প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছর

বিএনপির লক্ষ্য দ্বাদশ নির্বাচন, বড় চ্যালেঞ্জ দল গোছানো

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:৩০ | প্রকাশিত : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:৫৮

এক যুগের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। সবশেষ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও সুবিধা করতে পারেনি দলটি। ফলে সংসদে বিরোধী দলে থাকার সুযোগও হারাতে হয়েছে তাদের। এখন তাদের সামনে লক্ষ্য দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। কিন্তু দলের ঐক্য ধরে রাখা এবং দল গোছানোর মতো বড় চ্যালেঞ্জ সামলাতে হবে তাদের।

এদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ও জিয়া অরফানেজ দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে না পারা, শর্তের বেড়াজালে তার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ না থাকা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের লন্ডনে অবস্থান- সব মিলিয়ে অনেকটা নেতৃত্বসংকটে দলটির নেতাকর্মীরা। করোনার প্রকোপের কারণে মাঠের রাজনীতিতেও তেমন সক্রিয় থাকার সুযোগ পাচ্ছে না।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই প্রতিষ্ঠার ৪৩ বছর শেষ করে আজ ৪৪ বছরে পা দিল একানব্বই-পরবর্তী প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপি। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিএনপি গঠন করেন। ৪৪ বছরে এসে দলটি এখন সরকারের নানা চাপের মধ্যে টিকে থাকার লড়াই করছে। পাশাপাশি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে প্রধান টার্গেট করে নীরব প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।

ইতিমধ্যে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সক্রিয় করতে কেন্দ্র থেকে সাংগঠনিক কর্মসূচির পাশাপাশি জনসম্পৃক্ত কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে সারাদেশের সংসদীয় আসনগুলোতে গত নির্বাচনে যেসব মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন, তাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে কেন্দ্র থেকে। এতে নিষ্ক্রিয় থাকা অনেক নেতা সক্রিয় হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির সামনে এখন আরেক বড় চ্যালেঞ্জ দলের ঐক্য ধরে রাখা। তাই দ্রুত সারাদেশের কমিটি পুনর্গঠন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। অন্যদিকে ২০২৩ সালে একটি সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবির পাশাপাশি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য জনমত তৈরি করার চেষ্টা চলছে বিএনপিতে। যদিও এখনই ইসির বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলছেন না দলটির নীতিনির্ধারকরা।

অবশ্য এ নিয়ে সমমনা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। পরবর্তী সময়ে সবার মতামতের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি রূপরেখা প্রকাশ করা হবে। পর্যায়ক্রমে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আদায়ে ‘কার্যকরী’ আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনায় করছে দলটি।

বিএনপির নেতাকর্মীদের সাম্প্রতিক বক্তব্যেও নির্বাচনের প্রস্তুতির আভাস মিলছে। তবে সবশেষ নির্বাচনের আগের ঐক্য নিয়ে বিরূপ অভিজ্ঞতার কারণে ভোট নয়, আন্দোলনের জন্য জোটের পরিকল্পনা করছে বিএনপির হাইকমান্ড।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নতুন নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করতে হবে। এজন্য সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে অভিন্ন অভিমত তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে বিএনপি সব পর্যায়ে সংগঠনকে গুছিয়ে আন্দোলনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেবে। এ ছাড়া আমাদের উপায় নেই।’

বিএনপির বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান ও করণীয় সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্তী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘লম্বা সময় ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। স্বাভাবিকভাবেই নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা ধরনের হতাশা আছে। সাংগঠনিকভাবেও তারা নড়বড়ে অবস্থায়। কিন্তু দলটির সারাদেশে অনেক সমর্থন আছে, এটা অস্বীকার করা যাবে না। এই অবস্থায় তাদের রাজনৈতিক ধারায় থাকতে হলে অবশ্যই নির্বাচনে শক্তভাবে নামতে হবে। আর জাতীয় নির্বাচনের কথা চিন্তা করলে সেই হিসেবে খুব বেশি সময়ও নেই। ’

বিএনপির রাজনীতিতে আগের জ্বালাও-পোড়াওয়ের যে অভিযোগ ছিল সেখান থেকে গুণগত পরিবর্তন এসেছে এমন মন্তব্য করে গোবিন্দ চক্রবর্তী বলেন, ‘এটা অবশ্যই ভালো দিক। এখন তাদের উচিত হবে নির্বাচনকে মাথায় রেখে জনগণের ইস্যু নিয়ে কাজ করা। জনসমর্থন নিজেদের পক্ষে নিতে ইস্যু ধরতে হবে। পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবে শক্তি সঞ্চয় করতে হবে।’

যা থাকছে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে

৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বেশ কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিএনপি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আজ সকাল ছয়টায় বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের সব কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন, বেলা ১১টায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। দুপুর ১২টা থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এবং কেন্দ্রীয় অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে পর্যায়ক্রমে জিয়ার সমাধিতে ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।

এ ছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা, হেল্প ক্যাম্প ও করোনা রোগীদের সহায়তা প্রদান, দেশব্যাপী পোস্টার প্রকাশ করা এবং ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। সারাদেশে আলোচনা সভাসহ অন্যান্য কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে।

(ঢাকাটাইমস/১সেপ্টেম্বর/বিইউ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :