তারাগঞ্জে ৭০ হাজার মানুষের ব্লাডগ্রুপের ডাটাবেজ

রফিকুল ইসলাম রফিক, রংপুর
 | প্রকাশিত : ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২০:০১

এক ঘণ্টায় ত্রিশ হাজার মানুষ আড়াই লাখ বৃক্ষরোপন করার নজির স্থাপন করার পর এবার স্কুল শিক্ষার্থীদের রক্তের গ্রুপ ‘ভার্চুয়াল ব্লাড ডাটা ব্যাংক’ নির্ণয় করে আরেকটি নতুন রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা প্রশসন। এ জন্য ৭০ হাজার মানুষের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করা ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে।

আলোকিত তারাগঞ্জ ডাবেজ’র আওতায় উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের এই রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করা হয়েছে।

এর আগে কখনোই বাংলাদেশে কিংবা বিশ্বে এক সাথে এত শিক্ষার্থীর রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করে ডাটাবেজ করে রাখা হয়নি বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। এই প্রথম দেশে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে তারাগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে রংপুর জেলা প্রশাসক এনামুল হাবীব প্রধান অতিথি থেকে এর উদ্বোধন করেন।

এসময় উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিলুফা সুলতানা, উপজেলা চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান লিটন, আওয়ামী লীগ সভাপতি আতিয়ার রহমান, স্থানীয়ই ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

‘নিজের রক্তের গ্রুপ জানি আমার গ্রুপের বন্ধুদের চিনি’ এমন স্লোগান আর হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে তারাগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে অবস্থান নেন উপজেলার ১৬৪টি স্কুলের শিক্ষার্থীরা। নিজ নিজ রক্তের গ্রুপ অনুযায়ী তারা লাইনে দাঁড়িয়ে যায়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিলুফা সুলতানা জানান, প্রতিটি স্কুলেই ‘ব্লাড ক্লাব’ খোলা হয়েছে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর ক্লাসভিত্তিক রক্তের গ্রুপ করে চার্ট করে দেয়া হয়েছে। যে শিক্ষার্থীর যে গ্রুপ, তারা একে অপরকে চিনে নিতে পারবে। প্রতি মাসের ১ম সপ্তাহে একটি করে সমাবেশ করা হয়। ওই সমাবেশে রক্তের গ্রুপ অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা লাইনে দাঁড়ায়। ‘একটি মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্যই এই আয়োজন’ জানিয়ে উদ্যোক্তা জিলুফা সুলতানা বলেন, এই সমাবেশ করার পেছনের কারণ হলো- সবাই জানবে এবং তার নিজ থেকেই কার সাথে তার রক্তের গ্রুপ মিলে যাবে, তা লিখে বা সংগ্রহ করে রাখবে। ধীরে ধীরে এই শিক্ষার্থী যখন বড় হবে, তখন নিজ থেকেই জানতে পারবে- তার রক্তের গ্রুপের সাথে কার রক্তের গ্রুপ মিল আছে। ভবিষ্যতে রক্তের প্রয়োজন হলেই তারা নিজ থেকে সংগ্রহ করতে পারবে।

সরেজমিনে কথা হয়েছে- অভিভাবক, স্কুলশিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সাথে। আব্দুর রহিম নামে এক অভিভাবক বলেন, গত মাসেই আমার ছেলের স্ত্রীর অপারেশনে রক্তের প্রয়োজন ছিল। হাসপাতালে গিয়ে দেখি চার্ট দেয়া। পরে ওই চার্ট অনুযায়ী খুব সহজেই রক্ত সংগ্রহ করি। খুব ভালো উদ্যোগ বলেও জানান তিনি।

তারগঞ্জ শিশু নিকেতনের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী তাসনিম জাহান বলেন, একদিন ডাক্তার এসে আমাদের সবার রক্ত নিয়ে গ্রুপ নির্ণয় করে আমাদের জানিয়েছেন। আমরা সবাই জানি কার রক্তের গ্রুপ কী।

জান গেছে, বর্তমানে উপজেলায় ৭০ হাজার ব্লাড গ্রুপের সদস্য তার মধ্যে ৮০১ জন ডোনার রয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডোনারদের তালিকা দেয়া আছে। সেখান থেকে প্রয়োজনে সহজেই যে কেউ রক্ত সংগ্রহ করতে পারবেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার হারিয়াল কুটি এলাকার সাহেব আলী থেলাসামিয় রোগে আক্রান্ত। তাকে আগামী ১৩ মাস রক্ত দান করবেন ১৩ জন দাতা। এর মধ্যে একজন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল করিম। আর অন্যরা হলেন- ন্যাশনাল সার্ভিসের কর্মী। সাহেব আলীর রক্তের গ্রুপ এ পজেটিভ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিলুফা সুলতানা বলেন, গত এক বছর থেকেই এই চেষ্টা অব্যাহত ছিল। সবার সহযোগিতায় এটা করা সম্ভব হয়েছে। একটি মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্যই এই উদ্যোগ নেয়া।

তিনি বলেন, এতে করে মানুষ রক্তের কোন প্রয়োজন হলেই খুব সহজে রক্ত সংগ্রহ করে বিপদমুক্ত হতে পারবে।

উপজেলা চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান লিটন বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এমন উদ্যোগে আমরা মুগ্ধ। এর আগেও তিনি ‘সবুজ তারাগঞ্জ গড়ি’ কর্মসূচি নিয়ে এক ঘণ্টায় আড়াই লাখ বৃক্ষরোপন করে বিশ্বরেকর্ড করেছেন। তার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

জেলা প্রশাসক এনামুল হাবীব বলেন, দেশে কোথাও এমন সিস্টেম চালু হয়নি। এই প্রথম রংপুরের তারাগঞ্জে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সারাদেশেই যেন এই উদ্যোগ নেয়া হয় সে জন্য আমরা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলব।

এর আগে ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর এক ঘণ্টায় আড়াই লাখ বৃক্ষরোপন করে বিশ্বের দরবারে তাক লাগিয়েছে তারাগঞ্জ প্রশাসন। যা গ্রিনিজ বুকে রেকর্ড করার জন্য বাংলদেশ সরকার সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদনও করেছে।

(ঢাকাটাইমস/১১সেপ্টেম্বর/আরআই/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :