আবার ৫ জানুয়ারি, তবে শঙ্কাহীন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০১৭, ১০:৪২ | প্রকাশিত : ০৫ জানুয়ারি ২০১৭, ০০:০০
ফাইল ছবি

আরেকটি ৫ জানুয়ারি এসে গেল। ‘বিতর্কিত’ ও ‘একতরফা’ নির্বাচনের অভিযোগে দিনটি ঘিরে গত দুই বছর বিএনপির কর্মসূচির কারণে দেশজুড়ে ছিল অস্থিরতা, শঙ্কা আর আতঙ্ক। তবে এবার আর সে রকম দেখা যাচ্ছে না জনমনে, বিশেষ করে রাজধানীবাসীর মধ্যে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও সরকারবিরোধী দল বিএনপির কয়েকজন নেতার বক্তব্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ এবারের ৫ জানুয়ারির উত্তাপ। ফলে দিনটি নিয়ে অনেকটা শঙ্কাহীন রাজধানীবাসী।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির আন্দোলনের মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে। একে ঘিরে এরপর দীর্ঘদিন ধরে চলে দেশজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা।

বিএনপি-জামাত জোটের ডাকা হরতাল-অবরোধে জনজীবন বিপর‌্যস্ত হয়ে পড়েছিল। হতাহত বহু মানুষ। শুধু ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের দিনেই সহিংসতায় নিহত হন ২২ জন। নির্বাচন প্রতিরোধ করতে বিএনপি ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকে।

বিএনপি দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে অভিহিত করে। আর আওয়ামী লীগ একে বলছে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ হিসেবে।

২০১৪ সালের নির্বাচনকে ঘিরে চলা অস্থিরতা এরপর চলতেই থাকে। সেটির ভয়াবহ রূপ দেশবাসী দেখে ২০১৫ সালের বর্ষপূর্তি ঘিরে। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি উপলক্ষে নানা রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয় বিএনপি-জামাত জোট। সরকার ও আওয়ামী লীগও মাঠে নামে কর্মসূচি ঠেকাতে। কর্মসূচিতে বাধা পাওয়ার অভিযোগ তুলে খালেদা জিয়া লাগাতার অবরোধ ডাকেন। টানা ৯২ দিনের ওই অবরোধ-হরতালে নাশকতায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায় পেট্রোল বোমায়।

ফলে ৫ জানুয়ারি দেশবাসীর কাছে এক আতঙ্কের দিন হয়ে দাঁড়ায়। তবে পরের বছর ২০১৬ সালে পরিস্থিতি আর অতটা ভয়াবহ রূপ নেয়নি দিনটি ঘিরে। এর জন্য অবশ্য তত দিনে হামলা-মামলা-গ্রেপ্তারে বিএনপির কোণঠাসা হয়ে পড়া এবং ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের একটা ভূমিকা রয়েছে।

নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। ২৮ ডিসেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক সহিংসতা অনেকটাই কমে আসে। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দুটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে প্রার্থী দেয়।

ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের পরে বিএনপি-জামাত জোট আরে তেমন কোনো বড় ধরনের সহিংসতার দিকে যায়নি। ফলে ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি তুলনামূলক শান্তিপূর্ণ একটি দিন কাটায় ঢাকাবাসী। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি-জামাত জোট পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ও মিছিল, সভা করলেও নগর প্রশাসনের কৌশলী নানা ব্যবস্থায় বড় ধরনের কোনো নৈরাজ্য কিংবা সহিংসতার সৃষ্টি হয়নি সেবার।

৫ জানুয়ারি নিয়ে গত দুই বছর মানুষের মধ্যে আগে থেকে যে ভয় জেঁকে বসত, এবার সেটি অনুপস্থিত অনেকটা। দিনটি নিয়ে তেমন একটা আলোচনাও নেই সাধারণের মানুষের মধ্যে। নেতাদের বক্তৃতা-বক্তব্য বাদ দিলে রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপির বিশেষ কোনো কর্মসূচি নেই দিনটি ঘিরে। অন্তত ঢাকার পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো থাকবে বলে ধরে নেয়া যায়। ঢাকায় কোনো কর্মসূচি না থাকলেও সারা দেশের জেলা, উপজেলায় ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনের অংশ হিসেবে মিছিল, মিটিং করবে বলে বিএনপি আগেই জানিয়েছে।

তবে এদিন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দেয়া উপলক্ষে বিএনপি ঢাকায় বড় ধরনের শোডাউন করতে পারে। তাতে হয়তো যানজট বাড়তে পারে রাজধানীর সড়কে।

খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দেয়ার তারিখ ৫ জানুয়ারি নির্ধারণ ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবসের’ কর্মসূচি বানচালের কৌশল হতে পারে বলে সন্দেহ করছেন বিএনপির নেতারা। খালেদা জিয়া আদালতের কাজে ব্যস্ত থাকবেন বলে বিএনপি ৫ জানুয়ারি ঢাকায় কর্মসূচি না দিলেও ৭ জানুয়ারির মহাসমাবেশ নিয়ে বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না বলে জানিয়েছেন দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির শীর্ষ নেতারা। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনের অংশ হিসেবে মহাসমাবেশ করতে ঢাকার মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন দিয়ে রেখেছে বিএনপি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সমাবেশের অনুমতি না মেলায় বিএনপি অভিযোগ করেছে, সরকারের কৌশল করে সমাবেশ বানচাল করতে চায়, তাই পুলিশ অনুমতি দিতে গড়িমসি করছে।

দলের মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আশঙ্কা করছেন, আগের মতো এবারও পুলিশ অনুমতি নিয়ে সংকট সৃষ্টি করতে পারে। তবে কর্মসূচি পালনের ব্যাপারে বিএনপি বদ্ধপরিকর বলেও জানিয়েছেন রিজভী।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ দিনটিকে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ হিসাবে পালন করে আসছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয় এবং সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার ‘আনন্দ’ উদযাপনে দলটি বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- দলের জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ে সমাবেশ ও বিজয় র‌্যালী। বেলা আড়াইটায় রাজধানীর রাসেল স্কয়ারে আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর উত্তর এবং ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রাঙ্গণে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সমাবেশ ও বিজয় শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে। নগরবাসী আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরেও বাড়তি যানজটের আশঙ্কা করছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে‌ ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ উপলক্ষে দলের ঘোষিত কর্মসূচি যথাযথভাবে পালনের জন্য দেশের সব জেলা, মহানগর ও উপজেলা আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/৪ জানুয়ারি/টিএ-বিইউ/এসএএফ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :