একগুচ্ছ ভালোবাসার কবিতা...

আমার আমি
মোসলিমা খাতুন
আমি কোনোদিনও তোমার আমি হতে পারিনি
তাতে কি! আমি তো ভেবেছি-
আমি তো ভেবেছি তুমি আমার দিনরাত্রি
সুনির্মল আকাশ, আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাটি
তুমি পূর্ণিমা চাঁদ অনন্ত ছায়ালোকে সূর্যের সাত রঙ
তুমি সন্ধ্যার মতো নির্জন আমার একাকীত্বের বোধ
তুমি আমার অবসর ক্লান্ত দুপুরে পশ্চিমের রোদ
তুমি আমার শান্ত ঝিল শাপলাফোটা বিকেলের
তুমি মেঠো পথ ধু-ধু প্রান্তর শ্যামল মাঠ ফসলের
তুমি আমার কার্তিকের ভোর শিশিরভেজা ঘাস
তুমি আমার প্রিয় পাহাড় উত্তাল সাগর গতির আশ্বাস
ঝিনুক থেকে মুক্তা কুড়ানো বালিয়াড়ি উপকুল
তুমি মেঘমল্লার মেঘনাদ ঝুম বৃষ্টিফোটা নন্দিত কলরোল
তুমি আমার চৈত্রের খররোদ চৌচির ভূমির দীর্ঘশ্বাস
তুমি কিশলয় বৃক্ষ পাতা গালিচা সবুজ ঘাস
তুমি বটের ছায়া উৎসব দিন নিদাঘ দুপুরবেলা
তুমি কালবৈশাখী শেষ অবসান লণ্ডভণ্ড ঝড়ের
তুমি আমার ঘর, ঘরের ছাদ কোনো কক্ষ নিভৃতের
তুমি আমার রন্ধনশালা খুন্তির লড়াই ঝাঁঝ পেঁয়াজের
তুমি আমার প্রচণ্ড শীত সবুজ চা লেবু শরবত গরমের
তুমি আমার আরাধনা বঞ্চনা না পাওয়ার বেদনা
বুকের ভিতর জমিয়ে রাখা না বলা অনেক কথা
তুমি আমার অবিরত অশ্রু নয়নকুলে ঝরা ঝর্ণা
তুমি আমার পাকা চুলে বিলি কাটা হেঁয়ালি আঙুল
তুমি আমার দুঃখে সান্ত্বনা জননীর আশীর্বাদ নিটোল
তুমি আমার প্রিয় রিস্টওয়াচ্ দেওয়ালের পেণ্ডুলাম
তুমি আমার অচেনা প্রিয় সোনালি মাছ-এক্যুরিয়াম
তুমি আমার হৃৎপিণ্ড ফুসফুস আমার শ্বাস প্রশ্বাস
তুমি আমার প্রেম দ্রুপদী পুরুষ অতনু উদ্ভাস
তুমি আমার ভোরের স্বপ্ন কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার
তুমি দীর্ঘ-দীর্ঘ পথ অদেখার তৃষ্ণা পিয়াস আমার
তুমি আমার প্রিয় পাখি ফুল, বাগানের সৌরভ
তুমি শিশুর মুখের অমলিন হাসি হৃদয়ের অনুভব
তুমি আমার সূর্যোদয় কপালভাতি প্রাণায়াম,
তুমি আমার প্রচণ্ড রাগ অভিমান বিপ্লব অবিরাম
তুমি আমার স্বর্গ-নরকের চাবি দুই দিকে দুই বাহু
তুমি আমার বুকের ভিতর উথাল পাথাল কষ্ট রাহু
তুমি আমার প্রতীক্ষা আকণ্ঠ তৃষ্ণা নিবারণী জল
তুমি অধীর অপেক্ষা পথের শেষে নতুন কোনো বল
তুমি আমার আশা সফল প্রসবের অবাধ আনন্দ
আমার ঘুম-জাগরণের স্বপ্নছোঁয়া তুমি নব ছন্দ
তুমি আমার ঘর-বারান্দা বাহিরে নিকানো উঠান
তুমি আমার সবচেয়ে প্রিয় কবিতা গল্প অল্প গান
তুমি আমার পক্ষ-বিপক্ষ পূর্ণ চাঁদের গ্রহণ
তুমি আমার গ্রীষ্ম বর্ষা শীত বসন্তে প্রিয় আচ্ছাদন
তুমি আমার অসুখ গভীরতর ক্লান্তি অবসাদ
তুমি আমার প্রথম প্রেমের প্রথম কাঁপা হাত
তুমি আমার গোপন খাতায় কলমী প্রেমালাপ
তুমি আমার ব্যর্থ প্রেমের লুকানো অশ্রুপাত
তুমি আমার অর্থ বিত্ত-চিত্ত চয়িত মান-মর্যাদা সব
তুমি আমার হৃদয়হরা জগৎজোড়া বিস্তৃতি বৈভব।
---------------
রূপকথার আকাশ
মৃত্তিকা মুক্তা
নীল, ধবল ও ধুসর রঙা মেঘের দল
ডেকেছিল আমায়, বহুবার
আমি বিরাগভাজন,
উদাসীন,
স্তব্ধ
স্তব্ধতার আগল খুলতেই
আবারও ডাকলো স্নেহসিক্ত নরম
শোনালো- স্বপ্নবুননের কথা
গল্পের রাজপুত্রের কথা,
সেই রাজপুত্রের আছে পঙ্খীরাজ ঘোড়া
রাজপুত্র পাড়ি জমায় সাত সাগর তেরো নদী,
ভাঙলো জড়তা
কাটলো আলস্যি
বললাম, সেই গল্পের রাজকন্যা যদি আমি হই
আকাশ হেসে বললো, হও ক্ষতি কী?
রাজকন্যার শিথানে রূপার কাঠি
পৈথানে সোনার কাঠি,
রাজকন্যা উদ্ধারে সাত সাগর তের নদী
পাড়ি দিবে কি রাজপুত্র?
আকাশ হেসে বললো হ্যাঁ... হ্যাঁ
দেবে দেবে,
রাজমহল থাকবে
রাজমহলের অন্ধকার দূর করতে
অর্হনিশ প্রজ্জ্বলিত হবে ঘৃতদীপ
ভোরের উম্মেষে বেজে চলবে সপ্তসুরী বীণা
আরও বললাম,
রঙিন রেশমি সুতোয় স্বপ্নবুননের নকশীকাঁথায়
এলোপাতাড়ি বয়ে যাবে কুমারী নদী
নদীতে থাকবে ঢেউ, ঝিনুক শৈবাল সোনারঙা মাছ
ঢেউয়ের শীর্ষে দুলবে চিরবন্ধ্যা সুখ
আনন্দ বিলাসী স্বপ্নেরা সকাল-বিকাল হাসবে
আলৌকিক, খিলখিল, নকশাকাটা।
বিশাল পিচ্ছিল আকাশ অবলীলায় সবকিছু মেনে নিয়ে
ডাকলো অবারিত... বশীকরণ মন্ত্রবলে বশীভূত
আমি বের হলাম
ঘর হতে
বারান্দা হতে
সজলমুখি
আহ্লাদী
ঠিক তক্ষুনি ঘোরলাগা বর্ষণ
ভিজিয়ে দিলো, করলো আদর
হলো প্রমোদ ভ্রমণ
ফুটলো পুষ্প, যৌনতা, মগ্নতা ও আকাক্সক্ষা
স্বপ্নের
গল্পের।
----------------
সমাজের আলোকবর্তিকা
নন্দিনী লুইজা
আজ বিপ্লবের জন্মদিন উনিশশত একাত্তর চার এপ্রিল
স্বাধীন দেশে জন্ম, স্বাধীনতার স্বাদ কতটুকু গ্রহণ করেছিস,
তা নাইবা জানলো বাংলাদেশ, তবে কিছু মানুষের মুক্তি-
জীবন বাঁচার পথে তুই অতন্দ্র প্রহরী হয়ে দাঁড়িয়ে আছিস।
কত মায়ের ঘরে সন্তানকে ফিরিয়ে দিয়েছিস হাসিমুখে,
তাদের আনন্দের অশ্রু বর্ষিত হোক, দোয়ায় আর দাওয়ায়।
রিক্ত হাতে যারা তোর কাছে এসেছে অসহায়, নিরুপায় হয়ে
কেউ তো ফিরে যায়নি, পূর্ণতা আর প্রাপ্তি না নিয়ে ঘরে।
তাই তো তোর কাছে মানুষের আশ্রয় এবং প্রশ্রয় সবসময়
জীবনের হিসাব-নিকাশ নাইবা মিললো তাতে দুঃখ কীসের,
মানুষগুলো মানুষের তরে, তাদের আবার ব্যক্তি জীবন কী
ব্যক্তি জীবনকে জলাঞ্জলি দিয়ে যারা, এ মুক্তির পথে হাঁটে
তাঁরাই তো বিপ্লব, তাঁরাই তো বিপ্লবী কমরেড জীবনযুদ্ধে।
তাদের, তুই একজন বারবার দেখতে পাই মুক্তির মশালে-
বিপ্লবীকণ্ঠে বেজে উঠুক চারিদিক, আলো, বাতাসমুক্ত
স্বাধীন বাংলাদেশের সত্যের পতাকা পতপত করে উড়ুক।
--------------------
কথাকাব্য
মাহমুদ নজির
কথার ভেতর থেকে
বেরিয়ে আসে হাজার কথা
শব্দ ও সুরের ঝংকার।যে কথা লুকিয়ে থাকে বুকের গভীরে
সে কথাও উতরে ওঠে ভিড় ঠেলে
উন্মাতাল হাওয়ার জালে
ভাসতে থাকে হৃদয়ের খোলা জানালায়।রঙধনু আকাশ ছুঁয়ে বিরামহীন
ঢেউ তোলে অশান্ত বোধের নগরে,
চমকে দিয়ে হয়ে যায়
অনিন্দ্য সুন্দর, ভালোলাগা, স্নিগ্ধ-মধুর।কথা তাই কথা থাকে না আর
কথাগুলো শিল্প হয়
মুগ্ধতায় পরিপূর্ণরূপে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে
গল্প, গান, নান্দনিক ছন্দ ও কবিতায়।অনন্ত কথার ফুলঝুড়ি নিয়ে
প্রাত্যহিক গন্তব্যের পথে হাঁটি
চেনা সেই তুমি ভুল ভেবে
ক্রমে ক্রমে হয়ে যাও শুধুই অচেনা।
-----------------------

মন্তব্য করুন