খাগড়াছড়ির ৯ উপজেলায় সরকারি হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষকসহ ৮৪টি পদ শূন্য

মোবারক হোসেন, খাগড়াছড়ি
 | প্রকাশিত : ০৬ অক্টোবর ২০২১, ১৪:৪৬

খাগড়াছড়ি জেলার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়গুলোর একটিতেও প্রধান শিক্ষক নেই। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই ১৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে। জেলায় ১৫৬টি সৃষ্ট পদের মধ্যে মোট শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ৮৪টি, যা মোট সৃষ্ট পদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি।

এছাড়াও প্রধান শিক্ষককের পদ শূন্য থাকায় সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককের দায়িত্ব দিয়ে বিদ্যালয়গুলো পরিচালনা করা হচ্ছে। এর ফলে অফিসের কাজ ও বিদ্যালয়ে পাঠদান দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষকদের। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে বাধাগ্রস্তও হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম।

একদিকে প্রয়োজনের তুলনায় কম শিক্ষক ও অন্যদিকে শ্রেণিকক্ষে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী থাকায় দেখা যায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা কিছুই শিখছে না। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী কোনোমতে পাশ করছে। এজন্য উচ্চ বিদ্যালয়গুলোতে শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষক পর্যাপ্ত বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে জেলা সদরের ২টি সহ ৫টি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় পূর্ণ সরকারিকরণ হয়েছে। এর মধ্যে বাকি পাঁচটি উপজেলায় উচ্চ বিদ্যালয় সরকারিকরণ করা হলেও কিছু জটিলতা এখনো রয়ে গেছে। পূর্ণ সরকারি এই পাঁচটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সব প্রতিষ্ঠানেই প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। দীঘিনালা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ২০০৫ সাল থেকে। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সেখানে কোনো প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বাকি বিদ্যালয়গুলোতেও ৫-৭ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ৮৪টি।

এর মধ্যে খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সৃষ্ট পদ ৫০টি, শিক্ষক রয়েছেন ৩১টি পদে, এখানে শূন্য পদ রয়েছে ১৯টি। খাগড়াছড়ি বালিকা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সৃষ্ট পদ ৪১টি, শিক্ষক রয়েছেন ১৭টি পদে, শূন্য পদ রয়েছে ২৪টি। দীঘিনালা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সৃষ্ট পদ ২৭টি, শিক্ষক রয়েছেন মাত্র চারটি পদে, এখানে শূন্য পদের সংখ্যা ২৩টি । মানিকছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সৃষ্ট পদ ১১টি, শিক্ষক রয়েছেন ৭টি পদে, শূন্য পদ ৪টি। রামগড় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সৃষ্ট পদ ২৭টি, শিক্ষক রয়েছেন ১০টি পদে, এখানে শূন্য পদ ১৭টি।

খাগড়াছড়ি বালিকা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আশাপূর্ণ চাকমা বলেন, ‘আমরা প্রতিবছরই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আমাদের বিদ্যালয়ের শূন্য পদের তালিকা পাঠিয়ে থাকি। এখানে ৪১ জনের মধ্যে ২৪ জন শিক্ষকই নেই। গণিতের শিক্ষক দিয়ে ইংরেজি-বাংলা পড়াতে হয়। এখানে ভূগোল, চারুকলা এবং ধর্মীয় কোনো শিক্ষকই নেই, যার ফলে হিন্দু শিক্ষক দিয়ে ইসলাম ধর্ম পড়াতে হয়। মোট কথা আমাদের বিদ্যালয়ে চরম শিক্ষক সংকট রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষক দরকার।’

দীঘিনালা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনুপ চন্দ্র দাশ বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে ২০০৫ সাল থেকে প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়াও ২৭টি পদের মধ্যে মাত্র চারজন শিক্ষক রয়েছেন আমার এখানে। শূন্য পদের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হয়েছে। অতিথি শিক্ষক দিয়ে কোনরকম আমরা পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছি।’

খাগড়াছড়ি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম খীসা বলেন, ‘খাগড়াছড়ির সবকটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এতে করে সুষ্ঠু শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। আশা করি শিগগির এই সমস্যার সমাধান হবে।’

(ঢাকাটাইমস/৬অক্টোবর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :