ক্ষুব্ধ তৃণমূলের জাপা

এরশাদের রংপুর ঘাঁটি এখন দুই ভাগ

রফিকুল ইসলাম রফিক, রংপুর
 | প্রকাশিত : ২০ নভেম্বর ২০১৮, ১২:৫৫

এক সময়কার জাতীয় পার্টির দুর্গ বলে পরিচিত রংপুর এখন দৃশ্যত দুই ভাগে বিভক্ত। সংসদে বিরোধী দলটির কাছ থেকে জেলার আসনগুলোর সিংহভাগ দখলে নিয়ে ভাগ বসিয়েছে মহাজোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগ।

২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনের চারটিই দখলে নেয় ক্ষমতাসীন দল। বর্তমান চার সংসদ সদস্যকেই ফের মনোনয়নের জোরালো দাবি রয়েছে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে। অন্যদিকে জাপার তৃণমূল থেকে শুরু করে শীর্ষনেতারা আসনগুলো ফিরে পেতে জোর প্রচেষ্টা চালালেও এবারের নির্বাচনে অর্ধেক অর্ধেক ভাগাভাগি হতে পারে বলে গুঞ্জন চলছে রংপুরে।

সর্বশেষ গতকাল বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে মহাজোট প্রধান আওয়ামী লীগের প্রাথমিক পর্যায়ের প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে রংপুরের ছয়টি আসনের তিনটিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নাম প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বর্তমান তিন সংসদ সদস্য রংপুর-৪ আসনে টিপু মুনশী, রংপুর-৫ আসনে দলের কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান ও রংপুর-৬ আসনে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর নাম রয়েছে।

ফলে সরকারি দলে মোটামুটি স্বস্তি ফিরলেও রংপুর-২ আসনেও বর্তমান এমপি আবুল কালাম মোহাম্মাদ আহসানুল হক চৌধুরী বা দলেরই অন্য কাউকে চাইছে তৃণমূল। অন্যদিকে চরম ক্ষোভ তৈরি হয়েছে তৃণমূল জাপায়।

নির্বাচনী পরিসংখ্যান বলছেন, ১৯৯১ সালে দুটি আওয়ামী লীগ পেলেও ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত নির্বাচনগুলোতে রংপুরের ছয়টি আসনেই একক আধিপত্য ছিলো এরশাদ ও জাতীয় পার্টির। ২০০৮ সালের নির্বাচনে কিছুটা নড়বড়ে আর ২০১৪ সালে ৮০ শতাংশই বদলে যায়। ছয়টি আসনের চারটিই দখলে নেয় আওয়ামী লীগ। আর এই ধারা অব্যাহত রাখতে যত প্রচেষ্টা দরকার ছিল, তার সব কিছুই করেছে টানা দশ বছর ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ। সে কারণেই এরই মধ্যে তিনটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। কোনোভাবেই এরশাদকে ছাড় দিতে চায় না। একইভাবে ছাড়তে চায় না জাপাও।

সূত্র বলছে, কমপক্ষে পাঁচটি আসন চায়- এমন শক্ত অবস্থানে আছে জাপা। শেষ পর্যন্ত কী হবে তা নির্ভর করছে এরশাদ-হাসিনার শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের ওপর।

রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনে ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত জাতীয় পার্টি জয়লাভ করে। এরপর জোটগতভাবে ২০০৮ ও ২০১৪ সালেও জাতীয় পার্টি আসনটি দখলে রাখে। এবারও এরশাদের প্রার্থী হিসাবে মশিউর রহমান রাঙ্গার নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ নিয়ে রংপুর-২ আসন। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের থাকলেও ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দখলে রাখে জাতীয় পার্টি। আর ২০১৪ সালে ফের হাতছাড়া হয়ে চলে যায় আওয়ামী লীগের ঘরে। এবার এ আসনটিতে এখনো আওয়ামী লীগ প্রার্থিতা ঘোষণা করেনি। সেদিক থেকে জাপা প্রায় চূড়ান্ত।

রংপুর সিটি করপোরেশন আর সদর উপজেলা নিয়ে রংপুর-৩ আসনটিও ১৯৯৬ সাল থেকে এরশাদের দখলে আছে। এবারও তিনি একমাত্র প্রার্থী। এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেবে না বলে চাউর রয়েছে।

রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনেও ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত একক নিয়ন্ত্রণে রাখে জাতীয় পার্টি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ-জাপা মহাজোট হলেও পৃথক পৃথক প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। জয়ী হয়ে আসনটি চলে যায় আওয়ামী লীগের কাছে। ২০১৪ সালেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচিত হন।

মিঠাপুকুর উপজেলা নিয়ে রংপুর-৫ আসন। এই আসনটি ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত জাতীয় পার্টি দখলে রাখলেও ২০০৮ ও ২০১৪ সালে চলে যায় আওয়ামী লীগের ঘরে। একইভাবে রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত জাপা আর ২০০৮ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত দখলে রেখেছে আওয়ামী লীগ।

রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি ম-ল বলেন, ‘রংপুরের মানুষের মধ্যে আর আগের সেই সস্তা আবেগ নেই। তারা আর এরশাদকে চান না। আমরা স্থানীয় আওয়ামী লীগ তো চাইই না।’

তিনি বলেন, তিনটি আসন কেন ছয়টিতেই আওয়ামী লীগ আর জাতীয় পার্টি প্রার্থী দিলে একটাতেও এরশাদের প্রার্থীরা জিততে পারবেন না। আমরা দলকে সেভাবেই গুছিয়েছি। আপাতত আমরা তিনটি আসনে প্রার্থীর নাম জানতে পেরেছি। আশা করছি, রংপুর-২ আসনেও আমাদের প্রার্থী দেয়া হবে।’

এদিকে তিনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নাম প্রকাশ পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন জাতীয় পার্টির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এটি একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলেও মনে করেন তারা।

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি রংপুর নগর জাপার সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘রংপুরে একক অধিপত্য জাতীয় পার্টির। এখানে আওয়ামী লীগকে ছাড় দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তাদের তিনটি আসন ছেড়ে দিলে এটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে বলে আমি মনে করি।’

তার দাবি, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে জাতীয় পার্টি এখন অনেক শক্তিশালী। সুতরাং দলকে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :