ফুলের মেলায় আনন্দদোলা

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০১৭, ১৯:১৫ | প্রকাশিত : ০১ এপ্রিল ২০১৭, ১৯:০৮

‘জোটে যদি মোটে একটি পয়সা, খাদ্য কিনিয়ো ক্ষুধার লাগি,/দুটি যদি জোটে তবে অর্ধেকে তার ফুল কিনে নিয়ো, হে অনুরাগী’। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের 'ফুলের ফসল' কবিতাটি মনে পড়ে গেল বাংলা একাডেমি চত্বরে ফুলের মেলায় গিয়ে। দলে দলে মানুষ ঘুরছে মেলায়। তারা ফুল কিনছে, ছুঁয়ে দেখছে। যেন বা ঝাঁকে ঝাঁকে প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে ফুলে ফূলে।

রাজধানীতে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত তিন দিনের ‘ফ্লাওয়ার ফেস্ট’ বা ফুলের মেলার প্রথম দুই দিনে ২০ হাজারের বেশি দর্শনার্থীর আগমন ঘটে বাংলা একাডেমি চত্বরে। আজ শনিবার ছিল তৃতীয় ও শেষ দিন। এদিন দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল আগের দুই দিনের চেয়ে বেশি।

নানা রঙের ফুল দিয়ে সাজানো একেকটা স্টলের সামনে গিয়ে মুগ্ধতাই কেবল বাড়ে। কোথাও কোথাও ফুলের ঘ্রাণে ম-ম চারপাশ। হৃদয়-মন ছুঁয়ে যায় আনন্দ দোলা। শুধু কি সুগন্ধ ছড়ায় ফুল?

মেলায় ঘুরতে গিয়ে হঠাৎ ভড়কে যেতে হয় ফুলের তৈরি হাতি, ঘোড়া, নৌকা, দোলনা, ঘোড়ার গাড়ি, পালকি দেখে। প্রথম দেখায় মনেই হবে না এগুলো আসল না নকল।

ফূল আর ফুলের নানা আয়োজন দেখতে তাই তপ্ত দুপুরে বিভিন্ন বয়সী মানুষের দেখা মিলল ফুল মেলায়। আয়োজকরাও আগত দর্শনার্থীদের নানা তথ্য-উপাত্ত দিয়ে তাদের চাহিদা ও কৌতূহল মেটাচ্ছেন। যেসব স্টলে ফুল বিক্রি হয়, সেখান থেকে মোটামুটি কম দামেই ফুল কিনে নিচ্ছেন দর্শনার্থীরা।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শুরু হয় তিন দিনের ফ্লাওয়ার ফেস্ট-২০১৭।

আয়োজকরা বলছেন, দেশি ফুলের সঙ্গে সব বয়সী মানুষকে পরিচিত করাই তাদের মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি চাষিরা নিজেদের উৎপাদিত ফুলও এখানে নিয়ে আসার সুযোগ পান। ফলে ক্রেতারা কোনো ধরনের রাসায়নিক ছাড়াই সরাসরি বাগানের ফুল কিনতে পারেন।

শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মেলা প্রাঙ্গণে ঘুরে দেখা যায়, লাইন ধরে সব বয়সী মানুষ মেলা চত্বরে ঢুকছে। স্টলে স্টলে ঘুরে রঙ-বেরঙের ফুল ছুঁয়ে দেখছেন, কেউ আবার হাতে ফুল নিয়ে ঘুরছেন। বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে বেশি আগ্রহ দেখা গেছে ফুল কেনায়। কেউ আবার ফুলের গাছ কিনছেন। অনেকে ফুলের মুকুট মাথায় পরে ছবি তুলছেন, সেলফি তুলছেন।

পরিবার-পরিজন নিয়ে যেমন অনেকে এসেছেন, তেমনি বন্ধু-বান্ধবী, প্রিয় মানুষকে নিয়ে ঘুরছেন ফুল মেলায়। কয়েকজনকে দেখা গেল প্রিয়জনের চুলে ফুল গুঁজে দিতে। পরে বিভিন্ন ফ্রেমে আনন্দস্মৃতি ধরে রাখতে ছবি তুলে রাখছেন তারা।

কথা হয় ধানমন্ডি থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নাহিয়ান ও কানিজের সঙ্গে। ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এত সুন্দর আয়োজন না আসলে বুঝতাম না। দুজনের আসা নিয়ে একটু ঝামেলা ছিল, কিন্তু এসে মনটা ভালো হয়ে গেছে।’মেলার প্রচার আরো বেশি হলে দর্শনার্থী বেশি হতো বলেও মনে করেন তারা।

ইনোভেশন অ্যান্ড ইনকিউভেশন সেন্টার ফর এন্টারপ্রাইজেসের (আইআইসিই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াজউদ্দিন মোশাররফ ঢাকাটাইমসকে বলেন, মেলায় এক হাজারের বেশি প্রজাতির ফুলের প্রদর্শনী হচ্ছে। আগামী দিনে আরো বড় পরিসরে মেলা আয়োজন করতে চান তারা।

মেলায় কথা হয় উত্তরা থেকে ফুল নিয়ে আসা আলতাফ মোল্লার সঙ্গে। তিনি শখের বশে গোলাপ ফুল দিয়ে একটি নৌকা বানাচ্ছেন। জানতে চাইলে বলেন, ‘পাঁচ হাজার ফুল দিয়ে পুরো নৌকাটি তৈরি করছি। এতে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। তবু সবাই দেখছে, আনন্দ পাচ্ছে এতেই আমি খুশি।’

প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত ফুল মেলার চেয়ে এবারের মেলায় বেশি সাড়া পাচ্ছেন জানিয়ে আলতাফ মোল্লা বলেন, তবে ফুল মেলার জন্য এ সময়টা উপযোগী নয়। তিনি বলেন, ‘গরমে প্রচুর ফুল নষ্ট হয় বলে আমাদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। জানুয়ারি মাসে ফুল মেলা হলে সবার জন্য ভালো হয়।’

তার পাশের স্টলের সামনে দেখা গেছে ফুল দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে একটি ঘোড়ার গাড়ি। এর পাশে একটি পালকি সাজানো হয়েছে গাঁধা ফুল দিয়ে। সেটি যে কাটের পালকি তা বোঝার উপায় নেই। এই ফুলের পালকিতে চড়ে অনেকে নানা ঢঙে ছবি তুলছেন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানিয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এখন আর পালকি দেখা যায় না। এখানে এসে ফুল দিয়ে সাজানো পালকি দেখে ছবি তোলার আগ্রহ থামাতে পারিনি।’

বিদেশি ফুল বলে পরিচিত জারবেরা ফুল যে দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে সে সম্পর্কে দর্শনার্থীদের বলছিলেন মফিজুল ইসলাম মোহন। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে কীভাবে ফুল চাষ করা যায় সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছে সবাই। আমরা তাদের সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি। অথচ অনেক বিক্রেতা জারবেরা বিদেশি ফুল বলে বেশি দামি বিক্রি করে।’

একটি স্টলে দেখা গেছে ফুলের তৈরি স্টেজে সেজেগুজে বসে আছেন একজন মডেল। হঠাৎ দেখে মনে হবে নতুন বউ বিয়ের মঞ্চে। কাছে গিয়ে আয়োজকের কাছে জানতে চাইলে রেড বিউটি সেলুনের এমডি আফরোজা পারভিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কোন ফুলে কেমন লাগে তা অনেকে জানেন না। আমরা এখানে প্রাকটিক্যালি দেখাচ্ছি। দর্শনার্থীরা দেখার সুযোগ পাচ্ছে। টিপসও নিয়ে যাচ্ছে।’

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির (বিএফএস) সভাপতি মো. আব্দুর রহিম মেলা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে ঢাকাটাইমসকে বলেন, গত বছর সারা পাওয়ায় এবার বড় পরিসরে মেলা হচ্ছে। তবে নানা কারণে আমরা শীত থাকতে মেলার আয়োজন করতে পারিনি। তবে সামনের দিনে মেলার সময়টি বিবেচনায় থাকবে।’

ফুল উৎপাদক, ব্যবসায়ী (পাইকারি ও খুচরা), ফুল খাত সংশ্লিষ্ট সংগঠন, সাজসজ্জা বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের (ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট) মোট ১৪টি প্যাভিলিয়ন ও ৩৩টি স্টল আছে মেলায়।

ইনোভেশন অ্যান্ড ইনকিউভেশন সেন্টার ফর এন্টারপ্রাইজেসের (আইআইসিই) উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ মেলায় সহযোগিতা করে ইউএসএআইডি, বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি (বিএফএস), শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি (বিপিএস) ও দেশিফুল ডটকম।

(ঢাকাটাইমস/১এপ্রিল/বিইউ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :