শেরপুর সদর হাসপাতাল

ডাক্তার দেখানো যেন যুদ্ধজয়

সুজন সেন, শেরপুর
 | প্রকাশিত : ১৫ জুন ২০১৯, ১১:৩৬

শেরপুর সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখানো যেন যুদ্ধজয়। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট নিয়ে ডাক্তার পর্যন্ত যেতে একজন রোগীর সময় লাগে অন্তত চার ঘণ্টা। তাই রোগীর ভিড় সামলাতে ডাক্তার কোনো রকম ব্যবস্থাপত্র দিয়েই দায়িত্ব সারেন। এই হাসপাতালটির বহির্বিভাগ, অন্তঃবিভাগ সব জাগয়াতেই দীর্ঘদিন ধরে চলছে চিকিৎসক সংকট। যে কারণে এমন চিত্র প্রতিদিনকার। অন্যদিকে শূন্যপদগুলো পূরণ করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক।

জানা যায়, সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ২/৩ জনের বেশি ডাক্তার দেওয়ার সামর্থ্য নেই কর্তৃপক্ষের। প্রত্যেক ডাক্তারকে দিনে দুই থেকে আড়াইশ রোগীর ব্যবস্থাপত্র দিতে হয়। একদিকে ডাক্তার সংকট অন্যদিকে রোগীর ভারে নিজেরই সংকটাপন্ন অবস্থা জেলার ১৫ লাখ মানুষের এই স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রটির। তাছাড়া রোগী বেশি শয্যা কম এ নিয়ে চলছে অন্তঃবিভাগ। এখানে শয্যা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

অভিযোগ আছে, পাঁচ বছর আগে হাসপাতালটি আড়াইশ শয্যার স্বীকৃতি পেলেও আজ পর্যন্ত ১০০ শয্যার সুবিধাই পায়নি। সরকারি হিসাবে ১০০ শয্যার হাসপাতালে ৩৬ জন ডাক্তার প্রয়োজন। সেখানে শেরপুর সদর হাসপাতালে ডাক্তার আছেন মাত্র ১৬ জন। এরমধ্যে কেউ কেউ আছেন বদলির তদবিরে।

সূত্র জানায়, কার্ডিওলজি, অর্থোপেডিক, ইএনটিসহ ১০ জন গুরুত্বপূর্ণ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই। এ কারণে সামান্য সমস্যায় ভুক্তভোগীদের ময়মনসিংহ মেডিকেল বা বিভিন্ন ক্লিনিকের শরণাপন্ন হতে হয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় মাসে বহির্বিভাগে গড়ে প্রতিদিন ৭২৭ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। টিকিট আর ডাক্তার এই দুই দফায় দীর্ঘ লাইন পার হতে সময় ও ধৈর্যের অভাবে অনেকে চিকিৎসা না নিয়েই ফিরে যাচ্ছেন। বহির্বিভাগে অন্তত দিনে সাতজন ডাক্তার দিতে পারলে এ ভোগান্তি কাটবে বলে দাবি ভোক্তভোগীদের। অন্যদিকে অন্তঃবিভাগে রয়েছে ভয়াবহ শয্যা সংকট। ভর্তি রোগীরা শয্যা না পেয়ে মেঝে, বারান্দা, টয়লেটের পাশে কোনোভাবে শুয়ে-বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ১৪ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ৫২ জন ভর্তি থাকে। সঙ্গে শিশুর মায়েরা থাকায় সেখানে অবস্থান করে কমপক্ষে ১০৪ জন। রোগী আর স্বজনের ভারে গাইনি ওয়ার্ডের অবস্থাও নাজুক।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম বলেন, চিকিৎসার জন্য শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল জেলার প্রায় ১৫ লাখ অধিবাসী ও পাশের জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ ও সানন্দবাড়ী উপজেলা এবং কুড়িগ্রাম জেলার রাজীবপুর ও রৌমারী উপজেলার বিপুলসংখ্যক মানুষ। কিন্তু প্রয়োজনীয়সংখ্যক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মকর্তা না থাকায় হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম প্রায় ভেঙে পড়েছে। তার ওপর রয়েছে শয্যা ও ওষুধের সংকট। এছাড়াও হাসপাতালে তিনটি অত্যাধুনিক আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে তা ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে গরিব রোগীদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে আলট্রাসনোগ্রাম করাতে হয়।

স্থানীয় আবুল হাসেম বলেন, হাসপাতালের অন্তর্বিভাগে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ জন রোগী ভর্তি থাকে। এ ছাড়া অন্তর্বিভাগের মেঝে ও বারান্দাতেও রোগীদের চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। অধিকাংশ রোগীকেই কিছু বড়ি ও ইনজেকশন ছাড়া বাকি সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। রোগীদের মধ্যে পরিবেশন করা খাবারও হয় নিম্নমানের। এ ছাড়া সেবিকাস্বল্পতায় রোগীরা যথাযথ সেবা পায় না।

কয়েক দিন আগে এক দুপুরে এই প্রতিবেদক হাসপাতালে গেলে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া জেলার শ্রীবরদী উপজেলার কুরুয়া গ্রামের শহীদুল ইসলামের (২১) সঙ্গে কথা হয়। শফিকুল বলেন, ফুটবল খেলার সময় আঘাত পেয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু শয্যা পাচ্ছেন না। পাঁচ দিন ধরে হাসপাতালের বারান্দাতেই তাকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

জেলা সিভিল সার্জন ও হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রেজাউল করিম ঢাকাটাইমসকে বলেন, প্রতি মাসে ডাক্তারের চাহিদাপত্র উপরে জানানো হচ্ছে। আর হাসপাতালের নির্মাণাধীন নতুন ভবনটি চালু হলেই শয্যা সংকট কেটে যাবে।

ঢাকাটাইমস/১৫জুন/প্রতিনিধি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :