ফরিদপুরের ৮০ ভাগ বহুতল ভবনই ঝুঁকিতে

ফরিদপুর প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:৩২ | প্রকাশিত : ০৭ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:৩০

গত এক যুগে ফরিদপুরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বহুতল ভবন। মালিকরা ‌‘সরকারি ভবন নির্মাণবিধি’ বা বিল্ডিং কোড না মেনেই খেয়াল-খুশিমতো ভবন তৈরি করছেন। এতে ওইসব ভবন ও ভবনে বসবাসরত মানুষেরা রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে।

ফায়ার সার্ভিস বলছে, শহরের দুই শতাধিক ভবনের মধ্যে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশেরই বৈধ অনুমোদন নেই। আর জেলা প্রশাসন বলছে, সরকারি আদেশ মানতে বাধ্য করা হবে অবৈধ ভবন মালিকদের।

বহুতল ভবন নির্মাণে পৌরসভা থেকে নকশা অনুমোদন করাসহ ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কিছু বিধি-নিষেধ মেনে চলার বিধান রয়েছে বিল্ডিং কোড আইনে। কিন্তু ফরিদপুর শহরে নির্মিত ও নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের মালিকরা এসব নীতিমালার তোয়াক্কাই করছেন না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের প্রাণকেন্দ্র নিলটুলী, ঝিলটুলী, জনতা ব্যাংকের মোড়, খাবাসপুর, লক্ষ্মীপুর, আলীপুরসহ সর্বত্র নির্মিত হয়েছে অসংখ্য বহুতল ভবন। নির্মাণ কাজ চলছে আরও অনেকগুলোর। বিল্ডিং কোড না মেনে তৈরি করা বা নির্মাণাধীন এসব ভবনের অধিকাংশেই নেই ফায়ার সার্ভিসের আগুন প্রতিরোধের ব্যবস্থা।

ফরিদপুর পৌরসভার বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে, নকশা অনুমোদন করলেও নকশা অনুসারে ভবনটি নির্মিত হচ্ছে কি না সে বিষয়ে কোনো তদারকি করে না কর্তৃপক্ষ।

ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র শেখ মাহতাব আলী মেথু জানান, বর্তমানে সরকারি নিয়মের মধ্যে থেকে পৌরসভা থেকে ভবন নির্মাণে নকশার অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে । তবে `বিল্ডিং কোড আইন` ঘোষনার আগে যেসব ভবন হয়েছে, সেগুলো এই আইনের আওতায় নেই।

তিনি স্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় সঠিক তদারকি করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও চেষ্টা করছি সবাইকেই নিয়মের মধ্যে আনতে।’

রাজধানী ঢাকার বনানী ট্র্যাজেডির পর থেকেই শহরের বহুতল ভবন নিয়ে জনমনে আতঙ্ক বেড়েছে।

নারীনেত্রী আসমা আক্তার মুক্তা বলেন, ‘শুধু আমরাই নই, অনুমোদন ছাড়া তৈরি ভবন মালিকরাও কিন্তু জীবনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। বিষয়টি কঠোরভাবে দেখা দরকার প্রশাসনের।’

শাহ ফরিদ রিয়েল স্টেটের মালিক ওমর আলী খান অভিযোগ করে বলেন, ‘টাকা ছাড়া কোনো সরকারি দপ্তরের ফাইল ছাড়া হয় না। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো যদি আমাদের বাধ্য করে বিল্ডিং কোড মানতে, তা হলে কেন করবো না?’

‘আমরা ডেভেলপার কোম্পানিগুলোও চেষ্টা করছি সরকারি নিয়মের মধ্যে থেকে কাজ করতে। তবে যতোটুকু সমস্যা রয়েছে, তা দ্রুত সমাধানের জন্য চেষ্টা চলছে।’

ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মমতাজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বহুতল ভবন নির্মানের নকশা অনুমোদনের ক্ষমতা পৌরসভা থেকে জেলা প্রশাসনের হাতে যাওয়ার পর বিল্ডিং কোড আইন বা ফায়ার সার্ভিস আইন মেনে নকশার অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। এই জেলা শহরের দুই শতাধিক ভবন রয়েছে যার ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশেরই বৈধ অনুমোদন নেই।’

‘আমাদের ফায়ার স্টেশনের ছয়তলা পর্যন্ত আগুন নেভানোর ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু এর বেশি উঁচু ভবনে কোনো বিপদ ঘটলে কি হবে, তা বলতে পারছি না।’

জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া স্বীকার করেছেন, ফরিদপুরের বহুতল ভবন মালিকরা বিল্ডিং কোড ও ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন না নিয়ে ভবন করছেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে বহুতল ভবন করতে হলে অবশ্যই সরকারি নিয়মের মধ্যে করতে হবে। এর ব্যতিক্রম কেউ করলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবৈধ ভবনের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। ওইসব ভবন মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সবাইকেই ফায়ার সার্ভিস আইন মেনে চলতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/৭এপ্রিল/প্রতিবেদক/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :