সকালে ক্ষুধা না লাগার কারণ

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৯ জুন ২০২১, ১১:৩৬

মানুষের শরীরকে সচল রাখতে জ্বালানির প্রয়োজন পরে। আর এই জ্বালানির যোগান দেয় খাবার। তাই তো ক্ষুধা কমে গেলে প্রথমেই বুঝতে হবে যে হজম ক্ষমতার কোনও গোলযোগ দেখা দিযেছে। সেই সঙ্গে হজম সম্পর্কিত শরীরের একাধিক অঙ্গ হয়তো ঠিক মতো কাজ করতে পারছে না। তাই এমন লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। এবার তাহলে বুঝলেন তো ক্ষুধা কমে যাওয়াকে কেন হলকা ভাবে নিতে মানা করেন চিকিৎসকেরা।

সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে ক্ষুধা পাওয়াটাই স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে সকালে খিদে পায় না। প্রতিদিন এমন না হলেও কোনও কোনও দিন এই সমস্যা হয়। খিদে কমে যাওয়ার বিভিন্ন কারণ আছে। এর মধ্যে আছে: ১. জন্ডিস ২. পেপটিক আলসার ৩. পাকস্থলীর ক্যানসার ৪. কোষ্ঠকাঠিন্য ৫. জ্বর ৬. ধূমপান ৭. মানসিক রোগ যেমন অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা, ৮. ক্যানসার, ৯. দুশ্চিন্তা, অশান্তি, মানসিক অবসাদসহ বিভিন্ন ওষুধ যেমন ব্যথার ওষুধ, বিভিন্ন এন্টিডিপ্রেসেন্ট ইত্যাদি। এসব কারণ ছাড়ও খিদে কমতে পারে। খিদে কমে গেলে দ্রুত চিকিত্সকের কাছে যাওয়া উচিত। অবহেলা করা ঠিক নয়। নিজে নিজে বা কারো পরামর্শ শুনে ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।

রাতে বেশি প্রোটিন বা ফ্যাট-যুক্ত খাবার খেলে, সকালে খিদে না পাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু এর ফলে শরীর ক্লান্ত হয়ে যেতে পারে। গভীর রাতে হালকা কিছু খেলেও এমন হতে পারে।

অনেক সময় রাতে ঘুমের আগে কি কিছুটা উদ্বেগের মধ্যে ছিলেন? বা কোনও কারণে কি অবসাদে ভুগছেন? তা হল হরমোনের তারতম্যের কারণে আপনার সকালের খিদে কমে গিয়ে থাকতে পারে।

থাইরয়েডের সমস্যা হয়তো জানেন না, কিন্তু আপনার থাইরয়েডের সমস্যা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও সকালের খিদে একেবারে কমে যেতে পারে।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সকালের স্বাভাবিক খিদের মাত্রা কমে যায়। কারণ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হজমশক্তি কমে। তারই প্রভাব পড়ে ক্ষুধা উপর।

অবসাদ ক্ষিদে কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ হতে পারে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে ক্লিনিকাল ডিপ্রেশনের কারণে অনেক সময়ই ক্ষিদে কমে যায়। সেক্ষেত্রে নিদিষ্ট চিকিৎসা করানোর প্রয়োজন পরে।

অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকলে গ্যাস-অম্বলের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এই কারণেও কিন্তু ক্ষুধা কমে যেতে পারে। তাই বেশি সময় পেট খালি রাখবেন না। প্রতিটি মিলের ৩-৪ ঘন্টা পর কিছু না কিছু খাবার খাবেন। তাহলেই দেখবেন আর খিদে কমে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেবে না।

কিছু বিশেষ ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হলেও মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে খাবার খাওয়ার ইচ্ছাও কমে যায়। যেমন, স্টমাক ক্যানসার, কোলোন ক্যানসার, প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার এবং ওভারিয়ান ক্যানসার আক্রান্ত হলে এমনটা হয়ে থাকে।

শরীরে ভিটামিন এবং খনিজের ঘাটতি দেখা দিলেও ক্ষিদে কমে যায়। বিশেষত আয়রন এবং ভিটামিন বি১২-এর মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে হ্রাস পেলে এমন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তাই তো ক্ষুধা কমে যেতে শুরু করলে সময় নষ্ট না করে একটা ব্লাড টেস্ট করে নেবেন। তাহলেই বুঝতে পেরে যাবেন যে ভিটামিন এবং খনিজের ঘাটতির কারণে ক্ষিদে কমছে না অন্য কোনও কারণে। প্রসঙ্গত, শরীরে প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি হ্রাস পেলে ক্ষিদে কমে যাওয়ার পাশপাশি ক্লান্তি, কনস্টিপেশন, দাঁত থেকে রক্ত পরা প্রভৃতি সমস্যা দেখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট চিকিৎসা করালে তবেই রোগ নিয়ন্ত্রণে আসে।

ক্ষুধা কমে যাওয়া বড় অসুখের লক্ষণ হতে পারে। তাই এই সমস্যা বাড়াবাড়ি জায়গায় গেলে একে উপেক্ষা করবেন না।

চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ক্ষুধা কমে গেলে ঘি, মাখন, ভাজাপোড়া, ফাস্টফুড, রিচ ফুড খাবার খাওয়া ঠিক নয়। ধূমপান করা যাবে না। চা-কফি পরিমিতি পরিমাণে খেতে হবে।

বিভিন্ন ভেষজ এবং মশলা দিয়ে খাবার রান্না করুন। খাবার যত বেশি স্বাদযুক্ত হবে, আপনার ক্ষুধা জাগ্রত হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। এইভাবে আপনার ইন্দ্রিয়গুলো খাবার খেতে এবং স্বাদ গ্রহণের অপেক্ষায় থাকবে।

ক্ষুধার্ত না হলে নিজেকে জোর করবেন না। এর পরিবর্তে বেশি ক্যালরিযুক্ত খাবার অল্প অল্প করে খাওয়া যেতে পারে। যাতে আপনি শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তি পূরণ করতে সক্ষম হন।

মানসিক সমস্যার কারণে খিদে কমে গেলে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করতে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্য যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ফলমূলও শাকসবজি প্রচুর পরিমাণে খাওয়া উচিত। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করলে শরীর ও মন ভাল থাকে।

(ঢাকাটাইমস/২৯জুন/আরজেড/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :