মুক্তির তিয়াসা

অনেক কথাই বলার ছিল, হয়নি বলা,
অনেক পথেই চলার ছিল, হয়নি চলা।
কত্তো চাওয়ার পুঞ্জ ছিল, হয়নি পূরণ,
অনেক ভাবই সুপ্ত ছিল, হয়নি স্ফুরণ।
অনেক প্রেমের আবেগ ছিল, হয়নি প্রকাশ,
প্রকাশ পাওয়া আকুতিরও ঘটলো বিনাশ।
অনেক আশার বীজ বুনেছি, হয়নি সফল,
শেষ সোপানে হলো হত, বা বিহ্বল।
নানান জাতের বন্ধু ছিল সুখের দিনে,
সুদিন গেলো তাই পালালো দূর গহীনে।
অনেক ফাগুন পার করেছি, ফুল দেখিনি,
ধোঁকার পরও ধোঁকা খেয়ে; পাঠ শিখিনি।
মন বিলিয়ে বিনিময়ে মন মেলেনি,
কারো মনে অনুরাগের ছাপ ফেলেনি।
নানা রঙের স্বপ্ন ছিল চোখের তারায়,
স্বপ্ন সে-সব গেল ভেসে অশ্রু ধারায়।
মনে ছিল অনেক যুদ্ধজয়ের আশা,
যুদ্ধের আগেই ফুরায় অসির ধার-ভরসা।
বর্ম খসে ধুলো-কাদায় পড়ে লুটে,
হারের কলঙ্কই আমার ভাগ্যে জোটে।
আকাশ ছোঁয়ার আশা ছিল জীবনটা ভর,
মইয়ের সোপান উড়িয়ে নিলো বৈশাখী ঝড়।
ঘূর্ণিঝড়ে সকল আশার গুড়ে বালি,
ছিন্ন ভিন্ন জীবনকে দেই জোড়া-তালি।
তালির পরে তালি মেরে চালাই জীবন,
দশা দেখে হাত তালি দেয় দস্যু ক’জন।
দস্যুর হাতে তুলে দিয়ে গোলার চাবি,
খাজাঞ্চিটা ফিরে পাবার তুলছি দাবি।
দস্যুদল কি আমার দাবি তুলছে কানে?
ভাসছে ওরা নারকীয় সুখের বানে।
আশা ছিল মুক্তি পাবো স্বাধীন হলে,
স্বাধীন হলাম; মুক্তি গেল রসাতলে।
আশা ছিল বলবো কথা মুক্তবাকে,
যেমন কথা কবুতরের বাকুম বাকে।
যেমন করে ঝর্ণা ঝরায় কথার মালা,
সাগরজলে কথা ফোটায় ঢেউ উতলা।
যেমন ফোটে সুরের কথা পাখির গলায়,
যেমন কথা ঝরে বৃষ্টি এক পসলায়।
যেমন করে জ্যোৎস্না ঝরায় চাঁদের কথা,
কুলু কুলু কথায় যেমন নদ বহতা।
পরাণ খুলে কথা বলার সেই আকুতি,
বুকের চিতায় দেয় নিরুপায় আত্মাহুতি।
সোনার স্বদেশ গড়তে নিজের মনের মতো,
কত ভাইয়েরে বুক হয়েছে বুলেট ক্ষত!
কত বোনকে হতে হলো লজ্জাহারা,
কত জীবন করলো বরণ পাষাণ কারা!
তবুও আমার মাতৃভূমির করুণ দশা,
মিটলো না তার মুক্তি লাভের তাপ-তিয়াসা।
আমার স্বদেশ ভোগে নানান হাহাকারে,
আশায় আছি, আসবে সে-বীর মা’র উদ্ধারে।
আমার এ দেশ আমার হবে মনের মতো,
কালের চক্রে ঘটবে তা-ই; যা শাশ্বত।

মন্তব্য করুন