টানাটানির পর কোভিড-১৯ চিকিৎসায় শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৩ জুন ২০২০, ২১:৩৫ | প্রকাশিত : ১৩ জুন ২০২০, ১৮:৩২

গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নাকি সর্বসাধারণের চিকিৎসা চলবে- এই সিদ্ধান্ত নিয়ে টানাটানির পর অবশেষে কোভিড-১৯ রোগী ভর্তি শুরু করেছে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।

কোভিড-১৯ তথা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী বাড়তে থাকার মধ্যে ঢাকার মহাখালীর ২৫০ শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতালটিতে শনিবার থেকে সংক্রামক এই ব্যাধির চিকিৎসা শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, আইসিইউসহ সব ধরণের প্রস্তুতি শেষ করলেও এতদিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিদ্ধান্তের অমিলের কারণে নির্দিষ্ট করে দেওয়া এই হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হচ্ছিল না।

তবে বৃহস্পতিবার থেকে কোভিড-১৯ রোগী ভর্তির বিষয়টি শনিবার ঢাকাটাইমসকে নিশ্চিত করেন শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের পরিচালক ফারুক আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘গত তিন দিন ধরে আমরা রোগী ভর্তি শুরু করেছি। এখন চিকিৎসা চলছে।’

হাসপাতালটির পরিচালক জানান, বর্তমানে একজন রোগী আইসিইউতে আছেন। ময়মনসিংহ থেকে আসা আরো একজন ভর্তি করা হচ্ছে। কয়েকজন চিকিৎসকও ভর্তি হওয়ার জন্য যোগাযোগ হয়েছেন।

এদিকে হাসপাতালের পরিচালক বৃহস্পতিবার থেকে রোগী ভর্তির কথা বললেও একটি সূত্র মতে শনিবার থেকে রোগী ভর্তি নেওয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে।

অন্যদিকে হাসপাতালটিতে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা শুরু করতে মন্ত্রণালয়ের অসযোগিতার বিষয়টি মানতে নারাজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. হাবিবুর রহমান খান।

তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পরিকল্পনা ছিলো নির্ধারিত হাসপাতালের একটি পরিপূর্ণ হবে তখন অন্যটিতে কার‌্যক্রম শুরু করার। কারণ সবগুলো একবারে ঝুঁকিতে ফেলা ঠিক হতো না। এছাড়া অন্য কোনো কারণ নেই।’

গত এপ্রিলের শেষের দিকে রাজধানী ও এর আশপাশের সরকারি-বেসরকারি যেসব হাসপাতাল করোনা আক্রান্ত রোগী চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করা হয় শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার তার একটি।

তার আগেই হাসপাতালটিতে পদায়ন করা হয় প্রায় অর্ধশতাধিক চিকিৎসক। অতিরিক্ত নার্সও পদায়ন করা হয়েছে। প্রস্তুত করা হয় আইসিইউ ও এইচডিইউ মেশিনপত্র। তবে চারদিকে যখন ভর্তি না হতে পারার আর্তনাদ তখন অজানা কারণে প্রস্তুতি নিয়েও বসে ছিলেন এখানকার চিকিৎসকরা। নির্ধারিত সব হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা হলেও এতদিন বন্ধ ছিল এটি। এ নিয়ে দায়িত্বরত চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্যদের ক্ষোভ ছিল।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতার কারণে এই হাসপাতালটিতে সব ব্যবস্থা থাকার পরও চিকিৎসা সেবা চালু করা সম্ভব হয়নি। শুরুর দিকে ২৫০ শয্যার এই বিশেষায়িত হাসপাতাল করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। দূরত্ব রেখে প্রত্যেকটি শয্যা স্থাপন করতে হয়েছে।

শুরুতে ৮ বেডের আইসিইউ এবং সমসংখ্যক হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ) প্রস্তুত করা হয়। তবে এইচডিইউর পাঁচটির যন্ত্রাংশ বিকল রয়েছে। যে কারণে আইসিইউ ও এইচডিইউ মিলে ১১ বেডে এখন রোগীর চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। আর সাধারণ বেডে সর্বোচ্চ দুইশ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে।

এছাড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থাও অনেকটা চালু করা হয়েছে। তবে করোনা পরীক্ষার ল্যাব প্রস্তুত থাকলেও কিট আসলে টেস্ট ‍শুরু করা যাবে বলে জানিয়েছেন ডা. ফারুক।

যে কারণে এত বিলম্ব

হাসপাতালটি করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভাবনা ছিল রাষ্ট্রের অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়ার। কিন্তু রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শুরু থেকেই সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার পক্ষে ছিল। এরমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমন চিন্তার বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে উঠে এলে এক পর্যায়ে পুরো কার‌্যক্রম সাময়িক বন্ধ থাকে।

হাসপাতালটিতে প্রেষনে আসা একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতায় মাঝে দুইদিন আউটডোর শুরু হলেও তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে কোনো কাজ ছাড়াই চিকিৎসকদের নিয়ম মেনে আসতে হয়। শুরুতে ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা থাকলেও সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পর তাও বন্ধ হয়ে যায়। অথচ কাজ ছাড়া ঝুঁকি নিয়ে তাদের প্রতিদিন আসতে হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শনিবার ভর্তি কার‌্যক্রম শুরু হলেও মাঝে নতুন স্বাস্থ্য সচিবের করোনায় আক্রান্ত স্ত্রীকে আনার কথা ছিল। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তাকে চিকিৎসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ায় শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভারে আনার কথা বলা হয়। তখন চিকিৎসকসহ সবাইকে সচিবের স্ত্রীকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়ার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে কিছুটা সুস্থবোধ করায় তাকে আর আনা হয়নি।

তবে এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সরাসরি উত্তর না দিয়ে হাপসাতালটির পরিচালক বলেন, ‘সে তো অনেক আগের কথা। এখন তো সবাই ভর্তি হতে পারবেন। সবাই জেনে গেলে সব সিট পূরণ হয়ে যাবে। কারণ রোগীর তো অনেক চাপ।’

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও তার সাড়া মেলেনি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. হাবিবুর রহমান খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘অন্য কোনো কারণে নয়, আমরা একটা ভিন্ন চিন্তা নিয়ে হাসপাতালটি প্রস্তুত হওয়ার পরও চিকিৎসা বন্ধ রেখেছিলাম।’

‘এই হাসপাতালটি নিয়ে আমাদের মধ্যে কথা হতো যে কবে চিকিৎসা শুরু করা যাবে। যেহেতু রোগী বেড়ে গেছে তাই এখন তো কোনো হাসপাতাল খালি রাখার সুযোগ নেই।’

(ঢাকাটাইমস/১৩জুন/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :