‘সব অবৈধ অর্থ উদ্ধার হলে মোড় ঘুরবে আর্থিক খাতের’

রহমান আজিজ, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:৪৭

যা-তা পরিমাণ অঙ্ক নয়, কোটি কোটি টাকা। শত শত ভরি সোনা। বিদেশি মুদ্রাও। তার ওপর মাদক-মদ, বিয়ার, ইয়াবা। র‌্যাবের অভিযানে মিলেছে এসব। এত এত নগদ টাকা কারও বাড়িতে থাকতে পারে সেটিই তাজ্জব করছে সাধারণ মানুষকে। বিস্মিত হচ্ছেন আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞরাও। এই স্তরের মানুষের কাছে এত টাকা! আরও বিপুল টাকা নানা স্তরে লুকিয়ে আছে বলে তাদের ধারণা। এই অভিযান চলতে থাকলে এমন আরও বিপুল টাকা উদ্ধার হতে পারে বলে মত তাদের। আর তা দেশের আর্থিক খাতের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।

নিজ দল আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোতে শুদ্ধি অভিযানের আভাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে বার্তা পাওয়ার পর অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঢাকায় অবৈধভাবে বিদেশি আদলে গজিয়ে ওঠা ক্যাসিনো দিয়ে শুরু। ধরা পড়েন যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা খালেদ ভূঁইয়া।

এরপর সরকারি দলের নেতাদের মদদপুষ্ট প্রভাবশালী ঠিকাদার জি কে শামীম। গতকাল অভিযান চালানো হয় ঢাকার স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই নেতার বাসায়। তারা হলেন গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপন। আপন দুই ভাই তারা।

গতকালের অভিযানসহ আগের দুটি অভিযানের বড় মিল নগদ টাকা জব্দ হওয়া। যেনতেন পরিমাণ নয় কোটি কোটি টাকা। এসব টাকা এসেছে ক্যাসিনোর জুয়ার আসর থেকে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানে গিয়ে র‌্যাব দুই ভাইয়ের অবৈধ টাকার ভান্ডারে হানা দেয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দু-একটি অভিযান দিয়ে এর সফলতা বিফলতা নির্ণয় করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে। এটি এরই মধ্যে প্রমাণিত। তাই এই অভিযান ধারাবাহিক চালিয়ে নিতে হবে। আর এটি অব্যাহত থাকলে সামনের দিনে এমন আরও বিপুল নগদ টাকা বেরিয়ে আসবে। উদ্ধারকৃত বিপুল টাকা দেশের আর্থিক খাতের মোড় পর্যন্ত ঘুরিয়ে দিতে পারে বলে মনে করেন তারা।

সরকার বর্তমানে যে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে সেটি অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি মনে করেন, প্রশাসনের এ অভিযান চলমান থাকলে অনেক অবৈধ অর্থ উদ্ধার সম্ভব হবে।

মির্জ্জা আজিজুল বলেন, ‘যেহেতু এসব অবৈধ টাকা, এজন্য এ অর্থ কখনোই ব্যাংকিং চ্যানেলে আসত না। এটি এক পর্যায়ে বিদেশে পাচার হবে। তাতে দেশের কোনো লাভ নেই। বরং উদ্ধারকৃত অর্থ ও স্বর্ণ সরকারের কোষাগারে জমা হবে, সেটি দেশের আর্থিক খাতের জন্য ভালো।’

অন্যদিকে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর অভিযানে উদ্ধারকৃত টাকাকে সামান্য হিসেবে দেখছেন। এই অর্থনীতিবিদের মতে, বেশিরভাগ অর্থ আগেই বিদেশে পাচার হয়ে গেছে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘অবৈধ অর্থ অর্জনকারীরা কখনোই অর্থ দেশে রাখে না। পুলিশ এবং র‌্যাবের অভিযানে সে অর্থের মধ্যে সামান্য কিছু টাকা উদ্ধার হচ্ছে। অবৈধ এসব অর্থের কিছু টাকা অপরাধীরা ব্যাংকে রেখেছে। আর বেশির ভাগ অর্থ আগেই বিদেশে পাচার করেছে।’

দেশে সুশাসন না থাকায় এমনটাই হয়েছে মন্তব্য করে করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আগে থেকে যদি দেশে সুশাসন নিশ্চিত করা যেতো তবে সরকারকে দুঃশাসন দেখাতে হতো না। সুশাসন থাকলে একজন পিয়ন শতকোটি টাকার মালিক হয় কী করে?

র‌্যাব-পুলিশ অ্যাকশন প্রথা অবলম্বন করে অপরাধী ধরছে, আর দুদক-এনবিআর তদন্ত করবে জানিয়ে এই বিশ্লেষক আরও বলেন, ‘এখন দেশে যে অভিযান হচ্ছে এটি বিছিন্ন ঘটনা। তবে সরকার যদি বড় পরিকল্পনা নিয়ে পলিটিক্যাল বা বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তবে সেটি দেশের জন্য নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ।’

(ঢাকাটাইমস/২৫সেপ্টেম্বর/আরএ/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :