ট্রাম্পের পক্ষে ভোটের প্রচার চালিয়ে বিতর্কে মোদি

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
  প্রকাশিত : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২২:১৭
অ- অ+

আমেরিকার টেক্সাসে এক বিশাল জনসভায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়ে তার হয়ে ভোটের প্রচার করেছেন, ভারতের বিরোধী দলগুলো তার তীব্র সমালোচনা করছে।

কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা অভিযোগ করেছেন, 'হাউডি মোদি' নামে ওই মেগা-ইভেন্টে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে ট্রাম্পকে আবার জেতানোর জন্য প্রকাশ্যে স্লোগান দিয়েছেন - তা ভারতের বিদেশ নীতির পরিপন্থী।

পর্যবেক্ষকরাও অনেকেই মনে করছেন, আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের হয়ে মোদির এই প্রচারণা এক অভূতপূর্ব ঘটনা - যদিও ভারতের শাসক দল বিজেপি বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা এই সব সমালোচনা আদৌ গায়ে মাখছে না।

টেক্সাসের হিউস্টনে রবিবার রাতে প্রায় ৫০ হাজার ইন্দো-আমেরিকান দর্শকের সামনে হাত-ধরাধরি করে নরেন্দ্র মোদি ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য ব্যাপকভাবে হইচই ফেলেছে।

কিন্তু অনেকে তার চেয়েও বেশি অবাক হয়েছেন মোদি সরাসরি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আবার জেতানোর আহ্বান জানানোয়।

ভারতে নিজের জনপ্রিয় নির্বাচনী স্লোগান 'আবকি বার মোদি সরকারে' যেভাবে তিনি ট্রাম্পের নাম বসিয়ে আবার তার সরকারকে ক্ষমতায় আনানোর ডাক দিয়েছেন, ভারতের কোনো প্রধানমন্ত্রী দেশে বা বিদেশে কখনও তা করার কথা সম্ভবত ভাবতেও পারেননি।

তবে এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কংগ্রেস নেতা ও সাবেক ক্যাবিনেট মন্ত্রী আনন্দ শর্মা টুইট করে প্রধানমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দেন, আমেরিকার প্রতি ভারতের নীতি বরাবরই ছিল 'বাইপার্টিসান'।

অর্থাৎ রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ভারত কখনোই একটি রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাত দেখায়নি। তিনি আরও দাবি করেন, ট্রাম্পের হয়ে স্লোগান দিয়ে মোদি আসলে দুই দেশেরই সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক মর্যাদাকেই খর্ব করেছেন।

কংগ্রেস মুখপাত্র ব্রিজেশ কালাপ্পা বিবিসিকে বলছিলেন, ‘এটা তো পরিষ্কার আমেরিকার ঘরোয়া রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ। তা ছাড়া আমেরিকায় বসবাসকারী ভারতীয়রা বরাবরই ডেমোক্র্যাটদের সমর্থক, বারাক ওবামাকে তারা খুবই পছন্দ করতেন।’

‘সেখানে একজন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট যদি ইন্দো-আমেরিকানদের ভোট জিততেও চান, মোদি কেন তার ফাঁদে পা দেবেন? কই, চীনের নেতারা তো তাদের ডায়স্পোরার কাছে গিয়ে কখনো এরকমটা করেন না!’

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তথা প্রবীণ রাজনীতিবিদ ওমপ্রকাশ মিশ্রও মনে করছেন, নরেন্দ্র মোদি গত রাতে হিউস্টনে যা করেছেন ভারতের ইতিহাসে তা সম্পূর্ণ নজিরবিহীন।

বিবিসি বাংলাকে ড. মিশ্র বলছিলেন, ‘কূটনীতিতে এটা খুবই বিরল একটা ঘটনা। আরও যেটা অভূতপূর্ব তা হল, একে অপরের পিঠ চাপড়ানি চললেও দেওয়া-নেওয়াটা কিন্তু হচ্ছে সম্পূর্ণ এক পক্ষে।’

‘মানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কিন্তু এমন কিছু এবারে বলেননি যা মোদি সরকারকে নিজের দেশের ভেতরে সাহায্য করবে। অথচ উনি দুম করে ঘোষণা করে দিলেন 'আবকি বার ট্রাম্প সরকার'!’

‘মাসকয়েকের ভেতরই যেখানে আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাইমারি শুরু হচ্ছে, সেখানে একজন বিদেশি নেতার আমেরিকার গিয়ে এভাবে প্রচারণা করার কোনও নজির নেই।’

‘আমার ধারণা এতে ভারতের বিদেশনীতির ওপর মানুষের যে আস্থা ছিল তা কিছুটা হলেও দুর্বল হবে। তা ছাড়া আমেরিকার নাগরিকদের কাছেও ভারত সম্পর্কে একটা ভুল বার্তা বহন করবে’, বলছিলেন ড. মিশ্র।

নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি কিন্তু এই সব সমালোচনা সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়ে বলছে, আসলে আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে মোদির অসাধারণ সাফল্যে বিরোধীরা ঈর্ষান্বিত বলেই এই সব অভিযোগ তোলা হচ্ছে।

বিজেপি নেতা সৈয়দ শাহনওয়াজ হুসেনের কথায়, ‘একটা সময় ছিল যখন পাকিস্তান বিদ্রূপ করে বলত ভারতের প্রধানমন্ত্রী না কি আমেরিকায় গিয়ে গ্রাম্য মহিলাদের মতো শুধু নালিশ করেন।’

‘আর আজ যখন মোদীজির হাতে হাত রেখে ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোরেন, তখন কী বার্তা যায়? এটাই যায় - যে ভারত হলো মার্কিনিদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত, ভরসা করার বন্ধু।’

‘ভারতীয়দের আসলে গর্বিত হওয়া উচিত, তারা এমন একজন নেতা পেয়েছে যিনি ভারতকে আমেরিকার সঙ্গে এক কাতারে নিয়ে এসেছেন’, বলছেন মি হুসেন।

তবে নরেন্দ্র মোদির সমালোচকরা এটাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হয়ে তিনি খোলাখুলি ভোটের প্রচার করলেও চলমান ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সংঘাতে দিল্লি কিন্তু ওয়াশিংটনের কাছ থেকে এখনও বিন্দুমাত্র ছাড় পায়নি। -বিবিসি বাংলা

(ঢাকাটাইমস/২৩সেপ্টেম্বর/জেবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত বাংলাদেশ
১৪-২৪ মার্কা নির্বাচনের আলামত দেখা যাচ্ছে: জামায়াত আমির
টেক্সাসে হঠাৎ ভয়াবহ বন্যায় ২৪ জনের মৃত্যু, নিখোঁজ বহু শিশু
আন্দোলন এখন গলার কাঁটা, বহিষ্কার ও দুদক আতঙ্কে এনবিআর কর্মকর্তারা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা