পানির সঙ্গে যুদ্ধ করছে শনির হাওরবাসী

আমিনুল ইসলাম, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ)
 | প্রকাশিত : ১০ এপ্রিল ২০১৭, ২০:৪০

‘সুনামগঞ্জ জেলার একমাত্র শনির হাওর পানির সাথে যুদ্ধ করে এখনো আল্লাহর রহমতে টিকে রয়েছে, আপনারা যে যে অবস্থানে আছেন- তাড়াতাড়ি উরা-কুদাল লইয়্যা শনির হাওরের বান্দে যান।’

এভাবেই তাহিরপুর বাজার ট্রলার ঘাট থেকে মাইকিং করে বোঝাই করা নৌকায় হাওরের বাঁধে যাচ্ছেন শ্রমিক-জনতা।

সোমবার সকালে মাইকিং করার সময় বৌলাই নদীর পাড়ে বসে ভাটি তাহিরপুর গ্রামের কৃষক লিবাস মাতব্বর এভাবেই বলছিলেন, ‘উবে তলইয়া যায় আওর পানির সাথে আর কয়দিন যুদ্ধ করা যায়। আওরের আপর নীচা আপরটা উঁচা কইরা দেখি আর কয়ডা দিন আওরটা রাখন টিকাইয়া নাখন যায়।’

শনি হাওরের বগিয়ানী স্লুইস গেটের পূর্ব পাশে বেড়ি বাঁধ উঁচুকরণের কাজে ব্যস্ত ভাটি তাহিরপুর গ্রামের একদল কৃষক তাদের মধ্যে নজির মিয়া এক নিঃশ্বাসে এ কথাগুলো বলছিলেন।

বাঁধের আশপাশে মাটি না থাকায় অনেকটা দূর থেকে হাঁটু জল ভেঙে বস্তায় করে মাটি এনে ফেলছে বেড়িবাঁধে।

সোমবার শনির হাওরে কমপক্ষে পাঁচ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধের নিচু স্থানজুড়ে ও আটটি ক্লোজার বাঁধে কাজ করেন তিন উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের ৩ সহস্রাধিক কৃষক-জনতা।

ইতোমধ্যে গত ১৫ দিনের ব্যবধানে অতি বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে তলিয়ে যায় সুনামগঞ্জ জেলার সবকটি বোরো ফসলি হাওর। কৃষকের রাত-দিন পরিশ্রম ও একনিষ্ঠভাবে প্রতিদিন হাজারো মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধে কাজ করার জন্য টিকে থাকে জেলার একমাত্র শনির হাওর।

এ হাওরে তিন উপজেলার কৃষকরা জমি চাষাবাদ করেন। শনি হাওরে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষাবাদ করা হয়। তাই এ বৃহৎ হাওরটির বোরো ফসল টিকিয়ে রাখতে হাজারো মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে যাচ্ছেন গত ১৫ দিন ধরে।

জামালগঞ্জ উপজেলা বেহলী ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের কৃষক আব্দুল বাকির বলেন, এখন আর কৃষকদের মনে নাই কোনটা পিআইসির কাজ আর কোনটা ঠিকাদারের কাজ। হাওরের ফসল রক্ষা করতে হবে, তাই দিনরাত বাঁধে কাজ করছি।

বালিজুরী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী আব্দুজ জহুর বলেন, আনোয়ারপুর বাজার সংলগ্ন রক্তি নদীতে বালি, পাথর নৌকাতে লোড-আনলোড হয়, শনির হাওরের বেড়ি বাঁধ উঁচু করে ফসল রক্ষার স্বার্থে আমরা আজ নদী বন্ধ করে দিয়েছি। হাওরের প্রয়োজনে আরও কদিন বন্ধ রাখা হবে।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, শুধুমাত্র কৃষকের স্বেচ্ছাশ্রমের কাজের ফলেই শনির হাওরটি টিকে আছে। শনি হাওর রক্ষায় কৃষকদের পাশে থেকে আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি।

সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, শনির হাওর পাড়ের সকল নেতাকর্মীকে আমি রবিবার রাতে মোবাইল ফোনে অনুরোধ করেছি- তারা যেন সোমবার সারাদিন শনির হাওরের বাঁধে গিয়ে কাজ করে।

(ঢাকাটাইমস/১০এপ্রিল/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :