অধূমপায়ীদের সুরক্ষায় নজর নেই

সৈয়দ অদিত, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৫ জানুয়ারি ২০১৭, ০৮:১৬

‘ধূমপান পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা কঠিন কাজ। তবে একে নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করে যেতে হবে। আবার অধূমপায়ীরা যাতে পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিতে না পড়ে সেদিকেও নজর রাখতে হবে। এজন্যে জনবহুল স্থানে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটা সেভাবে কার্যকর নেই। তাই রাস্তাঘাটে ধূমপানের জন্য নির্দিষ্ট ঘর করে দিতে হবে।’

ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলছিলেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় পরিবেশ সোসাইটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসাইন।

ধূমপান আইন লঙ্ঘন করে অনেকেই যেখানে-সেখানে ধূমপান করছেন। এতে অধূমপায়ী ব্যক্তিরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। পড়ছেন বিড়ম্বনায়। তাদের বিরক্তির জের ধরে ধূমপায়ী-অধূমপায়ীর মধ্য অনেক সময় তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। অধূমপায়ীদের সুরক্ষার দিকটি নিয়ে প্রশাসনও সেভাবে ভাবছে না বলে অভিযোগ। ধূমপানবিরোধী সংগঠনগুলো তামাকজাত দ্রব্য কমানোর বিষয়ে মাঠে থাকলেও অধূমপায়ীদের জন্যে তাদের তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধূমপান নিরুৎসাহিত করতে আইন শুধু কাগজে থাকলে হবে না। তা বাস্তবায়নে প্রশাসনকে কঠোর উদ্যোগ নিতে হবে। ধূমপানবিরোধী প্রচার-প্রচারণাও বাড়াতে হবে।

ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকার রাস্তাঘাটে অবাধেই বিড়ি-সিগারেট বেচাবিক্রি চলছে। আবার ধূমপানও চলছে দেদারসে। বাসে-রেস্তোরাঁয় কেউ সিগারেট ধরালে অনেকেই প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেন। তাই ঢাকার অনেক রেস্তোরাঁর দেয়ালে ‘ধূমপান নিষিদ্ধ’ এমন কথা জুড়ে দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে যাত্রীরাও এখন গণপরিবহনে খুব একটা ধূমপান করেন না।

সহযাত্রী, পথচারীদের ধূমপানে ত্যক্ত-বিরক্ত হওয়ার কথা বললেন বেসরকারি চাকুরে মশিউর রহমান। তার ভাষ্য, ‘বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়ার গন্ধ আমার অসহ্য লাগে। আবার কাঁশিও শুরু হয়ে যায়। অপরিচিত লোকরা ধূমপান করলে কিছু বলাও যায় না। আবার সহ্যও করা যায় না। বাসে অনেক যাত্রী একজনকে নিষেধ করলে হয়তো সিগারেট ফেলে দেয়।’

তবে যানবাহনে চালক ও তাদের সহকারীরা ধূমপান করছেন ঠিকই। এ নিয়ে যাত্রীদের আপত্তি তারা পাত্তা দেন না। এ বিষয়ে মগবাজার মোড়ে ধূমপান করতে থাকা বাসচালক বাদশা মিয়া বলেন, ‘আমাগো সারাদিন যায় বাসে। কখন, কই গিয়া বিড়ি খাইমু?’

ধূমপান নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন এমন সমাজকর্মীরা জানিয়েছেন, বিড়ি-সিগারেট সহজলভ্য হওয়ার কারণে দেশে ধূমপায়ীর সংখ্যা বেশি। এই জন্যে আবার পরোক্ষ ধূমপানের মাত্রা বেশি। এটা প্রতিরোধে সিগারেটের দাম আরো বাড়াতে হবে। ধূমপান নিরুৎসাহিত করতে অন্যান্য দেশ বিড়ি-সিগারেটের দাম বাড়িয়ে রেখেছে।

এদিকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে পরিচালিত গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস্)- ২০০৯ অনুসারে বাংলাদেশে ধূমপায়ীর সংখ্যা ২ কোটি ১৯ লাখ। এরমধ্যে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। তবে নারীরা পরোক্ষভাবে ধূমপানের শিকার হচ্ছে। ৩০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নারী র্কমস্থলে এবং ২১ শতাংশ নারী জনবহুল স্থানে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। অর্থাৎ, ধূমপান না করেও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি নারী।

তাই নারী, শিশুসহ সব অধূমপারী জনগণকে তামাকের ক্ষতি থেকে বাঁচাতে শতভাগ ধূমপানমুক্ত স্থানের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রকাশ্যে নয়, জনবহুল স্থানে ধূমপান নিষিদ্ধ

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের ৪ (১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কোনো পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান করতে পারবেন না।

৪ (২) ধারায় শাস্তির বিষয়েও বলা হয়েছে। যাতে উল্লেখ আছে, কোনো ব্যক্তি জনবহুল স্থ’ানে ও গণপরিবহনে ধূমপান করলে তাকে অনধিক ৩০০ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। কোনো ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা তার বেশি দ- পেলে, তাকে দ্বিগুণ টাকা জরিমানা দিতে হবে।

আইনে জনবহুল স্থানের বিষয়ে বলা হলেও প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়নি। এই সুযোগ নিয়েই যেখানে-সেখানে ধূমপান চলছে।

অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কনট্রোলে (এফসিটিসি) বাংলাদেশ ২০০৩ সালে সাক্ষর করেছে। যেখানে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

প্রকাশ্যে না হলেও আপাতত জনবহুল স্থানে ধূমপান নিষিদ্ধের আইন বাস্তবায়নে জোর দিতে বলছেন ধূমপানবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত কর্মীরা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হেলাল আহমেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ধূমপানের ক্ষতিকর দিকতো সবাই জানেন। তবে ধূমপায়ীর হার কমাতে হলে সিগারেটের সহজলভ্যতা কমাতে হবে। ধূমপান বিরোধী আইন মানতে সবাইকে বাধ্য করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে শাস্তি আরো বাড়াতে হবে। এটা করলে ধূমপানের মাত্রা কিছুটা হলেও কমবে।’

ঢাকাটাইমস/০৫জানুয়ারি/এমও/টিএমএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :