ঢাকা কমার্স কলেজ
অধ্যাপকের বিরুদ্ধে সহকর্মীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ

ঢাকা কমার্স কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সাইদুর রহমান এক দিন সন্ধ্যায় ফোন করেন তারই একজন নারী সহকর্মীকে। ওই নারী তখন সবেমাত্র প্রভাষক হিসেবে কলেজে যোগ দিয়েছেন।
মুঠোফোনে সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমার ওষুধ ফুরিয়ে গেছে। মোহাম্মদপুরে ওষুধ কিনতে যাব। আমার তো এক চলাফেরায় সমস্যা, বাসায় কেউ নেই। তুমি কি আমার সঙ্গে যেতে পারবে?’ ওই নারী প্রভাষক বুঝে উঠতে পারেন না কী বলবেন। একপর্যায়ে সাইদুর রহমান খুব করে বললে, ওই নারী প্রভাষক তার সঙ্গে মোহাম্মদপুরে যেতে রাজি হন।
ষাট পেরিয়ে যাওয়া সাইদুর রহমানকে তিনি বাবার মতো শ্রদ্ধা করতেন। কিন্তু এরপর যা ঘটে, তাতে ওই নারী প্রভাষক রীতিমতো চমকে ওঠেন। ঘৃণাও তৈরি হয় বাবার মতো জানা ওই শিক্ষকের ব্যাপারে।
এসব বিষয় উল্লেখ করে কলেজের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ওই নারী প্রভাষক। কিন্তু অজানা কারণে তার অভিযোগের কোনো দৃশ্যমান তদন্ত হয়নি। ওদিকে অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়া সাইদুর রহমানও দিনকে দিন আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ওই নারী প্রভাষক ছাড়াও আরও অনেক নারী সহকর্মীকে তিনি যৌন হয়রানি করেন। গুরুতর অশালীন আচরণের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগ কলেজের কমিটি ছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মানবাধিকার কমিশন ও জাতীয় মহিলা পরিষদেও জমা দেওয়া হয়েছে। জাতীয় মহিলা পরিষদ অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ওষুধ কিনতে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার দিন সাইদুর রহমান ওই নারী শিক্ষিকার সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এক পর্যায়ে তিনি অসামাজিক প্রস্তাব দেন বলেও অভিযোগ করেন ওই নারী।
এ ছাড়া সাইদুর রহমান কারণে অকারণে নারী সহকর্মীদের ফোন করে তার কক্ষে ডেকে নিতেন। তাদের প্রেম-বিনিময়সহ নানা ধরনের অশালীন বাক্যলাপ এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগও করেন ভুক্তভোগী নারী সহকর্মীরা। দিনের পর দিন এসব ঘটনা কলেজের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো ফল পাননি তারা। বরং ‘প্রভাবশালী’ শিক্ষক বলে পরিচিত সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলারই সাহস পান না। উল্টো অভিযোগকারীদেরই শুনতে হয়েছে কটু কথা।
কলেজের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, গত দেড় মাস আগেও সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির সুনির্দিষ্ট ঘটনা উল্লেখ করে অভিযোগ দিয়েছেন এক নারী সহকর্মী। কিন্তু এখনো সেই অভিযোগের তদন্তে কলেজের কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি।
এ ব্যাপারে ঢাকা কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শফিকুল রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি দুই মাস হলো এই প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছি। যৌন হয়রানির যেসব অভিযোগ এসেছে সংশ্লিষ্ট কমিটি এসব নিয়ে তদন্ত করছে। চলতি মাসের ৭ ও ১৪ তারিখ কমিটির সদস্যরা সভা করেছে। তদন্তে অগ্রগতি আছে।’ তিনি বলেন, ‘অপরাধ করলে শাস্তি পেতেই হবে। সে যে-ই হোক। এ ব্যাপারে কমিটি কোনো গাফলতি করবে না।’
এসব অভিযোগের তদন্ত কম সময়ে করার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে নারীরা প্রায়ই এমন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। যেহেতু ওই দুই নারী প্রতিরোধ কমিটির কাছে অভিযোগ করেছেন, তাই যতদ্রুত সম্ভব এটি সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে সময়ের দীর্ঘসূত্রিতায় অপরাধী পার পেয়ে যেতে পারে।’
তবে নিজের বিরুদ্ধে সব অভিযোগকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন অধ্যাপক সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমি বয়স্ক মানুষ। কেন এসব করব?’ তিনি দাবি করেন, প্রতিষ্ঠানে তাকে হেয় করতে এসব অভিযোগ করা হয়েছে।
কথা বলার এক পর্যায়ে সাইদুর রহমান তার ব্যাপারে প্রতিবেদন লেখা থেকে এই প্রতিবেদককে বিরত থাকার অনুরোধ করেন। বলেন, ‘এসব নিয়ে নিউজ করার দরকার নেই। আমার আর এক বছর চাকরি আছে। অবসরে যাবার আগে লেখালেখি হলে টাকা পেতে সমস্যা হবে। নিউজ করলে হয়তো ওদের পক্ষে (ওই দুই প্রভাষক) যাবে, না হয় আমার পক্ষে যাবে। এক দিন আসেন ‘চা’ খাব।’’

মন্তব্য করুন