স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে পরকীয়া প্রেমিকের মাধ্যমে খুন, লাশ পুকুরে

শরীয়তপুর প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ২২:৪৯ | প্রকাশিত : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ২২:১৮

পরকীয়া প্রেমিক মামুন চৌকিদারের কথায় স্বামী মোহাম্মদ আলী মাদবরকে (৪০) ভাতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান স্ত্রী মুন্নি বেগম। এরপর স্বামী ঘুমিয়ে পড়লে রাতের আঁধারে তুলে দেন প্রেমিকের হাতে। প্রেমিক তার সহযোগীদের নিয়ে মোহাম্মদ আলীকে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয় গ্রামের একটি পুকুরে। ঘটনাটি ঘটেছে শরীয়তপুরের নড়িয়ায়।

নিহত মোহাম্মদ আলীর বাড়ি নড়িয়া উপজেলার জপসা ইউনিয়নের মাইজপাড়া গ্রামের রাড়ি কান্দি এলাকায়। পেশায় তিনি সিএনজি চালক ছিলেন। তিনি ওই গ্রামের মৃত আমিন উদ্দিন মাদবরের ছেলে। শুক্রবার বিকালে নিহতের বাড়িতে স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদে মোহাম্মদ আলীর নিখোঁজ ও খুনের বর্ণনা দেন মুন্নি বেগম।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকালে শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান চাঁন মিয়া মাদবরের পুকুর থেকে মোহাম্মদ আলী মাদবরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার আগের দিন বুধবার রাতে মোহাম্মদ আলী নিখোঁজ হলে তার স্বজনরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রায় নয় বছর আগে মোহাম্মদ আলী মাদবরের সঙ্গে বিয়ে হয় মুন্নি বেগমের। তাদের সংসারে দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। মুন্নি বেগম প্রায়ই তার পরকীয়া প্রেমিক মামুন চৌকিদারের সঙ্গে পালিয়ে যেতেন। কিছুদিন আগেও মুন্নি বেগম মামুনের সঙ্গে পালিয়ে গেছেন। কিন্তু ছোট সন্তানদের কথা ভেবে মোহাম্মদ আলী মাদবর তার স্ত্রী মুন্নিকে আবার ফিরিয়ে আনেন। এরপরও পরকীয়া প্রেমিক মামুন চৌকিদার বিভিন্নভাবে মুন্নি বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। গত বুধবার রাতে মোহাম্মদ আলী মাদবর নিখোঁজ হয়। এর পরদিন বৃহস্পতিবার পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঠায়।

হাসপাতাল থেকে মোহাম্মদ আলীর স্বজনরা জানতে পারেন তিনি ঘুমের ওষুধ খেয়েছেন। এরপর বাড়িতে এসে মুন্নি বেগমের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি জানান, ভাতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীকে পরকীয়া প্রেমিক মামুন ও তার সঙ্গীদের কাছে তুলে দেওয়া হয়। পরে এলাকাবাসী মুন্নি বেগমকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে।

মুন্নি বেগম বলেন, আমি চলে গিয়েছিলাম। এরপর ঝামেলা করে আমাকে আবারও এনেছিল মোহাম্মদ আলী। এই বাড়িতে আসার পরেও মামুনের সঙ্গে আমার মোবাইলে যোগাযোগ হয়েছিল। মামুন আমাকে বলেছিল, মোহাম্মদ আলী তার (মামুনের) নামে মামলা করেছে। মামলা যদি চলমান থাকে তাহলে মোহাম্মদ আলীর ক্ষতি করব। কিন্তু আমি তাকে বলেছিলাম, মোহাম্মদ আলী মামলা তুলে ফেলবে, ক্ষতি করার দরকার নেই। কিন্তু মামুন আমার কথা শোনেনি বরং আমাকে ভয় দেখিয়ে বলেছে, ‘আজ ঘুমের ওষুধ দিয়ে যাব, এই ওষুধ মোহাম্মদ আলীকে খাওয়াতে হবে। নয়তো তোমার মেয়েদের মেরে ফেলব।’

মুন্নি বলেন, মামুনের এমন কথায় আমি মোহাম্মদ আলীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়েছি। এরপর মামুন এসে মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে গেছে। মামুন যখন মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে যায়, তখন ওর সঙ্গে আরো দুজন ছেলে ছিল, কিন্তু আমি তাদের চিনি না। যখন মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে যাচ্ছিল তখন মোহাম্মদ আলী অজ্ঞান ছিল।

নিহতের ভাতিজা আসিফ মাদবর বলেন, কাকি দুই-তিনবার চলে গিয়েছিল। কাকা শিশু মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বারবার ফিরিয়ে এনেছেন তাকে। কিন্তু কাকি ভালো হয়নি। গত বুধবার রাতে প্রথমে কাকার কাছ থেকে সব টাকা পয়সা নিয়ে নেয় কাকি। এরপর কাকাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে পরকীয়া প্রেমিক মামুনের কাছে তুলে দেয়। মামুন আমার কাকাকে মেরে ফেলছে। আমি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।

নিহতের বড় বোন আয়েশা বেগম বলেন, বারবার চলে যাওয়া সত্ত্বেও আমার ভাই মুন্নিকে এনেছিল। কিন্তু বুধবার রাতে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে পরকীয়া প্রেমিক দিয়ে আমার ভাইকে হত্যা করেছে মুন্নি। আমি ভাই হত্যার বিচার চাই।

বিষয়টি নিয়ে শরীয়তপুর পুলিশের অতিরিক্ত সুপার (নড়িয়া সার্কেল) আহসান হাবীব বলেন, নিহত মোহাম্মদ আলীর পরিবারে দাম্পত্য কলহ ছিল। বিষয়টি নিয়ে থানায় বেশ কয়েকবার অভিযোগ করা হয়েছিল। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৬এপ্রিল/প্রতিনিধি/পিএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :