করোনা আমাকে চিনিয়েছে কে আপন কে পর

সজল মাহমুদ
 | প্রকাশিত : ৩০ জুন ২০২০, ১১:০৫

১৯ মে বিকেলে। ঘূর্ণিঝড় আম্পান কভার করতে পটুয়াখালীর পথে। খবর পাই করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ঈদ যাত্রীদের আটকাতে লেবুখালী ফেরি বন্ধ। সিদ্ধান্ত নিই বরগুনা যাবার। পথেই বেতাগীর রানীপুরে গ্রামের বাড়ি। এই সুযোগে মা বাবাকে দেখবো, আহা! এর আগের দুইদিন ছিলো হাল্কা জ্বর। বুক জ্বালা,বমি। চিকিৎসকের সাথে কথা বলি। উপসর্গ শুনে পরামর্শ দিলেন, নাপা ও স্যালাইন খাওয়ার।

বললেন, এগুলো তো করোনার উপসর্গ না। পরের দিন পুরো সুস্থ। তারপর ও নমুনা দিতে চাইলে চিকিৎসক জানান, এগুলো করোনার লক্ষণ না। পরে সিনিয়রের পরামর্শে নমুনা দেই। তখন চিকিৎসকে জিজ্ঞেস করি, অফিস করতে পারবো কিনা। তিনি বললেন, চালিয়ে যান....

যখন বাড়ি পৌঁছাই, সূর্য তখন দিগন্ত ছুঁই ছুঁই। গুটি গুটি পায়ে মেঘদল ভেসে যায় অজানা গন্তব্যে। বাড়ির পূর্ব দক্ষিণে প্রিয় নারকেলগাছটা ঠায় দাঁড়িয়ে। একটি বাদুড় পরলো তার ওপর পাতার দুলনি। এরমধ্যেই খবর পাই আমার করোনা পজেটিভ। মুষড়ে পরি। ভয় পাই। বিশেষ করে বৃদ্ধ মা- বাবাকে নিয়ে। আতঙ্কিত হই। চোখ ফেটে নামে জল। অস্ফুটে মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে হাহাকারধ্বনি।

তবে ঝিরিঝিরি বাতাস আমাকে জানিয়ে দেয় বেঁচে আছি। মাকে জানাই। বাড়ির পাশেই ছোট ফুফুর বাসা। সেখানে ফুললি সেল্ফ আইশোলেসন। প্রায় ২১ দিন পর বাইরের মানুষের সাথে মিশি। এই কয় দিন রুমের পশ্চিম পাশের জানাল দিয়ে আকাশ দেখি। বাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকি। সন্ধ্যার পর ব্যাঙের ডাক। প্রকৃতির ওইদানটুকুই খুব আপন তখন।

এদিকে প্রতিবেশীদের জ্বলজ্বলে নগ্ন কথোপকথন। হয়রানি। দুয়েকজন ছাড়া কেউ পাশে দাঁড়ায় নি। এক ঘরে করে রাখা। বড় হওয়ার পর এই প্রথম দেখলাম বাবা ঈদের নামাযে জান নি। ঈদের দিন ও কেউ আসেনি আমাদের ঘরে। খোঁজ ও নেয় নি কোন প্রতিবেশী। জানি জীবন অনিশ্চিত, পরতে পরতে রয়েছে অনিশ্চয়তা। তবে করোনা আমাকে চিনিয়েছে কে আপন- কে পর। জীবন মৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে দেখেছি চেনা মানুষ কতো দ্রুত অচেনা হয়।

ফাঁকা মরুভূমিতে বালুঝড় হয় ভীষণ, থামাতে পারি না।যে আমি সবার সঙ্গে বাঁচতে চাইতাম। সে আমি ভীষণ একলা-একা। বুঝতে পারলাম, বেঁচে থাকতে হলে বেশি কিছুর তেমন প্রয়োজন পড়ে না। যে জীবনে মানুষের ভিড় যত কম,সেখানে নিশ্বাস নেওয়ায় সুবিধা বেশি। এরপর একটা না–হওয়া ভোরের জন্য অপেক্ষা। আর অলস দুপুরের গন্ধ। আহারে জীবন। আহা জীবন....

মাসখানেক পর ঢাকায় ফিরি। গল্প খুঁজি। ছুটে যাই করোনা রোগীর জন্য রাজধানীর বিশেষায়িত মুগদা জেনারেল হাসাপাতালে ঢুকে পড়ি চিকিৎসারত করোনা রোগীদের কাছে বাঁচার আকুতি শুনি। আর অপেক্ষা করি কোন এক শুদ্ধ সকালের একমুঠো রোদের। যে সকালে সম্পূর্ণ সুস্থ হবে পৃথিবী। উল্লেখ্য আমার সংস্পর্শে আসা কেউ করোনায় আক্রান্ত হন নি।

লেখক: সাংবাদিক

ঢাকাটাইমস/৩০জুন/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :