হৃৎপিণ্ডের হৃদয় 

নেয়ামত ভূঁইয়া
 | প্রকাশিত : ০১ মে ২০২৪, ১২:১৮

হৃৎপিণ্ড আর হৃদয়ের দূরত্ব-নৈকট্য

মাপতে মাপতে অবসন্ন জীবন হলো খানখান,

খোঁজ মেলে না, কোথায় হৃদয়ের স্থান!

কোথায় হৃদয়ের বাস্তুভিটা,

কোথায় হৃদয়বান?

কোথায় হৃদয়ের অনুরাগ

কোথায় হৃদয়ের উষ্ণতা

হৃদয়ঘটিত মান-অভিমান?

হৃৎপিণ্ড যদি হয় দেহেরই

অন্যতম অঙ্গের নাম!

তাহলে হৃদয় কোথায় থাকে,

সে কি এখনো খুঁজে মরে

তার আশ্রয় নিরলস, অবিরাম?

হৃদয় কি তবে বাস্তহারা?

কোনো বস্তিতেই মিলে না কি তার

স্বস্তির আশ্রয়?

অনাদরে উপেক্ষায় তিলে তিলে

হচ্ছে কি হৃদয়ের অবক্ষয়?

হৃৎপিণ্ড তো কেবল দেয়

শ্বাসের যোগান,

ও কেবল শ্বাস-প্রশ্বাস

আমদানি-রপ্তানির বিপণী বিতান।

প্রাণীর প্রাণকে বাঁচিয়ে রাখাই তার

নির্ধারিত কর্ম,

প্রাণশক্তি চালান করাই তার কাজ;

নিয়তি-নির্দিষ্ট নিতান্ত ধর্ম।

যদি হৃৎপিণ্ডের ক্রিয়া বন্ধ হয়;

প্রাণের অনিবার্য বিলয়।

তবে প্রাণহীন মানুষেরও প্রাণ হয় অবিনশ্বর,

যদি তার হৃদয়ের সহমর্ম

মানুষের অন্তরে বাঁধে দরদের ঘর।

হৃৎপিণ্ড থাকলেই কি হৃদয় থাকে?

হৃৎপিণ্ড কি হৃদয়ের মর্মকে

দৃঢ় আলিঙ্গনে ধরে রাখে?

সকল জীবন্ত প্রাণই বুঝি হৃদয়বান?

তাই এত খুনোখুনি, রক্তাক্ষয়ী সামরিক অভিযান,

দখলি অভ্যুত্থান?

প্রেমের কাহিনীর বদলে

সোনার আখরে লিখা হয় সেনাবাহিনীর বিজয়-উপাখ্যান,

পেয়াদাদের জুটে যায় প্রজা-পীড়নের

অনন্য সম্মান।

বোমা-বারুদের ঘায়ে রক্ত-ফোরাতে যখন

ভাসে কোনো জনপদ,

তখন দেখি না হৃৎপিন্ডের কোনো চর্চা;

হিমাঙ্কে ঘুমায় তখন মানবিকতার পারদ।

ভুখা-নাঙ্গা মানুষ যখন সভ্যতাকে করে বিদ্রুপ-ভ্রূকুটি,

তখনও হৃৎপিণ্ড কাটায় অবকাশ;

শ্রান্তি বিনোদন ছুটি।

ফেলানীর নিথর দেহ যখন ঝুলে থাকে

হিংসার কাঁটা তারে,

শতধিক সেই হৃৎপিণ্ডের মানুষেরে।

ধর্ষণের সেঞ্চুরি যখন সগর্বে হয় উদযাপন,

তখন হৃৎপিণ্ড করে সেই কৃতিত্বের সনদ বণ্টন।

লুণ্ঠিত হয় যখন মানুষের জন্মগত অধিকার,

তখন হৃদয়বান ত্রাণকর্তা ছাড়া

কে করে আর বিপন্ন মানুষকে উদ্ধার?

হৃদয়হীন হৃদপিণ্ডের দৌরাত্ম্যে যখন

সুস্থ জীবনের প্রাণ ওষ্ঠাগত,

জীবনের স্বাভাবিক গতি অতি বেগতিক,

হৃদয়বান হৃদপিণ্ডের খোঁজে

পথে পথে ঘুরে মরে

আধুনিকতার শীর্ণ কোনো ললিত পথিক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :