মৃত্যুর তিন দিন পর কবর থেকে শ্মশানে

শেরপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯:৫৮

রহস্যজনক মৃত্যুর পাঁচদিন পর শান্ত চক্রবর্তী (৪৫) নামে এক যুবকের লাশ কবর থেকে শ্মশানে পৌঁছালো। শান্ত শেরপুর শহরের গৃর্দানারায়ণপুর এলাকার মৃত. সমর চক্রবর্তীর ছেলে ও এক সন্তানের পিতা। ৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হয়ে তিনি নিখোঁজ হন। পরে ৮ সেপ্টেম্বর সকালে নিহতের স্ত্রী রুপা চক্রবর্তী ও ছেলে কলেজ শিক্ষার্থী সোম চক্রবর্তী সদর থানায় উপস্থিত হয়ে জিডি করেন।

পরবর্তীতে পাশের জেলা জামালপুর রেল স্টেশনের পাশ থেকে শান্তর লাশ উদ্ধার এবং অজ্ঞাতনামা হিসেবে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফনের ছবি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সুবাদে তাকে শনাক্ত করেন স্বজনরা।

পরে দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে শনিবার বিকালে তার লাশ কবর থেকে তুলে দাহ (পোড়ানো) হয়।

এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিহতের ছোট ভাই রাজু চক্রবর্তী। ঘটনাটি শেরপুর ও জামালপুরে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

নিহতের স্বজনরা জানান, শান্ত দীর্ঘদিন যাবত জামালপুর শহরের রেলগেইট এলাকায় লিলি মোটরসে ম্যানেজার পদে চাকরি করতেন। প্রায় ছয় মাস আগে ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি নিজ বাড়িতেই থাকতেন। ওই অবস্থায় ৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হলেও রাতে আর ফেরেননি। পরে খোঁজ-খবর নিয়ে তার হদিস না পাওয়ায় ৮ সেপ্টেম্বর সকালে শান্তর নিখোঁজের বিষয়ে স্ত্রী রূপা চক্রবর্তী ও একমাত্র ছেলে সোম চক্রবর্তী সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

এরপর বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সুবাদে তার পরিবার খবর পায় জামালপুর রেল স্টেশন থেকে গেঞ্জি ও প্যান্ট পরা এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার হয়েছে। পরে রেল পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে উদ্ধার হওয়া লাশের ছবি দেখে তা শান্ত চক্রবর্তীর বলে শনাক্ত করা হয়। কিন্তু ততক্ষণে জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারিশ হিসেবে লাশটি স্থানীয় আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর এবং তাদের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় পৌর কবরস্থানে দাফনের কাজটি সম্পন্ন হয়।

ওই সময় রেলওয়ে পুলিশ শান্তর স্বজনদের জানায়, ৮ সেপ্টেম্বর ভোর ৪টার দিকে মাথায় রক্তাক্ত অচেতন অবস্থায় তাকে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের ৩০০ গজ পূর্বদিকের রেললাইনের পাশে পাওয়া যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সকাল ৭টার দিকে মারা যায়।

পরে ওই দিন রাতে রেলওয়ে পুলিশের এসআই কাউসারের কাছ থেকে ওই লাশ উদ্ধার ও ময়নাতদন্তসহ দাফনের কাগজপত্র সংগ্রহ করে স্বজনরা এলাকায় ফিরে আসে। শেরপুর সদর থানা পুলিশের কাছে ওইসব কাগজপত্র হস্তান্তর করে। তারই ধারাবাহিকতায় ৯ সেপ্টেম্বর সকালে অনুসাঙ্গিক আরো কাগজপত্র নিয়ে জামালপুরে যায় স্বজনরা। পরে শান্তর ছেলের আবেদনের প্রেক্ষিতে সন্ধ্যায় জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সরকার আব্দুল্লাহ আল মামুনের উপস্থিতিতে তার লাশ উত্তোলন করে সৎকারের জন্য পরিবারের কাছে হস্তান্তরের আদেশ দেন।

শান্তদের প্রতিবেশী সুমন দাশ জানান, পরদিন সকালে স্বজনরা আদেশের ওই পত্র নিয়ে গেলে লাশ উত্তোলনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় রেলওয়ে পুলিশ। এ সময় রেলওয়ে পুলিশ জানায়, ছেলের সাথে বাবার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। এরপরই লাশ হস্তান্তর সম্ভব হবে।

পুলিশের এমন বক্তব্যে শান্তর স্বজনরা হতাশ হয়ে পড়েন। উপায়ন্তর না পেয়ে তারা বিষয়টি জামালপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদকে জানায়। পরে ওই সংগঠনের কর্মকর্তারা পুলিশের সাথে অলোচনা করে বিষয়টি সুরহা করে। তার ভিত্তিতে শনিবার সকালে শান্তর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে শেরপুরের শেরী মহাশ্মশানে দাহ করা হয়।

শান্তর ছোট ভাই রাজু ও রতন চক্রবর্তী অভিযোগ করে বলেন, রেললাইনের পাশে তার ভাইয়ের মৃত্যুটি রহস্যজনক। ট্রেনের সাথে ধাক্কায় তিনি মাথায় আঘাত পেয়ে থাকতে পারেন- জিআরপি পুলিশ এমন দাবি করলেও স্থানীয়রা তা কেউ বলতে পারছেন না।

এছাড়া লাশটি শনাক্তের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা তারা নেয়নি।

জামালপুর রেলওয়ে পুলিশের এসআই সোহেল রানা বলেন, অচেতন ও রক্তাক্ত অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার মৃত্যুর পর শনাক্তকারী পাওয়া না যাওয়ায় প্রয়োজনীয় কার্যাদি শেষ করে মুসলিম ভেবে দাফনের জন্য আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামে হস্তান্তর করা হয়।

তার মতে, ঢাকাগামী কোন ট্রেনের ধাক্কায় তিনি আঘাত পেয়ে থাকতে পারেন। প্রাথমিকভাবে তারা এমনটিই ধারণা করছেন।

(ঢাকাটাইমস/১১সেপ্টেম্বর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :