কিশোরগঞ্জে সোনালী ব্যাংকে কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগ

আমিনুল হক সাদী, কিশোরগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ০৬ নভেম্বর ২০১৭, ১৭:১৮

কিশোরগঞ্জে সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখায় ভুয়া হিসাব খোলে সাবেক ম্যানেজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতারণা করে এখন পর্যন্ত গ্রাহকদের ৯০ লাখ তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। চলছে তদন্তও। অভিযোগ প্রমাণিত হলে হারাতে পারেন চাকরি।

সোমবার দুপুরে ব্যাংকে গিয়ে দেখা গেছে, অভিযুক্ত ম্যানেজারের বিরুদ্ধে বর্তমান ম্যানেজারের কাছে কিশোরগঞ্জ পৌরসভার কর্মচারী মো. জামাল উদ্দিন একটি অভিযোগ দিয়েছেন। লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে গ্রাচুইটি হিসাবের স্থিতি জামানত রেখে একটি ব্যক্তিগত ঋণের আবেদন করি। ইতোমধ্যে ব্যাংকের ম্যানেজার বদলি ও ব্যাংক সম্পর্কিত বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর ঋণের ব্যাপারে আর যোগাযোগ করিনি। কিন্ত গত কয়েক দিন আগে ব্যাংক থেকে আমার নামে একটি ভুয়া সঞ্চয়ী হিসাব খুলে দুই লাখ টাকা ঋণ উত্তোলন করা হয়। আমি কোনো সঞ্চয় খুলিনি এবং কোনো টাকাও উত্তোলন করিনি।

এই শাখায় এমন অভিযোগ প্রতিদিনই আসছে বলে জানা গেছে। জেলা শহরের নগুয়া বটতলা এলাকার নানীর হোটেলের নানা সিরাজুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, গত আগস্ট মাসে আমি একটি অ্যাকাউন্ট খুলি এবং জমা স্লিপের মাধ্যমে এক লাখ এক হাজার টাকা জমা দিই। পরবর্তী সময়ে ৫ অক্টোবর আরও ৩০ হাজার টাকা জমা দিই। জমাকৃত টাকা থেকে ১০ অক্টোবর ১০ হাজার উত্তোলন করি। পরে আরও টাকা উত্তোলন করতে গেলে বলে আমার অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। আমি ব্যাংক স্টেটম্যান গ্রহণ করে দেখতে পাই আমার জমাকৃত ৩১ আগস্টের এক লাখ এক হাজার টাকাই জমা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আমি চিন্তিত হয়ে পড়েছি।

এই ব্যবসায়ী বলেন, আমরা সাধারণ মানুষ। চোরের ভয়ে ঘরে টাকা রাখতে পারি না। তাই ব্যাংকে টাকা আমানত হিসেবে জমা রাখলাম। এখন দেখি ব্যাংকেও নিরাপদ নেই। সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়।

সিরাজুল বলেন, ওই ম্যানেজার আমার হোটেলে খেতে আসতেন। আমাকে ফুসলিয়ে ব্যাংকে গ্রাহক বানান। তিনি এভাবে আমানতের খেয়ানত করবেন বিষয়টি ভাবতেই পারিনি।

গ্রাহকদের অভিযোগে জানা গেছে, এসএমই লোনের অসংখ্য গ্রাহকের টাকা হিসাব থেকে তুলে নিয়েছেন ওই শাখার সাবেক ম্যানেজার সাইফুদ্দিন সবুজ। বিষয়টি প্রকাশ হওয়ায় পালিয়ে গেছেন তিনি। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। অভিযোগ তদন্ত করছে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের উচ্চপর্যায়ের একটি অডিট টিম।

জেলা শহরের মোল্লাপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী আখতার হোসেনের নামে সোনালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয় থেকে ১০ লাখ টাকার এসএমই লোন মঞ্জুর হয়। লোন হওয়ার আগে ব্যাংকের ম্যানেজার সাইফুদ্দিন সবুজ ওই ব্যবসায়ীকে জানান, লোন পেতে হলে ব্যাংক হিসাবে লেনদেন দেখাতে হবে। এ জন্য আখতার হোসেনের কাছ থেকে স্বাক্ষর করা তিনটি চেকের পাতা রাখেন। পরে আখতার হোসেন খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তার হিসাব থেকে ১০ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন তিনি।

এভাবে অসংখ্য এসএমই গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করে জালিয়াতির মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন ব্যাংকের ম্যানেজার। লোন ছাড়াও ব্যাংকের জমার রশিদ দিয়েও টাকা জমা না করে আত্মসাৎ করা হয় অনেক গ্রাহকের।

সোনালী ব্যাংকের বর্তমান ম্যানেজার মাহবুবুল ইসলাম খান ঢাকাটাইমসকে জানান, প্রতিদিন নতুন নতুন গ্রাহকরা তার কাছে অভিযোগ নিয়ে আসছেন। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহে কর্মরত রয়েছেন। বিষয়টি অডিট টিম তদন্ত করছে। অডিট এবং তদন্তের পর জানা যাবে গ্রাহকদের কত টাকা খোয়া গেছে। তবে এ পর্যন্ত ৯০ লাখ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি চাকরি থেকে বরখাস্ত হবেন এবং যাবতীয় সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন বলে জানান ম্যানেজার।

(ঢাকাটাইমস/০৬নভেম্বর/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :