‘বুড়ি হইলাম তোর কারণে’

একজনের মাথা থেকে অন্য জনের মাথায়। এভাবেই ঝুড়ি ভর্তি করে ফেলা হচ্ছে মাটি। সকাল নয়টা থেকে কাজ করছে কিছু মানুষ। নারী এবং পুরুষে বিভক্ত তারা। ঝুড়ি-কোদালে সমপরিমাণ মাটি ঝুড়িতে ভরছে তারা। একজন নারী ও পুরুষ মাটি ঝুরিতে ভরছে। অন্য নারী ও পুরুষ তা মাথায় তুলে দিচ্ছে। তাদের থেকে অন্য নারী-পুরুষ মাথায় নিয়ে তা অন্যত্র ফেলে দিচ্ছে।
দুপুর বেলা। চলতে চলতে চোখে পড়লো রাস্তার পাশে মাটি ফেলা হচ্ছে। পান চিবুচ্ছে আর এক মাথা থেকে মাটির ঝুড়ি নিয়ে মাটি ফেলছে আমেনা বেগম। কাজের চাপে বেশি কথা জিজ্ঞাসা করতে পারিনি। টুকটাক যা কথা হল তা এ রকম-
"মামা আমরা মেয়ে মানুষ। বেডা মানুষের সমান কাম করেও ট্যেকা পাই কম। সবাই মনে করে আমরা কম কাম করি। কিন্তুক দ্যাখেন, ওই বেডা যা করছে আমিও তাই করছি। ওই বেডার দিব ৩৫০ ট্যাকা আর আমাগো ৩০০ ট্যাকা"।
পাশ থেকে আর একজন নারী শ্রমিক মাথার মাটি ভর্তি ঝুড়ি আমেনা বেগমকে দিয়ে হঠাৎ গান গেয়ে উঠলেন- পরাণের বন্ধু রে বুড়ি হইলাম তোর কারণে"।
হ্যাঁ, আমাদের সমাজে এ ভাবেই নারী-পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। একই রকম শ্রম দিচ্ছে। অথচ মজুরি দেবার বার পাবার বেলায় পুরুষের তুলনায় কম দেয়া- নেয়ার কারবার চলছে। এর মাধ্যমে যেমন সমাজে শ্রম বৈষম্য করা হচ্ছে ঠিক তেমনি মজুরি শোষণ করে ঠকানো হচ্ছে। আর এটি করছি আমরা। এটা পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থার একটি বড় অনৈতিক দিক। আমাদের এই শ্রম শোষণ থেকে মানবিক কারণে অবশ্যই বের হয়ে আশা উচিৎ।
(ঢাকাটাইমস/২৩নভেম্বর/এসএস/এমআর)

মন্তব্য করুন