মেলায় বই টানাওয়ালা

তানিয়া আক্তার, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৯:৫১

এদের কি বইয়ের ফেরিওয়ালা বলা যায়? নাকি ঠেলাওয়ালা? এদের একজন বলল, তারা বই টানে। তাহলে তো বই টানাওয়ালা বলা যেতে পারে তাদের। তারা সবাই বয়সে কিশোর। বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলায় বই টানাওয়ালাদের দেখা যায় আকছার।

যত সহজে এই শিশুদের বই টানাওয়ালা তকমা দিয়ে দিলাম, ততটা সহজ নয় তাদের কাজ। ফুটপাত আর মেলা প্রাঙ্গণের অমসৃণ জায়গায় তাদের বিচিত্র বাহনটি ঠেলে নিয়ে যেতে কী কষ্ট, সেটি সহজেই দৃশ্যমান। তাদের ঘামে-শ্রমে স্টল হয়ে বই পৌঁছায় পাঠকের হাতে।

ওপরের দিকটা খোলা চারপাশ ঘের দেওয়া কাঠের চৌকোণো একটি নিচু পাটাতন তাদের বাহন। এর নিচে বিয়ারিং লাগানো। কোনো কোনোটিতে ছোট ছোট চাকা। এর মধ্যে বই বোঝাই করে বাহনটি ঠেলে নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেয় তারা। বিনিময়ে তারা প্রতিবার ৪০ থেকে ৬০ টাকা পায়।

বইমেলায় পাঠক-দর্শনার্থীদের নিরুপদ্রব যাতায়াতের জন্য দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি পর‌্যন্ত রাস্তায় সব ধরনের যানবাহন বন্ধ। প্রকাশক-বিক্রেতাদের বই ও অন্যান্য পণ্য আনা-নেওয়ার একমাত্র ভরসা এই টানাওয়ালা।

এই বই টানাওয়ালাদের অক্ষরজ্ঞান নেই কারও কারও। শৈশবের গণ্ডিও পেরোয়নি অনেকে। তাদের একজন শুভ। দোয়েল চত্বর থেকে বই টানে সে। এবার প্রথমবারের মতো বই টানছে। অনভিজ্ঞ শুভ অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে বলে খুব বেশি বই টানতে পারে না। ফলে তার আয়ও কম।

শুভ জানায়, দোয়েল চত্বর থেকে মেলা অব্দি প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার বই টানতে পারে সে। প্রতিবার সে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পায়।

শুভর বাবা-মা কাজ করে একটি খাবার হোটেলে। ঢাকা টাইমসকে শুভ বলে, ‘আমি ওদের লগেই বাসন ধোয়ামোছার কাজ করি। অহন বন্ধু-বান্ধবদের দেইখা মেলায় বই টানতে আইছি। দুই ক্লাস পর্যন্ত পড়ছি। ম্যাডাম খালি মারে। এর লাইগা পড়ালেখা ছাইড়া দিছি। মেলায় বই টানতে ভালই লাগে। অনেক মজা করি আমরা।'

শুভ চেয়ে বেশি করিৎকর্মা কিশোর রাহাত। আয়ও বেশি। প্রতিদিন তার বাহনে সাত-আটবার বই টানতে পারে। প্রতিবার ৬০ থেকে ৭০ টাকা পায় সে। কথা বলারও ফুরসত নেই তার। চটজলদি টানায় ব্যস্ত সে।

আরেক বই টানাওয়ালার দেখা মিলল সোহরাওয়ার্দী প্রাঙ্গণে। বই নিয়ে যাচ্ছে কোনো প্রকাশনীর স্টলে। শৈশবের গন্ডি পেরোয়নি এখনো। তার বাহনটি ভরপুর বইয়ে। কোনোরকম ধাক্কা দিয়ে দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে গন্তব্যে। এত ব্যস্ততার মাঝে কথা বলতে রাজি নয় সে।

এই কাজে শিশু-কিশোরের পাশাপাশি দেখা মিলল তরুণদেরও। তারা শুধু কাঠের বাহনে নয়, কাঁধে কিংবা মাথায় তুলেও বই নিয়ে যায় বাংলা একাডেমি কিংবা স্টলে। তাদের বেশির ভাগের বাসস্থান পুরান ঢাকায়।

যেসব কিশোর বইমেলা বই টানছে, তারা পুরো সময়টাতেই এই অস্থায়ী কাজ যেমন করে, তেমনি কাঠের সেই বাহনটি নিয়ে খেলায় মত্ত হয়ে ওঠে। খেলা আর কাজ পাশাপাশি চলছে তাদের।

(ঢাকা টাইমস/১১ফেব্রুয়ারি/টিএটি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :