বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল মুরাদ হাসানকে

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:১২ | প্রকাশিত : ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:৫০

স্কয়ার হাসপাতালে নিরাপত্তারক্ষীর গায়ে হাত তোলার অভিযোগ উঠেছিল তখন। গাড়ি পার্কিং নিয়ে চালক ও নিরাপত্তারক্ষীর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়, অতঃপর নিজের পরিচয় দিয়ে নিরাপত্তারক্ষীর গায়ে হাত তোলেন উত্তেজিত তৎকালীন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। ঘটনার ফুটেজ পরে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দেওয়া হয় বলে সূত্রে জানা যায়।

ওই ঘটনা সরকারসহ দলের নীতিনির্ধারকদের মধ্যেও বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মন্ত্রিসভার একজন সদস্যের কাছ থেকে এমন আচরণ কাঙ্ক্ষিত ছিল না কারও কাছেই। দেশের অন্যতম বড় শিল্পগোষ্ঠী স্কয়ারও ওই ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ধরনা দেয় সরকারের উচ্চ পর্যায়ে। পরে পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় মুরাদ হাসানকে।

শুধু স্কয়ারের ওই ঘটনাই নয়, প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর নিজ দপ্তর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব ও পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ ছিল মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে। কথায় কথায় উত্তেজিত হয়ে যাওয়া, তার মতের বিরুদ্ধে গেলে যাকেতাকে শাসানোসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি। তার ব্যক্তিগত দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এনিয়ে ছিল চরম অসন্তুষ্ট।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা আলাপের ছলে বর্ণনা করছিলেন এমন একটি ঘটনা। প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে মুরাদ হাসানের পছন্দের কয়েকজন চিকিৎসককে কেন পদোন্নতি দেওয়া হয়নি? এই প্রশ্নে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনের সঙ্গে চরম অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন মুরাদ হাসান। মন্ত্রণালয়ে পদস্থ কর্মকর্তাদের সামনে মন্ত্রীর টেবিল চাপড়ে মন্ত্রীকে শাসিয়েছিলেন তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী। ঘটনায় দারুণভাবে বিচলিত ও হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন মন্ত্রী, সচিবসহ উপস্থিত সবাই।

সূত্রে জানা গেছে, ওই ঘটনার পর দীর্ঘসময় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে সাধারণ কথাবার্তাও বন্ধ ছিল। অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ভেতরে ভেতরে চরম অসন্তুষ্ট ছিলেন মুরাদ হাসানের ওপর। বিষয়গুলো সরকার প্রধান পর্যন্ত পৌঁছালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে ২০১৯ সালের মে মাসে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করে সুযোগ দেওয়া হয় মুরাদ হাসানকে। কিন্তু শেষমেশ এখানেও নিজের স্বরূপ চেনান তিনি।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে ওঠেন মুরাদ হাসান। এই ভালো, এই মন্দ-আচরণে তটস্থ থাকতেন অধীনস্থরা। নিজ দপ্তরের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কথায় কথায় গালমন্দ করার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। তার মতের বাইরে কারোই কিছু বলার ছিল না। তার পদত্যাগের পর যেন হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

নারীদের নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য, একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রীর সঙ্গে অশালীন ও অশ্রাব্য ভাষায় ফোনালাপ ফাঁসের পর মুরাদ হাসানকে নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে সরকার ও দল। পরে পরিস্থিতি বিবেচনায় মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই নির্দেশ অনুযায়ী বাধ্য হয়ে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে গত ৭ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন মুরাদ। ওইদিনই জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় তাকে। পরদিন নিজ নির্বাচনী এলাকা সরিষাবাড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের পদও হারান তিনি। এবার জামালপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যের পদটিও তিনি হারাতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে।

এর আগে পবিত্র হজ নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য এবং প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সম্পর্কে কটূক্তি করায় মন্ত্রিত্ব হারিয়েছিলেন লতিফ সিদ্দিকী। পরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর পদ থেকে বহিষ্কার হন তিনি। বাধ্য হয়েছিলেন সংসদ সদস্য পদ থেকেও পদত্যাগ করতে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, লতিফ সিদ্দিকীর মতোই ভাগ্য বরণ করতে হবে মুরাদ হাসানকে।

(ঢাকাটাইমস/৯ডিসেম্বর/এইচএফ/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :