শুনতে শুনতে দোভাষী!

শেখ সাইফ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১১:০২ | প্রকাশিত : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১০:৫৯

'বিদেশীদের দেখলেই সবাই তাকিয়ে থাকে। তারা কেমন করে কথা বলে দেখে। সাধারণ মানুষের কাছে কীভাবে বিদেশিরা তাদের কথা বলে দেখি। তাদের কোন কিছু কিনতে হলে দোকানের কর্মচারীরা অনেকেই কিছু বলতে পারে না, বুঝতেও পারে না। অনেকে ঝামেলায় পড়ে। তাই আমি তাদের সাথে ঘুরে ঘুরে তাদের ভাষা শিখেছি। বিদেশিদের কথা বিক্রেতাদের কাছে বলি।' বলছিলেন বঙ্গবাজারের মিরাজুল আলম।

রাজধানী ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিপণিবিতান বঙ্গবাজার। এই মহানগরের অন্যান্য মার্কেটের তুলনায় বেশ সুলভ মুল্যেই এখান থেকে পোশাক কেনা যায়। বিদেশি ক্রেতারাও জানেন সেই খবর। তাই বঙ্গতে গেলেই ভিনদেশি ক্রেতা চোখে পড়ে। তাদের কেনাকাটায় দোভাষী হিসেবে মিরাজ ছাড়াও আছেন হোসেন, পারভীন, শিল্পী, মীরাজ, সালাউদ্দিন, বাবু, সুজন, বেবি, কলি, রোকসানা, আঁখি, রাখিয়া। তাদের কেউ কেউ কাজ করছেন দুই দশক ধরে।

বঙ্গবাজারের একাধিক দোভাষী জানালেন, ছোটবেলা থেকেই এই মার্কেটে কাজ করছেন। তখন থেকে বিভিন্ন বিদেশিদের সঙ্গে ঘোরাঘুরির সুযোগ হয়। তারা খুশি হয়ে টাকা দিতেন। তাদের সঙ্গে থাকতে থাকতে, তাদের কথা শুনতে শুনতে ভাষা শিখে নিয়েছেন। কেউই কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশি ভাষা রপ্ত করেননি। বিদেশি ভাষার অক্ষর কেমন তাও জানেন না তারা।

বঙ্গের সব দোভাষী একাধিক বিদেশি ভাষায় কথা বলতে পারেন। কেউ কেউ পাঁচ থেকে ছয়টি ভাষাও জানেন। যারা বেশি ভাষা জানেন তাদের চাহিদাও একটু বেশি। এখানকার দোভাষীরা ইংরেজি, আরবি, উর্দু, ফার্সি, স্প্যানিশ, জাপানিজ, চাইনিজ, ইন্দোনেশিয়ান ও মালয় ভাষা জানেন। দোভাষীদের সবাই ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় পারদর্শী।

১৮ বছর বয়সী মিরাজ অনর্গল কথা বলেন ছয়টি ভাষায়। এরমধ্যে নিজের মাতৃভাষা বাংলা তো আছে। এছাড়া আছে ইংরেজি, আরবি, ফার্সি, উর্দু, মালয় ও ইন্দোনেশিয়ান ভাষা। তিনি বেশি পারদর্শী ইংরেজি ও আরবিতে। অন্য ভাষাগুলোর ক্ষেত্রে কাজ চালিয়ে নিতে পারেন।

কথার মাধ্যমে কী করতে হয়- জানতে চাইলে মিরাজ বললেন, ‘বিদেশিরা এলে তারা যে ব্র্যান্ডের জামাকাপড় চায় তা দোকানে নিয়া দেখাই। তারা জিনিসপত্র সস্তা পাইয়্যা বস্তা ভইরা কিনে নেয়। বৃষ্টির দিনে ছাতা নিয়া দাঁড়াইয়া থাকি। কেনাকাটা শেষে গাড়িতে তুলে দিই। বিদেশিরা খুশি হয়ে যা দেয় তা-ই নিই।’

কয়েকজন নারী বঙ্গবাজারে দোভাষী হিসেবে কাজ করছেন। এমনি একজন বেবি আক্তার। তিনি বলেন, 'আমার স্বামী নেশা করতো। আমার কাছে ট্যাকা চাইতো। না দিতে পারলে মারধর করতো। কষ্ট সইতে না পেরে তালাক দিছি। মায়ের কাছে পোলারে রাইখা এই কাম করি।'

ভিনদেশি ক্রেতা কখন, কিভাবে আসবে- আজকাল সেই খবরও আগেভাগে নিয়ে নেন কেনো কোনো দোভাষী। এ প্রসঙ্গে পারভীন ইসলাম জানালেন, বিদেশি ক্রেতা কখন আসবে, এখন আর সেই অপেক্ষায় থাকেন না। মোবাইলে বিভিন্ন হোটেলের গাড়িচালকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আগেই জেনে নেন কোন দিন কখন কোন বিদেশি আসবেন। আরেক দোভাষী রাবেয়া খাতুন বললেন, ‘বঙ্গবাজারের দোভাষীরা মিলেমিশে কাজ করি। দোকানদাররাও আমাদের সহায়তা করে।’

বঙ্গবাজারের দোকানমালিক ও কর্মচারীরা দোভাষীদের ইতিবাচকভাবেই নিয়েছেন। তবে কেউ কেউ আবার নাখোশ। কারণ তাদের কারণে অনেক সময় ভিনদেশিদের কাছ থেকে জামাকাপড়ের অতিরিক্ত দাম আদায় করতে পারেন না।

তবে ভিনদেশি ক্রেতার আশায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকলে অনেক সময় নারী দোভাষীদের আপত্তিকর মন্তব্য শুনতে হয় বলে জানালেন রোকসানা চামেলী নামে একজন। এই সমস্যার সমাধানের বিষয়টি নিয়ে ভেবেছেন মিরাজ। তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো আইডি কার্ড নেই। এর জন্য অনেক সমস্যা হয়। আমাদের আইডি কার্ড থাকলে সবাই আমাদের চিনত।’

ঢাকাটাইমস/২১ফেব্রুয়ারি/এসএস/টিএমএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :