বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটানোর সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:৪৮| আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৮:৪৪
অ- অ+
ফাইল ছবি

বেসামরিক বিমান চলাচলে যেকোনো ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টির ঘটনা প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান যুক্ত করে নতুন আইন করা হচ্ছে। সর্বোচ্চ এই শাস্তির বিধানসংবলিত আইনের খসড়া আজ সোমবার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘বেসামরিক বিমান চলাচল আইন-২০১৭ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।

এর আগে খসড়াটি গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভায় নীতিগত ও পরে চূড়ান্ত অনুমোদন হয়। আইন মন্ত্রণালয়ের আইনি মত (ভেটিং) শেষে এটি জাতীয় সংসদে ওঠানোর আগ মুহূর্তে সর্বোচ্চ শাস্তির বিষয়টি নতুনভাবে সংযোজন করা হলো।

মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। তিনি নতুন এই আইনের কথা জানিয়ে বলেন, ‘এ আইনটি আগে মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। পরে এটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আসে। সিভিল এভিয়েশন আইন ১৯৬০ এ যেটা ছিল সেটাকে হালনাগাদ করা হয়েছে। অপরাধের দণ্ড বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে আইনের ২৯ ধারায় বলা হয়েছে- বিমান নেভিগেশনে বিঘ্ন সৃষ্টি করা। এটি করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

এই আইনের বিস্তারিত ব্যাখ্যায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বিমান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অনধিক পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ড হবে। ‘

তিনি বলেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বা বেপরোয়াভাবে এরূপ কোনো কাজ করেন যাতে বিমান পরিচালনায় অসুবিধা সৃষ্টি হয় এবং তার দ্বারা কোনো মানুষের জীবন ঝুঁকির সম্মুখীন হয় তাহলে এটি একটি গুরুত্ব অপরাধ। এ অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।’

আইনের ২৪ ধারায় বলা হয়েছে- ‘এ আইনের অধীন আইন, বিধি ও ইয়ার নেভিগেশন অর্ডার (এএনও) লঙ্ঘন করার দণ্ড হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অনধিক পাঁচ বছরের সশ্রম দণ্ড ও কমপক্ষে এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। সার্টিফিকেট, লাইসেন্স বা পারমিট জাল করলে তার শাস্তি একই রকম অনধিক পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিমান নেভিগেশনে হস্তক্ষেপ করিবার দণ্ড- যদি কেউ বিমানের নেভিগেশনের সঠিক আলো অথবা সংকেতের কার্যক্রম বা পরিচালনায় হস্তক্ষেপ, অপসারণ বা ধ্বংস করেন- এই জাতীয় অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অনধিত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, অনধিক পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। এটি এ আইনের ২৬ ধারায় বলা হয়েছে। এটা বিপজ্জন অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

আইনের ৩১ ধারায় বলা হয়েছে- বিমানে বিপদজনক পণ্য পরিবহন করলে অনধিক সাত বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড হবে। এটি সর্বসাধারণের জন্য প্রযোজ্য। ৩২ ধারায় বলা হয়েছে- বাংলাদেশের আকাশ সীমা কেউ লঙ্ঘন করলে তিনি অনধিক সাত বছর কারাদণ্ড এবং কমপক্ষে তিনবছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’

তবে প্রধানমন্ত্রীর বিমানে ত্রুটির ঘটনায় গ্রেপ্তারদের নতুন আইনে বিচার হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রপরিষদ সচিব বলেন- যেহেতু আইনটি নতুন। এখনো সংসদে পাস হয়নি। তাই ওই আসামিদের বিচার এই আইনের অধীনে হবে না। ’

নতুন আইনে বিমান হ্যাঙ্গারে থাকা অবস্থা থেকে শুরু করে অবতরণ পর্যন্ত যেকোনো পর্যায়ে ইচ্ছাকৃত বা বেপরোয়াভাবে এমন কোনো কাজের জন্য কারও জীবন ঝুঁকির মুখে পড়লে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অনধিক পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ড।

প্রায় ৫৬ বছর পর বেসামরিক বিমান চলাচল আইন করতে যাচ্ছে সরকার। বিমানের বর্তমান অধ্যাদেশটিও ১৯৮৫ সালের। নতুন আইনে বিমানযাত্রীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) প্রযোজ্য নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে। ওই নীতিমালার পাশাপাশি দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে প্রস্তাবিত আইনে জেল-জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। আইনে বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকারের বিধি প্রণয়নের ক্ষেত্র সম্প্রসারণেরও প্রস্তাব করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৩ফেব্রুয়ারি/এমএম/জেডএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
টস হেরে বোলিংয়ে বাংলাদেশ
৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’, সাধারণ ছুটি ঘোষণা
সংগীতশিল্পী জীনাত রেহানা আর নেই
আমাজনে কাজ করছে ১০ লাখ রোবট, মানবকর্মীদের চাকরি হারানোর শঙ্কা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা