ভারতীয়দের ইসলাম বিদ্বেষী মন্তব্যে ক্ষুব্ধ আমিরাতের রাজকুমারী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৪ এপ্রিল ২০২০, ০৯:০০| আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২০, ০৯:০৭
অ- অ+

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইতে ভারতে মুসলিমদের অন্যায়ভাবে আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে বলে অর্গানাইজেশন ফর ইসলামিক কোঅপারেশন বা ওআইসি প্রকাশ্য অভিযোগ এনেছে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বরাও কোনো কোনো ভারতীয়র মুসলিম-বিদ্বেষী মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সরব হয়েছেন।

এই পটভূমিতে ভারতকে কূটনৈতিক স্তরে 'ড্যামেজ কন্ট্রোলে' নামতে হয়েছে – পাশাপাশি ভারতে মন্ত্রী ও নীতিনির্ধারকরাও দাবি করছেন মুসলিমদের জন্য ভারতের চেয়ে ভাল দেশ আর হতে পারে না।

গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরাত যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সেদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মানে ভূষিত করে, পাকিস্তানের প্রতিবাদে তারা কর্ণপাত করেনি। সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানও ভারতে এসে নরেন্দ্র মোদিকে 'বড় ভাই' বলে সম্বোধন করেন।

সার্বিকভাবে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক ও স্ট্র্যাটেজিক ঘনিষ্ঠতা যে ক্রমবর্ধমান, সেটাও কোনও নতুন খবর নয়। তবে চলমান করোনাভাইরাস সঙ্কটের সময় সেই ঘনিষ্ঠতাতেই ফাটলের আভাস দেখা যাচ্ছে।

আমিরাতের এক রাজকুমারী হেন্দ আল কাসিমি সম্প্রতি সেদেশে কর্মরত এক ভারতীয় হিন্দুর বেশ কিছু আপত্তিকর ও মুসলিম-বিরোধী টুইটের স্ক্রিনশট দিয়ে তাকে হুঁশিয়ারি দেন, 'যেদেশে রুটিরুজি কামাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ালে সেটা কিন্তু উপেক্ষা করা হবে না!'

পরে এক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'ওই ব্যক্তি যেভাবে ইসলামকে নিয়ে বিদ্রূপ করেছে এবং ১৪০০ বছরের প্রাচীন এক ধর্মকে গাধাদের ধর্ম বলে গালি দিয়েছে তা মেনে নেওয়া যায় না। হ্যাঁ, আমিরাতকে গড়ে তোলার পেছনে ভারতীয়দের অবদানকে আমরা সম্মান করি, তাদেরকে পরিবারের অংশ বলে মনে করি – ফলে আমি লজ্জিত যে একজন ভারতীয় এমন কথা বলতেও পারেন।'

এরপর সৌদি আরবের প্রভাবশালী ইসলামী ব্যক্তিত্ব শেখ আবিদি জাহারানিও টুইট করেন, মধ্যপ্রাচ্য ও গাল্ফে কর্মরত যে উগ্রবাদী ভারতীয়রা ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন তাদের অবিলম্বে দেশে ফেরত পাঠানো দরকার।

ইসলামী দেশগুলোর জোট ওআইসির মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকেও ১৯ এপ্রিল টুইট করা হয়, কোভিড-১৯ ছড়ানোর জন্য ভারতে যেভাবে মুসলিমদের ঢালাওভাবে দায়ী করা হচ্ছে এবং মিডিয়াতে তাদের নেতিবাচকভাবে তুলে ধরা হচ্ছে তা চরম নিন্দনীয়।

ইসলামী বিশ্বের দিক থেকে এই লাগাতার আক্রমণের মুখে ভারতকেও এখন আত্মপক্ষ সমর্থনে নামতে হয়েছে। ভারতে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের প্রধান ঘায়োরুল হাসান রিজভি বিবৃতি দিয়ে বলেন, 'ইন্দোনেশিয়ার পর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মুসলিম থাকেন যে দেশে – সেই ভারতে তারা সম্পূর্ণ নিরাপদ। এখানে তারা নামাজ-রোজা থেকে শুরু করে সব ধর্মীয় আচার নির্বিঘ্নে করতে পারেন, যা সিরিয়া-ইরাক-আফগানিস্তানেও ভাবা যায় না। আমি তো বলব, হিন্দুস্তান মুসলমানদের জন্য এক জান্নাত।' ভারতের ক্যাবিনেট মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাকভিও ঠিক একই সুরে বক্তব্য দেন।

আর ওদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভারতের রাষ্ট্রদূত পবন কাপুর সে দেশে থাকা ভারতীয়দের মনে করিয়ে দেন, ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য করা ভারতের নৈতিকতা ও আইনের পরিপন্থী। সেই সঙ্গে কোবিড-১৯ কোনও জাতি-বর্ণ-ধর্ম দেখে আঘাত হানে না, প্রধানমন্ত্রী মোদির এই বক্তব্যও রিটুইট করেন তিনি।

ভারতের সিনিয়র সাংবাদিক রাহুল সিং মনে করছেন, ইসলামী দেশগুলোর ওই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানোর আসলে সঙ্গত কারণ আছে। যখন এতগুলো মুসলিম দেশ ভারতের মুসলিমদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাতে আমাদের সত্যিই বিচলিত হওয়া দরকার। আর এটা তো শুধু করোনাভাইরাস নিয়েই নয়, এই পরিবেশটা ধীর ধীরে গড়ে উঠেছে – তাদের পিটিয়ে মারা হয়েছে, বিফ নিয়ে যাচ্ছে সন্দেহে রাস্তায় আটকানো হয়েছে।" এই ঘটনাগুলো তো আমরা অস্বীকার করতে পারি না।

ভারতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে যে ইসলামোফোবিয়ার ঝড় শুরু হয়েছিল, উপসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের অনেক বন্ধু দেশও তা ভাল চোখে দেখেনি - এটা পরিষ্কার। সূত্র: বিবিসি

ঢাকা টাইমস/২৪এপ্রিল/একে

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ: টঙ্গীর তিন বিএনপি নেতাসহ ৪ জন বহিষ্কার
পশ্চিমবঙ্গের একই এলাকা থেকে নিখোঁজ ৫০০ বিবাহিত তরুণী!
রপ্তানি বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য জাপানি সহায়তায় পরীক্ষাগার নির্মাণ হবে
ঝিনাইদহে সুদীপের মৃত্যু ঘিরে রহস্য
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা