জনগণ আ.লীগ-বিএনপির হাত থেকে মুক্তি চায়: জিএম কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০১ জানুয়ারি ২০২২, ২২:৫২

দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হাত থেকে মুক্তি চায় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের।

তিনি বলেন, এ দুটি দল অপকর্ম, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, লুণ্ঠনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে চলেছে। ক্ষমতার পরিবর্তনে এ অবস্থার পরিবর্তন হয় না। দেশের মানুষ এখন জাতীয় পার্টিকেই বিকল্প শক্তি হিসেবে মনে করছে। তারা জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়।

শনিবার বিকালে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে জিএম কাদের এসব কথা বলেন।

জাপা চেয়ারম্যান আরও বলেন, ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চেয়ে জাতীয় পার্টি দেশে বেশি গণতন্ত্র, সুশাসন আর উন্নয়ন দিতে পেরেছে। দেশের মানুষের প্রত্যাশা ভবিষ্যতেও দিতে পারবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি হচ্ছে অচল পয়সার এপিঠ-ওপিঠ। দেশের মানুষ চায় চকচকে নতুন পয়সা। জাতীয় পার্টির মতো রাজনৈতিক শক্তির দিকে তাকিয়ে আছে দেশের মানুষ।

দেশে কোটি কোটি মানুষ বেকার রয়েছে অভিযোগ করে জিএম কাদের বলেন, কোনো কর্মসংস্থান নেই। অভাব অনটনে যুব সমাজ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। জড়িয়ে পড়ছে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে। প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে দ্রব্যমূল্য বেড়েই চলছে। গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের বিল বাড়ছে, কিন্তু মানুষের আয় বাড়ছে না। পরিবার নিয়ে জীবন-যাপনে হাপিত্যেশ উঠেছে সাধারণ মানুষের। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে গেলে তেলের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়, কিন্তু বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলে দেশে তেলের দাম কমানো হয় না। কৃষক যে ফসল ৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করে, সেই ফসল রাজধানীতে হাত ঘুরে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

‘বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে গণপরিবহণের নৈরাজ্য থামছে না। গণপরিবহণ কে নিয়ন্ত্রণ করছে বিষয়টি পরিষ্কার নয়। কৃষিপণ্য সরবরাহে ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য। ফুটপাতে বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অসহায়, দেখার যেন কেউ নেই। এগুলোর মূল কারণ সরকারের জবাবদিহিতার অভাব, সার্বিকভাবে আইনের শাসনের অনুপস্থিতি।’

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, দেশে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় জিডিপি বেড়েছে, জিডিপি বাড়লে মানুষের পেট ভরে না। দেখা যাচ্ছে জিডিপি বাড়লে সাধারণ মানুষের উপকার হয় না, তাই জিডিপি নিয়ে সাধারণ মানুষের কোনো আগ্রহ নেই। বেকার সমস্যার সমাধানে প্রবৃদ্ধির কোনো ভূমিকা লক্ষ্যণীয় নয়।

‘নির্বাচনে ভিন্নমতাবলম্বীদের মাঠে দাঁড়াতে দেয় না ক্ষমতাসীনরা। ক্ষমতার জোরে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় জয়ী হতে চায় তারা। কোথাও কোথাও ক্ষমতাসীনরা প্রশাসনের সহায়তায় কলুষিত করছে নির্বাচনী ব্যবস্থা। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনে ভোট ডাকাতি ও অব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে- এটা জাতির জন্য লজ্জাজনক।’

নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের আস্থা নেই

নির্বাচন কমিশন মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলেছে মন্তব্য করে জিএম কাদের বলেন, এক সময় নির্বাচন ছিল উৎসব মুখর, এখন নির্বাচন হচ্ছে ভয় আর আতঙ্কের নাম। ক্ষমতা ও কালোটাকার খেলায় দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা কলুষিত হয়েছে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও নির্বাচন কমিশন গঠন আইন না হওয়াও লজ্জাজনক।’

স্বাস্থ্যসেবা নাজুক

তিনি বলেন, করোনাকালে প্রমাণ হয়েছে আমাদের দেশের স্বাস্থ্যসেবা কতটা নাজুক। আমাদের দাবি- উপজেলা পর্যায়ের প্রতিটি হাসপাতালে সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। উপজেলাসহ সব সরকারি হাসপাতালে আইসিইউর ব্যবস্থা থাকতে হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে এমবিবিএস পাশ চিকিৎসক দ্বারা স্বাস্থ্যসেবা দিতে হবে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার, নার্স ও টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দিতে হবে। দেশের মানুষ জানতে পেরেছে স্বাক্ষ্য খাতে মারাত্মক লুটপাটের খবর। স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘ দিনের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে- তা আমরা জানতে চাই।

‘জাতীয় পার্টি তার জন্ম থেকে অদ্যাবধি ৩৫ বৎসর সময়ের মধ্যে প্রায় ৪ বৎসর জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় ছিল। পরবর্তী ৩১ বৎসর দলটি ক্ষমতার বাইরে। ক্ষমতায় আসতে না পারলেও ক্ষমতা নিয়ামক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলছে।’

জিএম কাদের বলেন, আত্মপ্রকাশ করার পর ক্ষমতা হস্তান্তর করা পর্যন্ত যে ৪ বৎসর জাতীয় পার্টি সরকার পরিচালনা করেছে, সে চার বৎসর সময়ে বাংলাদেশ গণতন্ত্র চর্চার মাপকাঠিতে ও জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড সম্পাদনে তুলনামূলকভাবে ভালো ছিল বলা যায়। জনগণের অধিকার অপেক্ষাকৃতভাবে নিশ্চিত ছিল। সুশাসন উপভোগ করেছে মানুষ। সবাই আইনের চোখে সমান ছিল ও আইনের আওতায় ছিল। সমাজে সার্বিকভাবে বৈষম্য ছিল কম, ন্যায়বিচার ছিল।

বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, আজ স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছর বা সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে বলা যায়, সার্বিকভাবে বিবেচনায় স্বাধীনতার পর থেকে অধ্যাবদি বাংলাদেশে কোনো সময় গণতন্ত্রের চর্চা গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে ছিল না। কোনো সময়ই তেমন কোনো গণতন্ত্রের চর্চা হয়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্ষমতায় আসীন হয়ে সরকার গণতন্ত্রের চর্চার সুযোগ সংকুচিত করেছে। গণতন্ত্র চর্চার সহায়ক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পর্যায়ক্রমে দুর্বল থেকে প্রায় ধ্বংস করা হয়েছে।

আলোচনাসভা শেষে ওই একই স্থানে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া এবং যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজুর সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন- জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরীফা কাদের এমপি।

আরও উপস্থিত ছিলেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, নাজমা আক্তার এমপি, মেজর (অব.) রানা মো. সোহেল এমপি, উপদেষ্টা রওশন আরা মান্নান এমপি ও ডা. রুস্তম আলী ফরাজী এমপি।

ঢাকাটাইমস/০১জানুয়ারি/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এদেশে এসে যারা দাপট দেখাবে তাদের ক্ষমতা মধ্যপ্রাচ্যেই সংকুচিত : ওবায়দুল কাদের 

শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আকবর খান রনোর মরদেহ

শহীদ মিনারে আকবর খান রনোর প্রতি সর্বস্তরের শ্রদ্ধা ১১টায়

সাংবাদিক শামছুদ্দীনের মায়ের মৃত্যুতে রওশন এরশাদের শোক

১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বিএনপির লিয়াজো কমিটির বৈঠক

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ছাত্রদলের শুভেচ্ছা

নির্বাচনের পর বিএনপি তাবিজ-দোয়ার দিকে ঝুঁকেছে: হাছান মাহমুদ

আওয়ামী লীগের সঙ্গে লুটেরা আর ভারত ছাড়া কেউ নেই: রিজভী

বাইডেনের চিঠির ফলোআপ করতে আসছেন ডোনাল্ড লু: ওবায়দুল কাদের

বন বিভাগের ৪ লাখ গাছ কাটার সিদ্ধান্তে জিএম কাদেরের উদ্বেগ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :