ্ছে একশ্রেণির অসাধু মানুষ। যাদের কারণে এই সমাজে অনৈতিক, অসামাজিক কার্যকলাপ ছড়িয়ে যাচ্ছে অলিতে-গলিতে।

শিশুটির নাম সুজন (ছদ্মনাম)। ও জানাল, প্রতিদিন দুই হাজার কার্ড সে বিলি করে। বিনিময়ে পায় ১০০ টাকা। ‘এই টাকা দিয়ে কী করো?’ জানতে চাইলে বলে, ‘ভাত খাই। মায়েরে দেই।’ মা থাকে মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে। সে সব সময় মার কাছে যায় না। বেশির ভাগ সময় অন্য পথশিশুদের সঙ্গে কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট ফুটওভারব্রিজে রাত কাটায়।

শিশুটির সঙ্গে কথা বলে কিছুটা অপ্রকৃতস্থ মনে হল। চোখ টেনে তুলতে পারছে না। মুখ হা করে আছে। সামান্য লালা ঝরছে। কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। বললাম, ‘তুমি কি নেশা কর?’ চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে বলল, ‘এহন করি না। আগে করতাম।’ ওর পাশে সিঁড়িতে বসে ছিল আরেক পথশিশু মুন্না (ছদ্মনাম)। সুজনের কথা শুনে বলল, ‘তুই না একটু আগে গাম (আঠা) খাইলি। মিছা কতা কছ কে?’ এবার সুজনের জবাব। ‘আমি খাইছি নাকি তুই খাওয়াইছস।’ দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হাসতে শুরু করল। তাই বলে কাজ ছেড়ে নয়। যেই উঠছে উপরে, একটা কার্ড বাড়িয়ে দিচ্ছে হাতে। কেউ নিচ্ছে। কেউ চোখ মটকে তাকাচ্ছে। স্কুল থেকে সন্তানকে নিয়ে যারা বাসায় ফিরছে তারা পরেছে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। দেখেও না দেখার ভান করছে। সন্তানের হাতটি শক্ত করে ধরে উঠে যাচ্ছে সিঁড়ি বেয়ে। অনেক ব্যস্ততা। বাসায় ফিরতে হবে।

ঢাকাটাইমস/২৩নভেম্বর/এইচএফ/টিএমএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

হাসিনা-থাভিসিন দ্বিপাক্ষীক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা স্বেচ্ছাচারিতামূলক: টিআইবি

রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করবে ঢাকা-ব্যাংকক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

একযোগে আট বিভাগে সম্পন্ন হলো ৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা

৭৬ বছরের রেকর্ড ভাঙছে তাপপ্রবাহ

তাপপ্রবাহে রেলের কর্মীদের জন্য ৫ নির্দেশনা

মানবসম্পদ উন্নয়নে উচ্চ শিক্ষার বিকল্প নেই: স্থানীয় সরকার মন্ত্রী

তাপমাত্রার মতোই বেড়েছে সবজি ও মাছ-মাংসের দাম

১৬ জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহ, দুই জেলায় অতি তীব্র

বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :