যে কারণে সহায়ক সরকারের দাবি ছাড়ল বিএনপি

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৬ নভেম্বর ২০১৭, ০৭:৫৫

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে নেমে সফল হতে পারেনি বিএনপি। পরে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবিতে গত এক বছর ধরেই সোচ্চার ছিলের দলের নেতারা। কিন্তু এই সরকার কী ধরনের হবে সেটাই চূড়ান্ত করতে পারেনি দলটি। তবু প্রচার ছিল, দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার যুক্তরাজ্য সফরে তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনায় বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। কিন্তু হয়নি। অবশেষে এই দাবি ছেড়েই দিয়েছে বিএনপি।

বিএনপির নেতারা বলছেন, কেবল সহায়ক সরকার কেমন হবে সেই ধারণার অভাব নয়, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণে যেসব বক্তব্য এসেছে তাতে আবারও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তোলার যৌক্তিকতা এসেছে। এটাও বিএনপির সিদ্ধান্ত বদলের কারণ।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। পরে সহিংস আন্দোলনে নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা করে তারা। কিন্তু আন্দোলনে ব্যর্থতার পর পিছু হটে দলটি। ওই নির্বাচনের ঠিক এক বছর পর ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি সরকার পতনের ‘চূড়ান্ত’ আন্দোলনে নামে বিএনপি।

কিন্তু ওই দিন থেকে ডাকা লাগাতার অবরোধ ও পরে ডাকা হরতাল অকার্যকর হয়ে পড়ে। এরপর বিএনপিতে আন্দোলন স্থগিত করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিয়ে আসতে ভূমিকা রাখেন দল সমর্থিত বুদ্ধিজীবীরা। বিএনপির সূত্র বলছে, তাদের পরামর্শেই খালেদা জিয়া নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বদলে সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রস্তাব দেয়ার কথা বলেছিলেন।

২০১৬ সালের ১৮ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব তুল ধরতে করা সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া সর্বপ্রথম নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করতে সহায়ক সরকারের কথা তুলেন। পরে সময় মতো এই সরকারের রূপরেখা দেয়ার কথাও বলেন তিনি।

এই সরকার কেমন হবে সেই প্রস্তাব না এলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে বিরোধের নতুন বিষয় হয়ে দাঁড়ায় বিষয়টি। বিরোধী দলটি বলতে থাকে, নির্বাচন হতে হবে সহায়ক সরকারের অধীনে, আর সরকারি দলের নেতারা বলতে থাকেন, এই দাবি মানা হবে না। নির্বাচন হবে ২০১৪ সালের মতোই দলীয় সরকারের অধীনেই।

এর মধ্যে বিএনপি নেতারা বারবার বলতে থাকেন, শিগগির দেয়া হবে এই সরকারের রূপরেখা। ১৫ জুলাই খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্যে যাওয়ার আগে দলের নেতারা জানান, তাদের নেত্রী দেশে ফিরলেই এই রূপরেখা প্রকাশ করবেন তারা। কিন্তু গত ১৮ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন দেশে ফেরার পরও এ নিয়ে কিছুই জানায়নি দলটি। বরং সম্প্রতি বিএনপির দুইজন শীর্ষ নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং মওদুদ আহমদ ইঙ্গিত দেন তারা আবার তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে ফিরে যাচ্ছেন।

এক বছর ধরে বারবার দাবি জানিয়ে এলেও বিএনপির এই সিদ্ধান্ত বদলের কারণ কী? নেতারা জানান, এই সরকার কী ধরনের হবে সে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে না পারাই এর কারণ।

বিএনপি নেতারা জানান, সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহর নেতৃত্বে কয়েকজন এই সরকারের রূপরেখা তৈরির কাজও শুরু করেন। কিন্তু সেই কাজ আর আগায়নি তেমন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য ঢাকাটাইমসকে বলেন,‘আমরা তো মূর্খ মানুষ। আমাদের আশেপাশে অনেক জ্ঞানীগুণী আছেন। তারাই ম্যাডামকে এই ধারণা দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে নিজেরাই তাদের ধারণা বোঝাতে পারেননি।’

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকাটাইমসকে বলেন,‘একটা মানুষকে অনেকে অনেকে নামে ডাকতে পারে। যেকোনো নামেই হোক আমরা নির্বাচন চাই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে।’

সহায়ক থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে আসার কারণ কী– এমন প্রশ্নে গয়েশ্বর বলেন,‘সুপ্রিম কোর্টের ষোড়শ সংশোধনীর পূর্ণাঙ্গ রায়ে কিন্তু দুই টার্ম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে বলে উল্লেখ আছে। সুতরাং এই পর্যবেক্ষণ কার্যকর করার পথ কিন্তু খোলা আছে। তাই সেটা নিয়েই তো আমাদের কথা বলা উচিত।’

হঠাৎ কেন তাহলে সহায়ক সরকারের কথা এলো- জানতে চাইলে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এটা আসলে কার কখন মাথা থেকে আসছে বলা মুশকিল। তবে রাজনীতিতে নানা সময় নানা বিষয় আসবে যাবে এটা কোনো ম্যাটার না।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন,‘সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর এই সহায়ক সরকার দাবি থাকার দরকার নেই। এখন আমাদের প্রথম দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারই সহায়ক সরকারের কাজ করবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন,‘আমাদের মূল টার্গেট হলো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। সুতরাং সেটার নাম তত্ত্বাবধায়ক হবে না সহায়ক হবে এটা কোনো বিষয় না। সহায়ক সরকার নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যেও কিছুটা বিভ্রান্তি আসতে পারে। কারণ কাজ এক হলেও নাম যেহেতু ভিন্ন।’

সহায়ক সরকার না হলে?

গত ২৪ অক্টোবর খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নানান বিষয়ের সঙ্গে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য সহায়ক সরকার নয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের কথা বলেন। স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য তার কথায় সায় দেন। খালেদা জিয়াও তাতে একমত পোষণ করেন।

দলীয় সূত্র বলছে বৈঠকে ওই নেতা আগেভাগেই সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বলেন, ‘রূপরেখা দেয়ার পর সরকার যদি না মানে তাহলে কী করার আছে? দাবি মানতে আবার রাজপথে যেতে হবে। তাই সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। এসব না করে এখন থেকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আমাদের সোচ্চার হওয়া উচিত। ’

এ ছাড়া সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা) বাতিলের রায় নিয়ে রিভিউ করা যায় কি না,বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ১৫৪ সংসদ সদস্যের বৈধতা নিয়ে রিট বা আদালতে যাওয়া যায় কি না সেসব বিষয় নিয়েও স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় একজন ভাইস চেয়ারম্যান ও সিনিয়র আইনজীবী ঢাকাটাইমসকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর সহায়ক সরকারের বিষয়ে আমাদের অবস্থান পাল্টানো উচিত। কারণ ওই বাতিলের রায়ে আরও দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে বলে পর্যবেক্ষণ ছিল। তাই একাদশ জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়ার সুযোগ রয়েছে।’

এই আইনজীবী নেতা মনে করেন, চাপ দেয়া গেলে সংবিধান সংশোধন করে প্রয়োজনে আরও এক মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে সরকার বাধ্য হবে।

(ঢাকাটাইমস/০৬নভেম্বর/বিইউ/ডব্লিউবি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :