খেজুর রসের পাটালি গুড় তৈরিতে ব্যস্ত গাছিরা

কোরবান আলী, ঝিনাইদহ
 | প্রকাশিত : ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৯:৫১

শীতের শুরুতে ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন গ্রামের গাছিরা এখন খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিভিন্ন গ্রামে ইতিমধ্যে গাছ তোলার কাজ শেষ হয়েছে। নলেন গুড় ও পাটালি বাজারে উঠতে শুরু করেছে। আগাম গুড় ও পাটালিতে দাম ভালো পাওয়া যায় বলে এলাকায় পাটালি গুড় তৈরির ধুম পড়ে গেছে।

ঝিনাইদহ সদর, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, হরিণাকুন্ডু ও শৈলকুপা উপজেলায় প্রচুরসংখ্যক খেজুর গাছ লক্ষণীয়। এসব এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে, জমির আইলে, রাস্তার পাশে, পতিত জমিতে সারি সারি খেজুর গাছ দেখা যায়। বর্তমানে এসব এলাকায় বাণিজ্যিকভাবেও খেজুর বাগান গড়ে তুলছেন অনেকে।

শীতের সাথে খেজুর রসের রয়েছে এক অপূর্ব যোগাযোগ। শীত যত বাড়তে থাকে খেঁজুর রসের মিষ্টতাও তত বাড়ে। এ সময় গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতিক মধুবৃক্ষ থেকে সু-মধুর রস বের করে গ্রামের ঘরে ঘরে পুরোদমে শুরু হয় পিঠা, পায়েস ও গুড় পাটালী তৈরির ধুম। খেজুরের রস দিয়ে তৈরি করা নলের গুড়, ঝোলা গুড়, দানা গুড় ও পাটালি গুড়ের মিষ্টি গন্ধেই যেন অর্ধভোজন হয়ে যায়। খেজুর রসের পায়েস, রসে ভেজানো পিঠাসহ বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারেরতো জুড়িই নেই।

সদর উপজেলার সাগান্না গ্রামের গাছি হায়দার আলী ঢাকাটাইমসকে জানান, তার প্রায় দেড়শ খেজুর গাছ রয়েছে। শীত মৌসুমে এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় ও পাটালি তৈরি করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারীরা এসে এসব গুড় পাটালি কিনে নিয়ে যায়। দামও বেশ ভালো পাওয়া যায়। গত বছর তিনি ১০ কেজি ওজনের এক কলস গুড় ৭০০ থেকে হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এবছরও ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন তিনি।

কুতুবপুর গ্রামের গাছি আব্দুর রসিদ ঢাকাটাইমসকে জানান, এ বছর তিনি ৫০টি খেজুর গাছ কেটেছেন। এক সপ্তাহ পর থেকেই গাছ থেকে রস পাওয়া যাবে। গত বছর তিনি খেজুরের গুড় ও পাটালি বিক্রি করে প্রায় ৫৫ হাজার টাকা লাভ করেন। চলতি বছর আরও বেশি দামে গুড় বিক্রির আশা করছেন তিনি।

কোরাপাড়ার ওলিয়ার রহমান ঢাকাটাইমসকে জানান, গত বছর ১০ কেজি ওজনের এক কলস গুড় উৎপাদন করতে খরচ হয়েছিল ৪০০ টাকা। আর বিক্রি করেছেন ৭০০ টাকায়। তিনি জানান, জ্বালানিসহ সব ধরনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এবছর লাভের পরিমাণ কমে যেতে পারে। তবে দাম ভালো পাওয়া গেলে তা পুষিয়েও যাবে।

সরেজমিনে গিয়ে সদর উপজেলার রাজনগর, কাশিপুর, রামচন্দ্রপুরসহ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, ভোরে গাছিরা গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে বাড়িতে আনছেন। পরিবারের সবাই রস জালানো, কলস পরিষ্কার করাসহ নানা কাজে সহযোগিতা করছেন। আবার দুপুরেই গাছিরা দা, হাসুয়া, ঠুঙি, দড়ি ও মাটির কলস (ভাড়) নিয়ে ছুটে চলেছেন মাঠে।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ঝিনাইদহে প্রায় তিন লাখের মত খেজুর গাছ রয়েছে। এর মধ্যে সদরের ১৭টি ইউনিয়নেই রয়েছে ৫০ হাজারের বেশি গাছ। তবে সঠিকভাবে পরিচর্যা না করা ও এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ির কারণে খেজুর গাছ আজ বিলপ্তির পথে। ইটভাটা গুলোতে খেজুর গাছ পোড়ানো আইনত নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ভাটা মালিকরা নির্বিচারে খেজুর গাছ দিয়ে ইট পুড়িয়ে যাচ্ছে। ইট ভাটায় জ্বালানি হিসেবে খেজুর গাছ ব্যবহার করার কারণে বিভিন্ন এলাকা থেকে দ্রুত খেজুর গাছ ফুরিয়ে যাচ্ছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঝিনাইদহসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে কিছু কিছু এলাকায় এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণ খেজুর গাছ থাকলেও সঠিকভাবে তা পরিচর্যা না করা, নতুন করে গাছের চারা রোপণ না করা এবং গাছ কাটার পদ্ধতিগত ভুলের কারণে প্রতি বছর অসংখ্য খেজুর গাছ মারা যাচ্ছে। এছাড়া এক শ্রেণির অসাধু ইটভাটার ব্যবসায়ীরা জ্বালানি হিসেবে খেজুর গাছ ব্যবহার করার কারণে ক্রমেই কমে যাচ্ছে খেজুর গাছের সংখ্যা।

ঝিনাইদহ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সদস্য সচিব মো. মিজানুর রহমান ঢাকাটাইমসকে জানান, ইট ভাটা গুলোতে কাঠ পোড়ানোর কারণে সার্বিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সাথে এলাকা থেকে খেজুর গাছও উজাড় হচ্ছে। খেজুর গাছসহ সকল প্রকার বৃক্ষ নিধন বন্ধ এবং পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সবাইকে গাছ লাগানোর আহ্বান জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/০৭ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :