মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলায় ভূমিকা রাখতে পারে বাংলাদেশ

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
  প্রকাশিত : ২২ নভেম্বর ২০১৯, ০৮:৩২
অ- অ+
ফাইল ছবি

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলায় বাংলাদেশেরও কাজ করার সুযোগ আছে৷ আর এটা করতে গিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে তেমন প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন না বিশ্লেষকরা৷

ওআইসির পক্ষে গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের ইন্টারন্যালনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)-তে যে মামলা করেছে তার শুনানি হবে নেদারল্যান্ডসের হেগে, আগামী ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর৷ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এই মামলায় সেখানকার সামরিক জান্তার পক্ষে শুনানিতে অংশ নিতে ওই সময়ে হেগে যাচ্ছেন অং সান সূ চি৷ অন্যদিকে আর্জেন্টিনায় সরাসরি সূ চি'র বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-র তদন্তও শুরু হচ্ছে৷ সব মিলিয়ে মিয়ানমার এখন রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে চাপের মুখে রয়েছে৷

বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে সব সময়ই মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে গুরুত্ব দিয়েছে৷ আর এটাকে বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সমস্যা মনে করে না৷ এটাকে মিয়ানমারের সমস্যা এবং আন্তর্জাতিক সমস্যা মনে করে৷ তাই আইসিজেতে মামলা হওয়ার পর বাংলাদেশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে৷ কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই অবস্থানের মধ্যেও বাংলাদেশ ভূমিকা রাখতে পারে৷ মামলায় তথ্য-প্রমাণ ও ডকুমেন্ট দিয়ে সহায়তা করতে পারে৷

আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘এটা পরিষ্কার যে, আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে সেখানে বাংলাদেশ কোনো পক্ষ নয়৷ কিন্তু মিয়ানমারে যে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার অনেক প্রমাণ, তথ্য এবং ডকুমেন্ট বাংলাদেশে আছে৷ মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে সেখান থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে ১০ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে৷ তারাই নির্যাতন, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বড় প্রমাণ৷ তাই বাংলাদেশ এখন তথ্য ও ডকুমেন্ট দিয়ে সহায়তা করতে পারে৷’

মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে৷ আমরা রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি৷ আর সেখানে যে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে তার প্রমাণ আমাদের হাতে আছে৷ মানবাধিকার ও নৈতিক দিক দিয়েও আমাদের সেই প্রমাণ তুলে ধরার দায়িত্ব আছে৷ আর এটা তো আমরা সরাসরি দেবো না৷ তাই মিয়ানমার অফিসিয়ালি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রশ্ন তুলতে পারবে না৷’

এদিকে মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক সামরিক এটাসে ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহিদুল হক বলেন, ‘এটাই বাংলাদেশের মোক্ষম সময়৷ আমরা তো রোহিঙ্গা সংকটের কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি৷ আর ওআইসি'র সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে আমরা ওআইসির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের তথ্য-প্রমাণ দিতে পারি৷ সবচেয়ে বড় কথা হলো, বাংলাদেশ ফ্রন্টলাইন স্টেট৷ এখানে অনেক তথ্য-প্রমাণ আছে৷ শুধু এবারের নয়৷ এর আগেও রোহিঙ্গারা এসেছে৷ এখানে আইসিসিও কাজ শুরু করবে৷ আগে আরও অনেক তদন্তের কাজ হয়েছে৷’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কিন্তু রাষ্ট্র হিসেবে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কখনোই অবস্থান নেয়নি৷ বাংলাদেশ চেয়েছে তারা রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাক, সুসম্পর্কও থাকুক৷ তাই মামলা হওয়ার পরও বাংলাদেশ সতর্কভাবে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে৷ কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশ ওআইসি'র মাধ্যমে গাম্বিয়াকে সহায়তা করতে পারবে না, তা নয়৷ এবং এটা করা উচিত৷’

এদিকে রোহিঙ্গা নির্যাতন ও গণহত্যার ব্যাপারে আইসিসি বাংলদেশে অফিস খুলে তদন্ত শুরু করবে৷ তার প্রক্রিয়া এখন চলছে৷ তদন্তের অনুমতি পাওয়ার পর এ নিয়ে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে একটা চুক্তি করেছে৷ তাতে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ৷

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমারের রাখাইনে নির্যাতনের শিকার হয়ে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে৷ এর আগেও এসেছে৷ সব মিলিয়ে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে আছে৷’সূত্র: ডয়চে ভেলে

(ঢাকাটাইমস/২২নভেম্বর/জেবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
জামালপুরে ধর্ষণ মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন 
চলচ্চিত্র অনুদান কমিটি থেকে পদত্যাগ করলেন অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম
পদ্মা ব্যাংকের ১২৮তম পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত
মায়ের লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষা কেন্দ্রে দুই শিক্ষার্থী 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা