অবাধ তথ্য প্রবাহ ও তথ্য মন্ত্রণালয়

মীর আকরাম উদ্দীন আহম্মদ
 | প্রকাশিত : ০২ মে ২০১৭, ১৭:৩৮

দেশের উন্নয়নকে টেকসই, গতিশীল ও অংশগ্রহণমূলক করতে অবাধ তথ্য প্রবাহের কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান সরকার অনুসৃত এ অন্যতম মূলমন্ত্র বাস্তবায়নে কাজ করছে তথ্য মন্ত্রণালয়। উন্নয়নে জনগণের অংশগ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় তথ্য পাবার অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশের গণমাধ্যমকে শক্তিশালী করার দৃঢ় প্রত্যয় সেকাজেরই অংশ। তথ্য মন্ত্রণালয়ের ১৪টি সংস্থার সহায়তায় দেশে তথ্যের অবাধ প্রবাহের ফলে জনগণ একদিকে উন্নয়নমূলক কাজের বিষয়ে আরও সচেতন হচ্ছে, অন্যদিকে জনগণের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি সম্পর্কে সরকারও অবহিত হচ্ছে। এ দু’য়ের কার্যকর সমন্বয়ে এগিয়ে চলেছে দৃপ্ত বাংলাদেশ।

‘ক্রান্তিকালে সমালোচকের দৃষ্টি: শান্তিপূর্ণ, ন্যায়নিষ্ঠ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের ভূমিকা’ (Critical Minds for Critical Times: Media’s role in advancing peaceful, just and inclusive societies)- প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে প্রতিবছরের মতো এবারও সারাবিশ্বে ৩ মে পালিত হচ্ছে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস বা World Press Freedom Day। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় গণমাধ্যমের জোরালো ভূমিকাকে বর্তমান সরকার সবসময় বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে এসেছে। তারই অংশ হিসেবে সরকারের ধারাবাহিক দুই মেয়াদের বিগত আট বছরে তথ্য মন্ত্রণালয়ের বাস্তবসম্মত কার্যক্রম দেশের উন্নয়নে গণমাধ্যমের অপরিহার্যতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। অর্থাৎ টেকসই উন্নয়নে গণমাধ্যমের অংশগ্রহণ যে আবশ্যক- তথ্য মন্ত্রণালয়ের তৎপরতায় এটি আজ দৃঢ়প্রতিষ্ঠ।

এক নজরে দেখা যায়, গণমাধ্যমের উন্নয়নে এ সময়ে নতুন ১৬৪৭টি পত্রিকা নিবন্ধিত হয়েছে; বেসরকারিখাতে নুতন ৩৬টি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদনসহ ২৪টি এফএম বেতার এবং ৩২টি কমিউনিটি রেডিওর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈ-মাসিক ও ষান্মাষিক মিলে মোট পত্রিকার সংখ্যা ২৮৫৫টি; বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি ওয়ার্ল্ড, সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্র নিয়ে সরকারি চারটি ও অনুমোদনপ্রাপ্ত ৪৪টি বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলের মধ্যে ২৬টি সম্প্রচাররত; পাশাপাশি সম্প্রচারিত হচ্ছে ২১টি এফএম বেতার ও ১৭টি কমিউনিটি রেডিও। সংবাদপত্রকে ঘোষণা করা হয়েছে শিল্প হিসেবে।

চলচ্চিত্র খাতের উন্নয়নে চলচ্চিত্রকে ‘শিল্প’ ঘোষণাসহ ৩ এপ্রিলকে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত এখাতকে দিয়েছে নতুন প্রেরণা। এ সময়ে ৫২টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও ২৫টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র সরকারি অনুদান পেয়েছে। শুধু তাই নয়, সরকারি অনুদানে ছবি নির্মাণের ক্ষেত্রে অনুদানের পরিমাণ ৩৫ লাখ টাকা থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে উন্নীত হয়েছে ৬০ লাখ টাকায়। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি অর্থবছরে ন্যূনতম একটি করে শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্যও সরকারি অনুদান দেয়া হচ্ছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে যোগ হয়েছে পোশাক ও সাজসজ্জা নামক দুটি নতুন ক্ষেত্র, বৃদ্ধি পেয়েছে পুরস্কারের মূল্যমান।

দেশের মানুষের বৈষম্যমুক্ত সমৃদ্ধির পথনকশা হিসেবে ‘শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ'কে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সব সংস্থার মাধ্যমে তৃণমূলে পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে দেশব্যাপী। একটি বাড়ি একটি খামার, ডিজিটাল বাংলাদেশ, নারীর ক্ষমতায়ন, সবার জন্য বিদ্যুৎ, কমিউনিটি ক্লিনিক ও শিশু বিকাশ (মানসিক স্বাস্থ্য), আশ্রয়ণ প্রকল্প, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি, শিক্ষা সহায়তা কার্যক্রম, পরিবেশ সুরক্ষা ও বিনিয়োগ বিকাশ শীর্ষক প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে একযোগে প্রকাশনা, প্রচার, সম্প্রচার ও কর্মশালা আয়োজন করে চলেছে তথ্য মন্ত্রণালয় ও এর সবকটি সংস্থা।

গণমাধ্যম ও গণসংযোগ খাতের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও সংস্কারে নেয়া হয়েছে ২২টি নতুন প্রকল্প। এসব প্রকল্পের মধ্যে পাঁচটি বিভাগীয় শহরে বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) পূর্ণাঙ্গ টিভি কেন্দ্র স্থাপনসহ দেশব্যাপী বিটিভির ডিজিটাল টেরিস্ট্রিয়াল সম্প্রচার প্রবর্তন ও সেন্ট্রাল সিস্টেম অটোমেশন, বাংলাদেশ বেতারের দেশব্যাপী এফএম সম্প্রচার সম্প্রসারণ এবং প্রতিটি জেলায় তথ্য অফিসগুলোর আধুনিকায়নসহ জেলা তথ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ অন্যতম।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাজকে আরও গতিশীল করা, আইনের আওতায় আনা এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের দায়বদ্ধতা সৃষ্টির লক্ষ্যে গত আট বছরে ১৫টি আইন, বিধি ও নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এর আওতায় গঠিত তথ্য কমিশন ইতোমধ্যে ২০ হাজারেরও বেশি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ৬৪টি জেলায় জনঅবহিতিকরণ সভার মাধ্যমে এ আইন সম্পর্কে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট আইন ২০১৩ এর আওতায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (বিসিটিআই) এবং বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আইন ২০১৪ এর আওতায় স্থাপিত সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট দেশের গণমাধ্যমের উৎকর্ষ ও কল্যাণে শুধু নজিরবিহীন দৃষ্টান্তই তৈরি করেনি, আগামী দিনগুলোতে গণমাধ্যমকে সমৃদ্ধ করতে দিয়েছে প্রাতিষ্ঠানিকতার স্থায়ীরূপ।

প্রাতিষ্ঠানিক সুফল ইতোমধ্যেই পেতে শুরু করেছে গণমাধ্যম জগত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট উদ্বোধন করেন। তখন থেকেই এ ইনস্টিটিউট চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণে দক্ষ ও যোগ্য নির্মাতা, কলাকুশলী সৃষ্টি ও গবেষণার উদ্দেশ্যে নিয়মিত সাফল্যের সঙ্গে প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে আসছে।

সাংবাদিকদের কল্যাণে যুগান্তকারী ‘বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আইন ২০১৪’এর আওতায় গঠিত ১৩ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ড বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটে (পিআইবি) স্থাপিত অস্থায়ী কার্যালয়ে ট্রাস্টের কাজ শুরু করেছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ট্রাস্টের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন পিআইবির মহাপরিচালক। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে এক কোটি চল্লিশ লাখ টাকা বরাদ্দসহ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টে সিডমানি হিসেবে পাঁচ কোটি টাকা জমা আছে। নবগঠিত এ ট্রাস্ট এবং সাংবাদিক সহায়তা ভাতা/অনুদান নীতিমালা ২০১২ এর আওতায় ২০১১ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত পাঁচ কোটি ১০ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছেন ৮১৯ জন অনুদানভোগী।

সার্বিকভাবে গত আট বছরে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সুবিশাল কর্মযজ্ঞে দেশে গণমাধ্যমের যে অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটেছে এবং অবাধ তথ্য প্রবাহের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে, তা দেশের মানুষকে যেমন অধিকার-সচেতন করেছে, তেমনি রাষ্ট্রের পরিচালনা ব্যবস্থার সঙ্গে ঘটিয়েছে জনমানুষের অনন্য সংযোগ। এই অভিযাত্রা অব্যাহত থাকবে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে- এবারের বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।

লেখক: তথ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :