ফরিদপুরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ে ১০ মার্চ

মফিজুর রহমান শিপন, ফরিদপুর
 | প্রকাশিত : ১০ মার্চ ২০১৮, ১৩:১৮

আজ ১০ মার্চ। ফরিদপুরের মাটিতে এদিনেই প্রথম উত্তোলন করা হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে এদিন শহরের অম্বিকা ময়দানে আয়োজন করা হয়েছিল এক বিশাল ছাত্র গণজমায়েত। একপর্যায়ে তা পরিণত হয় বিশাল জনসমুদ্রে। মুক্তিকামী জনতা মৃত্যু ভয় উপেক্ষা করে এইদিন ফরিদপুরের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস ও ভবনে উড়িয়ে দেয় মানচিত্র খচিত লাল সবুজের পতাকা। ফরিদপুরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, মার্কেট ও লেকের নাম থেকে পশ্চিম পাকিস্তানিদের নাম মুছে দেয়ার ঘোষণাও দেয়া হয় এ সমাবেশ থেকেই।

তৎকালীন মুজিব বাহিনীর কমাণ্ডার শাহ মো. আবু জাফর জানান, ২৫ মার্চ গণহত্যার পর আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ৭১’র ১০ মার্চ ফরিদপুর থেকে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের ঘোষণা দেন তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ। ফরিদপুরের মাটি থেকে পাক বাহিনীকে সদল বলে চলে যাওয়ারও নির্দেশনা দেন তারা।

ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে ৭১’র ১ মার্চ তৎকালীন ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি কবিরুল আলম মাও, সাধারণ সম্পাদক ও রাজেন্দ্র কলেজ ছাত্রছাত্রী সংসদের ভিপি শাহ মো. আবু জাফর ও সালাহউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে গঠন করা হয় স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।

৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক মহাসমাবেশে বঙ্গবন্ধুর অগ্নিঝরা ভাষণের পর মুক্তির দামামা ছড়িয়ে পড়েছিল ফরিদপুরের জনপদেও। এর সূত্র ধরে ১০ মার্চ অম্বিকা ময়দানে ছাত্র গণজমায়েতের সিদ্ধান্ত হয়।

কবিরুল আলম মাও এর সভাপতিত্বে সেই সমাবেশে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বক্তব্য দেন ফরিদপুর থেকে নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট সামসুদ্দিন মোল্যা, ইমামউদ্দিন আহমেদ, অ্যাডভোকেট সৈয়দ হায়দার হোসেন, অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন, অ্যাডভোকেট গৌর চন্দ্র বালা, এসএম নুরুন্নবী, ফরিদপুর সদর মহকুমা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি নাসিরউদ্দিন আহমেদ খোকন, সাধারণ সম্পাদক পিযুষ বন্দোপাধ্যায়, আব্দুর রাজ্জাক রাজা, মিসবাউর রহমান মিরোজ, আতাউল হক, হামিদুল হক, নাজমুল হাসান নসরু, বাহালুল মজনু চুন্নু, এমএম শাহরিয়ার রুমি, শহিদুল ইসলাম নিরু, কবিরুল ইসলাম কাঞ্চন, মোজাফফর আলী আখন্দ, আশরাফুজ্জামান মজনু, আবুল ফয়েজ শাহ নেওয়াজ, সমীর বোস, হাফিজ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

ওই সমাবেশে বক্তাদের মুখে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর দেয়া নির্দেশনার প্রতিফলন ঘটেছিল। নেতৃবৃন্দ বীরদর্পে ঘোষণা দেন যে, ফরিদপুরের প্রশাসন আর পাকিস্তান সরকারের নির্দেশে চলবে না। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনাতেই প্রশাসনকে চলতে হবে। কেউ যদি বাংলার মানুষের স্বার্থবিরোধী কাজে লিপ্ত থাকে তবে তাকে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে বিচার করতে হবে। সমাবেশ থেকে শহরের প্রধান সড়ক জিন্না এভিনিউয়ের নাম বদলে মুজিব সড়ক, আজম মার্কেটের নাম বদলে তিতুমীর বাজার, কায়েদে আজম লাইব্রেরির নাম শের-এ-বাংলা পাঠাগার ও টেপাখোলা লেকের নাম বদলে সরোয়ার্দী সরোবার রাখার প্রস্তাব দিলে উপস্থিত জনতা মুহুর্মূহ করতালির মাধ্যমে এ প্রস্তাবনাকে স্বাগত জানান।

এরপর আসে ফরিদপুরের মাটিতে স্বাধীন বাংলার পতাকা প্রথমবারের মতো উত্তোলনের সেই মাহেন্দ্র ক্ষণ। তখন সারাদেশে বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলন চলছিল।

শাহ জাফর বলেন, সেইদিন ঘোষণা দেয়া হয় ফরিদপুরের মাটিতে কোথাও আর পাকিস্তানের পতাকা উড়বে না। স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়বে। গণজমায়েত শেষে গানফায়ার করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। পরে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে অম্বিকা ময়দানে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর মুক্তিকামী মানুষের দল ফরিদপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারের অফিসে গিয়ে দুই স্থানেই স্বাধীনতার পতাকা তুলে দেন।

ফরিদপুর শহরের অম্বিকা ময়দানে প্রথম পতাকা উত্তোলন দিবস পালন উপলক্ষে আজ শনিবার আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ১১টার সময় অম্বিকা ময়দানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন তৎকালীন মুজিব বাহিনীর কমাণ্ডার, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মো. আবু জাফর। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, জাতীয় চার নেতা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা।

পরে মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হাসান নসরুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লোকমানে হাসেন মৃধা, শাহ মো. আবু জাফর, কবিরুল আলম মাও, সালাউদ্দিন আহম্মেদ, এমএম শাহরিয়ার রুমি, আবুল ফয়েজ মো. শাহ নেওয়াজসহ তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ।

এসময় মুজিব বাহিনীর কমাণ্ডার শাহ মো. আবু জাফর তার বক্তব্যে বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে এ ধরনের আয়োজনের বিকল্প নেই। এসময় সঠিক ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মকে জানাতে সংবাদ কর্মীদের ভুমিকা অনস্বীকার্য বলে উলেøখ করেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১০মার্চ/প্রতিনিধি/ওআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :