টাঙ্গাইলে উদ্বোধনের আগেই সেতুর অ্যাপ্রোচে ধস

রেজাউল করিম, টাঙ্গাইল
| আপডেট : ১৪ জুন ২০২১, ১৬:২৫ | প্রকাশিত : ১৪ জুন ২০২১, ১৬:০৯

টাঙ্গাইলে উদ্বোধনের আগেই চার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের সেতুটির উভয় পাশের অ্যাপ্রোচ সড়কের মাটি সরে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এ ছাড়াও সেতুর সীমানা পিলারগুলো পড়ে আছে দুই পাশে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করায় অল্প দিনেই সেতুর এমন দুর্দশা। দ্রুত সেতুটির অ্যাপ্রোচের সংস্কারের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, চার কোটি ২৩ লাখ ১৪৬ টাকায় সদর উপজেলার ছিটকিবাড়ী-চরপৌলী সড়কের ধলেশ্বরী শাখা নদীর উপর ৮১ মিটার সেতুর দরপত্র আহ্বান করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ব্রিজটির নির্মাণ কাজ পায় মেসার্স ফ্রেন্ডস অ্যান্ড নাইজ (জেভি) জয়েন ভেন্সার নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

২০১৮ সালের ২৭ অক্টোবর সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন টাঙ্গাইল-৫ আসনের সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন। স্থানীয়রা জানান, এক বছর আগে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ হলেও উদ্বোধন করা হয়নি। তবে তার আগেই সেতুটির দুই অ্যাপ্রোচে মাটি সরে গিয়ে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুটির দক্ষিণ পাশের অ্যাপ্রোচের পূর্ব পাশে প্রায় ১০ ফিট অংশের মাটি সরে গেছে। অন্যদিকে উত্তর পাশের অ্যাপ্রোচের দুই দিকে ১২ ফিট করে মাটি সরে গেছে। এছাড়াও সেতুর উভয় প্রান্তের সীমানা পিলারগুলো পড়ে আছে। দিনের বেলায় পথচারীরা স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করলেও রাতে দুর্ঘটনার আতঙ্কে চলাচল করতে হয় এই সেতু দিয়ে।

এছাড়াও এর আগে দক্ষিণ প্রান্তের অ্যাপ্রোচে প্রায় ১৫ ফিট অংশে থেকে মাটি ও কার্পেটিং সরে গেলে এলাকাবাসীর উদ্যোগে ঢালাই করে ভরাট করা হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজিম উদ্দিন বলেন, ‘এ সেতু দিয়ে যুগনী, বাঘিল, ছিটকি বাড়ি, পৌলি, শিবপুরসহ আশপাশের ১৫ এলাকার লক্ষাধিক মানুষ চলাচল করে। কিন্তু নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করায় সেতুটির অ্যাপ্রোচ ও পিলার উদ্বোধনের আগেই ধসে গেছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান রফিককে জানালেও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে সেতু নির্মাণের শুরু থেকেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ করলেও এলজিইডি থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

সুলতান মাহমুদ নামে একজন বলেন, ‘সরকারি টাকায় এলাকার উন্নয়নের নামে ঠিকাদার, এলজিইডির কর্মকর্তা ও স্থানীয় কিছু পাতি নেতার পকেট ভরছে। কাজ নিম্নমানের হলেও অভিযোগ করে কোনো সুরাহা পাইনি। তাই সেতুটি সীমানা পিলার ও এপ্রোচ ধসে যাওয়ায় আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। যেকোনো সময় এই ব্রিজে দুর্ঘটনায় মৃত্যুসহ যেকোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’

পথচারী মিজানুর রহমান বলেন, ‘এখন পুরোদমে বন্যা শুরু হয়নি। বন্যার আগে অ্যাপ্রোচ ঠিক না হলে বন্যায় উভয় পাশের অ্যাপ্রোচ ধসে চলাচল বন্ধ হতে পারে। অ্যাপ্রোচ বন্যায় ধসে গেলে নৌকা ছাড়া আর কোনো গতি থাকবে না আমাদের। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

বাঘিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সোহাগ বলেন, ‘ধসে পড়ার পর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, এলজিইডির প্রকৌশলী ও এমপি মহোদয়কে অবগত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আনছারী সেতুটি পরিদর্শন করেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আনছারী বলেন, ‘সেতুটি পরিদর্শনের পর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এলজিইডির প্রকৌলীকে তাগিদ দেয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার করা হবে।’

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ শাহিন বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে এখনও উদ্বোধন করা সম্ভব হয়নি। বৃষ্টি হলে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। সেতুর কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে রাস্তা যেকোন সময় ভেঙে যেতে পারে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সদর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী একেএম হেদায়েত উল্ল্যাহ্ বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৪জুন/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :