কল্প জাহাজে রঙিন বাঁকখালী

কক্সবাজার প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০১৮, ২১:৪৬ | প্রকাশিত : ২৫ অক্টোবর ২০১৮, ২০:৫৭

বাঁশ, কাঠ, বেত এবং রঙিন কাগজের উপর অপূর্ব কারুকাজে তৈরি হাতি, নাগরাজ, ময়ূর, ঘোড়া এ রকম সাতটি কল্প জাহাজে রঙিন হয়ে উঠেছে বাঁকখালী। এসব জাহাজ ভাসানো হয়েছে রামুর চেরাংঘাটা ঘাট সংলগ্ন বাঁকখালী নদীতে।

বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটা থেকে শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী কল্প জাহাজ ভাসানো উৎসব। চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।

পাঁচ-ছয়টি নৌকার উপর বসানো হয়েছে এক-একটি কল্প জাহাজ। রঙ-বেরঙের কাগজে আকর্ষণীয় নির্মাণ শৈলীর কারণে খুব সহজেই মানুষের দৃষ্টি কাড়ছে এসব জাহাজ।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে এ বছর দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শেষ দিন রামু বৌদ্ধ ঐতিহ্য ও পুরাকীর্তি সংরক্ষণ পরিষদ এ উৎসবের আয়োজন করে।

আগের দিন ফানুস উড়ানো এবং পরের দিন জাহাজ ভাসার মধ্যদিয়ে শেষ হয় এই উৎসব। উৎসব মূলত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের হলেও হিন্দু, মুসলিম এবং দেশি-বিদেশি পর্যটকদের অংশগ্রহণে উৎসব হয়ে উঠে অসাম্প্রদায়িক মিলন মেলা।

এতো দিন সিংহ ও ময়ূরকে বন-জঙ্গলে এবং ঘোড়াকে স্থলভাগে দেখলেও উৎসবে দেখা গেল পানিতেই ভাসছে এই তিনটি প্রাণি। এমন কি আকাশ ছাড়িয়ে পাখিও পানিতে। রঙিন কাগজের এসব জাহাজ দেখে অবাক পর্যটকেরা।

বুদ্ধের আসন এবং বৌদ্ধ প্যাগোডার আকৃতিতেও দৃষ্টি কল্প জাহাজ তৈরি করা হয়েছে। আর এসব জাহাজে চলছে শিশু, যুবক সব বয়সীদের বাঁধ ভাঙা আনন্দ। গান এবং নানা বাদ্যের তালে তালে তারা নাচছে আর গাইছে।

ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলেও মুখে কেরোসিন নিয়ে আগুনের ফুলকি বের করার দৃশ্যটিও বেশ উপভোগ করছে দর্শনার্থীরা।

সন্তানকে নিয়ে উৎসবে যোগ দিতে কক্সবাজার থেকে এসেছেন ড. আছিং রাখাইন। আছিং বললেন, অনেকদিন ধরে রামুর এই উৎসবের কথা শুনে আসছি। কিন্তু পড়ালেখার সুবাদে দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকায় আসা হয়নি। এখানে না এলে বুঝতে পারতাম না, এ উৎসবের রূপ কেমন। সত্যিই অসাধারণ।

কক্সবাজারে একটি আন্তজার্তিক সাহায্য সংস্থায় কাজ করেন বিশ্বজিৎ বড়ুয়া। উৎসবে আসেন কিছু বিদেশি সহকর্মীদের সাথে। তিনি বলেন, ২০১২ সালে রামুতে বৌদ্ধ বিহার ও বসতিতে যে ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছি, সেই রামুতেই এখন দেখছি, এক অন্যরকম আনন্দ উৎসব। সত্যিই খুব ভালো লাগছে।

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ও রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের সহকারী পরিচালক প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু জানান, আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস বর্ষাব্রত পালনের শেষ দিনই হচ্ছে প্রবারণা পূর্ণিমা। এদিনটি অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে পালন করে রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়। এ ধারাবাহিকতায় এখানে জাহাজ ভাসা উৎসবের আয়োজন।

তিনি বলেন, প্রায় দুইশো বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী এ জাহাজ ভাসা উৎসব শুধুমাত্র ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, যুগ যুগ ধরে হাজার হাজার শিশু-কিশোর ও আবাল বৃদ্ধ-বণিতার মাঝে নির্মল আনন্দ এবং সৌহার্দ্য সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় করে আসছে।

রামু উপজেলা বৌদ্ধ ঐক্য ও কল্যাণ পরিষদের সভাপতি প্রবীর বড়ুয়া জানান, এক সময় খুরুস্কুল ও চৌফলদণ্ডী এলাকার রাখাইন সম্প্রদায় সাগরের মোহনায় এ উৎসব জাঁকজমকভাবে পালন করত, কিন্তু একটি দুর্ঘটনার কারণে বিগত কয়েক বছর এখানে জাহাজ ভাসানো উৎসব বন্ধ রাখা হয়। এখন ছোট্ট পরিসরে হারবাং ও চৌফলদণ্ডীতে এ উৎসব আয়োজন করা হয়ে থাকে। কিন্তু এতটা বর্ণাঢ্য রূপ সেখানে দেখা যায় না।

বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার সভাপতি, রামু সীমা বিহারের অধ্যক্ষ পণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের জানান, আজ হতে দুইশ বছর আগে থেকে এ জাহাজ ভাসা উৎসবের প্রচলন হয় পাশ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে।

সেদেশের মুরহন ঘা এলাকায় একটি নদীতে মংরাজ ম্রাজংব্রান প্রথম এ উৎসবের আয়োজন করেন। প্রবারণা পূর্ণিমার এক সাথে মিলিত হবার জন্য এ আয়োজন চলত। সেখান থেকে বাংলাদেশের রামুতে শুরু হয় এ উৎসবের প্রচলন। প্রায় শতবছর ধরে রামুতে মহাসমারোহে এ উৎসব হয়ে আসছে।

দুপুর দেড়টায় এ উৎসবে পবিত্র ত্রিপিটক থেকে পাঠের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন- উখিয়া পাতাবাড়ি আনন্দভূবন বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞাবোধি মহাথের।

উত্তর মিঠাছড়ি বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রের পরিচালক করুণাশ্রী থের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহিদুর রহমান, রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুৎফর রহমান, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস-চেয়ারম্যান সুপ্ত ভূষন বড়ুয়া, রামু বৌদ্ধ ঐহিত্য ও পুরাকীর্তি সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি ও প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু প্রমুখ।

স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কেতন বড়ুয়া।

(ঢাকাটাইমস/২৫অক্টোবর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :