আল্লাহকে খুশি করতে রাব্বির বিরুদ্ধে মাঠে নামছেন শামীম ওসমান
নারায়ণগঞ্জে নাগরিক সমাজের নেতা রফিউর রাব্বী ধর্ম অবমাননা করেছেন এমন অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। তিনি বলেন, প্রশাসন যদি রাব্বীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আল্লাহকে খুশি করতেই মাঠে নামবেন তিনি।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর নগরীর ডিআইটি জামে মসজিদের সামনে রাস্তার উপর মঞ্চ বানিয়ে ‘নারায়ণগঞ্জের সবস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসলামান’দের ব্যানারে এক সমাবেশে এ কথা বলেন শামীম ওসমান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের স্থানীয় নেতারাও।
সমাবেশে অংশ নেয়া নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, রফিউর রাব্বী সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহির রহমানের রাহিম তুলে নেয়ার পক্ষে বক্তব্য দিয়ে ধর্ম অবমাননা করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশের সংবিধানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে এক সাংস্কৃতিক সংগঠনের অনুষ্ঠানে রাব্বী বলেন, ‘যদি বাংলার মানুষ জানতো সংবিধান বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দিয়ে শুরু হত, দেশ হবে সাম্প্রদায়িকতার দেশ, তাহলে ৩০ লাখ শহীদ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতো না’। এই বক্তব্যের পর হেফাজতের এক নেতা মামলা করেছেন রাব্বীর বিরুদ্ধে। আর এরপর থেকে হেফাজতের নেতাদেরকে নিয়ে রাব্বীর বিরুদ্ধে নানা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন শামীম ওসমান।
শুক্রবারের সমাবেশে শামীম ওসমান বলেন, ‘বিসমিল্লাহ নিয়ে কথা বললে আলেম ওলামাদের গায়ে যেমন লাগে, তেমন আমার গায়েও লাগে।’ তিনি বলেন, ‘আলেম ওলামারা আমাকে যে অডিও, ভিডিও রেকর্ড শুনিয়েছেন, তাতে রফিউর রাব্বির মুখ থেকে যে কথা বেরিয়েছে তা সুস্পষ্ট ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত।’
শামীম ওসমান আলেম ওলামাদের ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আদালত যে সময় বেঁধে দিয়েছে সেই সময়ের মধ্যে যদি গাফিলতি প্রমাণ হয় তবে আপনাদের মাঠে নামার আগে আমি মাঠে নামবো আল্লাহকে খুশি করার জন্য। ধর্মকে যারা আঘাত করে তাদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না।’
হেফাজতে ইসলাম নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক মাওলানা আব্দুল আউয়ালের সভাপতিত্বে সমাবেশ বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সামিউল্লাহ মিলন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও মহানগর বিএনপি সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, রাব্বির বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী ও হেফাজতের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সমন্বয়ক ফেরদাউসুর রহমান প্রমুখ।
মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মোহাম্মদ বাদল, জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আবুল জাহেরও।
গত ১১ এপ্রিল গণভবনে কওমি মাদ্রাসার শীর্ষ আলেমদেও সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের কথা উল্লেখ কওে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমার নেত্রী শেখ হাসিনা আলেম ওলামাদের নিয়ে বসলে ওদের গায়ে জ্বালা ধরে যায়। মনে হয় তাদের গায়ে বিচ্ছু লেগেছে। প্রধানমন্ত্রী আলেম ওলামাদের সম্মান দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামিক ফাইন্ডেশন গঠন আলেমদের সম্মান করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের ভেতরেও কিছু আছে। আমার নেত্রী টান দিয়ে আনে বলে মন্ত্রী ফন্ত্রী হয়। নেত্রী ছেড়ে দিলে এলাকায় গিয়ে মেম্বার পদেও পাস করতে পারবে না।’
২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকায় তা-বের কথা উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, ‘হেফাজতের নেতারা সেদিন গণ্ডগোল করে নাই। তাদের সমাবেশে ভেতরে জামায়াত ঢুকে গণ্ডগোল বাঁধিয়েছে। আর মামলা খেয়েছে হেফাজতে ইসলামের নেতারা।’
শামীম ওসমান বলেন, ‘জামায়াত মওদুদীবাদী আর্দশে বিশ্বাস করে। ... এখন যদি জামায়াত বা মওদুুদীবাদের আদর্শের কেউ কোনো মন্দির বা গির্জায় হামলা করে আমি যদি খবর পাই সেখানে গিয়ে বুক উঁচু করে দাঁড়াব। কারণ ইসলাম শান্তির ধর্ম। কোনো ধর্মকে আঘাত দেয়া যাবে না। কারণ, আল্লাহ ও আল্লাহর রসুল বলেছেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। কোনো ধর্ম পালনে আঘাত দেয়া যাবে না।’
নারায়ণগঞ্জ হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মাওলানা আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘এই দেশে নাস্তিকেরা নতুন করে মাথাচাড়া দেয় নাই। তারা মাঝে মধ্যে দুই একটা নাস্তিকবাদী কথাবার্তা বলে। তার কথায় বিসমিল্লাহর কিছু আসে যায় না।’ তিনি বলেন, ‘রফিউর রাব্বি তুমি ময়লা আবর্জনার আঁস্তাকুড়ে পড়ে থাক, বিসমিল্লাহর কোনো ক্ষতি হবে না।’ তাহলে কেন এই প্রতিবাদ, তারও ব্যাখ্যা দেন হেফাজত নেতা। তিনি বলেন, ‘আমরা এই কথার প্রতিবাদ জানালাম যাতে আগামীতে এই কথা বলার সাহস কোনো নাস্তিক যাতে না পায়।’
২০১৩ সালের ৪ মে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসগড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে দুই পুলিশ সদস্য ও দুই বিজিবি সদস্য নিহত হন। ওই হত্যা মামলার আসামি মাওলানা আব্দুল আউয়াল ও রাফিউর রাব্বির মামলার বাদী মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান। বর্তমানে তারা জামিনে আছেন।
ঢাকাটাইমস/২১এপ্রিল/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি
মন্তব্য করুন