এমন আর একটা কোথায় পাবো, যাকে বলবো এটা তোমার মতো!

শেখ মামুনুর রশীদ
  প্রকাশিত : ১০ মে ২০২০, ১৭:৩৩
অ- অ+

বিখ্যাত উর্দু কবি ও ভাষা সংগ্রামী নওশাদ নূরীর বড় মেয়ে শাবানা নাভেদের। তিনি তার মাকে নিয়ে অসাধারণ এই লেখাটি লিখেছেন। মূল লেখাটি উর্দুতে, এটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন কবি, গল্পকার ও অনুবাদক হাইকেল হাশমি। তিনি আবার নওশাদ নূরীর বড় ছেলেও বটে। শাবানা নাভেদের বড় ভাই।

ভাবছিলাম মা দিবসে অন্যদের মতো আমিও কিছু একটা লিখবো। সঙ্গে আমার আর আমার মায়ের একটা ছবিও জুড়ে দেবো। কিন্ত মনে হলো মাকে নিয়ে শাবানা নাভেদের এই লেখার চাইতে ভালো লেখা আমার পক্ষে সম্ভব না। তার এই কথাই যেন আমার মনের কথা, মনের ভাষা। বাবাকেও হারানোর পর মা-ই মাথার ছাদ হয়ে আমাদের চার ভাই বোনকে আগলে রেখেছেন।

শাবানা নাভেদ নিজেও তিন সন্তানের মা। যতোটুকু জানি, বাবাহীন সেই সন্তানদেরও ছাদ তাদের মা। আমার সন্তানেরও আসল ঠিকানা তার মা-ই। তাই মা দিবসে শাবানা নাভেদের এই লেখাটিই দিলাম। সময় থাকলে পড়ে দেখতে পারেন। হৃদয় ছুঁয়ে যাবে।

আমার আর আমার মায়ের হাত

‘এত স্নেহ আর মমতার হাত দুনিয়াতে অন্য কারোর নেই। এই হাত এক সময় আমাকে অনেক মেরেছে। জীবনের প্রত্যেকটি বাঁকে বাঁকে আমাকে সামলিয়ে ধরে রেখেছে। এমন ভাবে আঁকরে রেখেছে যে কোন দিনই পা পিছলে পড়ে যাইনি। এতো আদর ও ভালবাসার সাথে ধরে রেখেছে যেকোনো দিন হোঁচট খেয়ে পড়তে হয়নি। তার হাতে এমন জাদু আছে যা দুনিয়ার সব দুঃখ, দুর্দশা, ব্যথা, ব্যাধি- নিমিষেই দূর করে দেয়।

তার হাতে অজস্র নক্ষত্র আছে যা তিনি সারা জীবন আমাদের উপর বর্ষণ করেছেন। তার কাছে একটি চাঁদও আছে যা দুনিয়ার সকল মায়ের কাছে থাকে। আমার কাছ যথেষ্ট শব্দ নেই যে তার এই হাতের প্রশংসা করি। এই হাতের রেখায় আমাদের স্বপ্ন আঁকা আছে। এই হাতের কুচকানো চামড়ায় ওই সব দিন রাত্রি লুকিয়ে আছে, যা তিনি আমাদের জন্য অবলিলায় বিসর্জন দিয়েছেন। এই হাতে হাজার হাজার কাহিনী নিহিত আছে।

সত্যি কথা বলতে কি, এই হাত একটি পরিশ্রমী হাত। এই হাতই তার সন্তানদেরকে হালাল উপার্জন করতে শিখিয়েছে। এই হাতের কঠোর নিয়ন্ত্রণের জন্য আজ আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছি। চলছি, ফিরছি, পথ চলছি।

আম্মি জি, আপনাকে যত ভালবাসি দুনিয়াতে আর কাউকে এতো কাউকে ভালবাসি না। জানেন কেন? এই জন্য না যে আপনি আমার মা; আপনার কাছ থেকে শিখেছি যে ন্যায়ের পথে কিভাবে থাকতে হয়। চলতে হয়। আপনি বলেছেন, আমরা সব সময় সে সঠিক তা নয়, নিজেদের মাঝেও অনেক ভুল ভ্রান্তি থাকে। অন্যদের ভুল ভ্রান্তি না ধরে নিজের ভুল ভ্রান্তির দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত।

কিন্তু আম্মি জি, আমার একটি অভিযোগ আছে। কখনো যদি কারো বিরুদ্ধে কিছু বলতে চেয়েছি, আপনি তা না শুনে উল্টো আরও আমাকেই বকা দিয়ে বলেছেন, ‘নিজের ভেতরে দেখো কত খুঁত আছে’। আপনার এই কথা শুনে কেমন যেন মনচা খারাপ হয়ে যেত। অন্য ছেলে মেয়েদের মা কত মনযোগ দিয়ে তাদের বাচ্চাদের কথা শোনেন, আর আমার মা আমার একটা কথাও শুনতে চান না।

তবুও একটি উর্দু শের আপনার জন্য ‘এ্যসা কাহাঁ সে লাউঁ কে তুঝ সা কাহুঁ জিসে’ (এমন আর একটা কোথায় পাবো, যাকে বলবো এটা তোমার মতো) হে দুনিয়ার সব চেয়ে ভালো মা’।

মা দিবসে দুনিয়ার সব মায়ের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সন্তান সব, মায়ের দেখানো পথেই হাঁটুক।’

১০.০৫.২০২০

লেখক: কবি ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক।

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ অবশ্যই পুনর্বিবেচনার অবকাশ রয়েছে: আসিফ নজরুল
চট্টগ্রামে ‘ড্রোন নির্মাতা’ আশির উদ্দিনের পাশে তারেক রহমান
হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ
মাইকে ঘোষণা দিয়ে এনটিআরসিএতে ঢোকার চেষ্টা ফেল করা প্রার্থীদের, ভবনের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন-জলকামান
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা