ভয়াবহ যানজট হতে পারে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে

এবারের ঈদে বড় একটি অংশ রাজধানী ছাড়বে। ইতোমধ্যে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন অনেকেই। ফলে মহাসড়কে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চাপ বাড়ছে ঘরমুখো মানুষের।
গত দুই বছর করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেও কঠোর বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে কোটির ওপর মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। এই সংখ্যা এ বছর বাড়বে কয়েকগুন। সেই বিষয়টি সামনে রেখে কিছু পদক্ষেপ নিলেই ঈদযাত্রা স্বস্তির হবে বলে ধারণা পরিবহন সংশ্লিষ্টদের।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বারোপাড়া ও হাসানপুর এলাকায় ঢাকামুখী লেনের সংস্কার কাজ চলছে। এ কারণে চার লেনের মহাসড়কটির এক পাশে প্রায় দেড় থেকে দুই কিলোমিটারজুড়ে বন্ধ হয়ে আছে। ফলে দুই লেন দিয়ে চলছে চার লেনের গাড়ি। এমন অবস্থা চলতে থাকলে ঈদের আগে এই এলাকায় ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হতে পারে।
সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনার মাধাইয়া থেকে দাউদকান্দির শহিদনগর পর্যন্ত প্রায় ৪৫ কিলোমিটার এলাকায় সবচেয়ে বেশি যানজটের সৃষ্টি হয়। মাঝে মাঝে কুমিল্লার ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্তও চলে যায় অপেক্ষমান গাড়ির সারি।
এ বিষয়ে দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল হক বলেন, ‘দাউদকান্দি পুরো এলাকাটিই যানজটপ্রবণ। হুট করে উল্টো দিক থেকে কোনো গাড়ি ঢুকে গেলেই জট লেগে যায়। পুরো এলাকায় তাই আমাদের নজর রাখতে হয়। অল্পসংখ্যক লোক দিয়েই পুরো এলাকায় নজরদারি করা লাগে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনা ঘটলেই বড় যানজট তৈরি হয়। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজ করতে করতে সময় বেশি লেগে যায়। এ সময়ের মধ্যেই যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। প্রতিদিন সংস্কার কাজের জন্য রাস্তার এক পাশের এক কিলোমিটার পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ থাকে। এ কারণে একপাশ একপাশ করে গাড়ি ছাড়তে হয়। তখনই বেশি জটলা হয়ে যায়।
তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল থেকে মেঘনা ঘাট পর্যন্ত সড়কে কোনো প্রকার সংস্কার বা উন্নয়ন কাজ নেই। তবে সিগন্যাল রয়েছে। ফলে মহাসড়কে মানুষ নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারবে। শুধুমাত্র সিগন্যালের কারণে হয়তো অল্প সময় বসে থাকতে হতে পারে। ইতোমধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মহাসড়কে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সরেজমিনে মেঘনা টোল প্লাজা থেকে শুরু করে শিমরাইল পর্যন্ত দেখা যায়, এ সড়কে প্রায় ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত কোনো সড়ক ও জনপদের সংস্কার বা উন্নয়ন কাজ নেই। এ ১৬ কিলোমিটার সড়কে কোনো ভাঙাচোরাও নেই।
তবে এ সড়কে ছোট বড় মিলিয়ে ১১টি সিগন্যাল রয়েছে। এর মধ্যে মদনপুর চৌরাস্তা, মোগরাপাড়া চৌরাস্তা ও মেঘনা টোল প্লাজায় বড় ৩টি সিগন্যাল রয়েছে। এসব সিগন্যালে পড়ে দীর্ঘক্ষণ এখনই মানুষকে গাড়িতে বসে থাকতে হয়। এছাড়াও মেঘনা ও গোমতী সেতুতে টোল আদায়ে বিলম্ব যানজটের বড় কারণ হতে পারে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের গাড়ির চাপ বৃদ্ধি পেলে দৃশ্যপট আরো পরিবর্তন হতে পারে বলে জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা।
পরিবহন শ্রমিকদের দাবি, মদনপুর চৌরাস্তা ও মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় লোকাল বাসের স্ট্যান্ড রয়েছে। এখানে যাত্রী ওঠা-নামা করার করাণে যানজট লেগে থাকে। এ দুটি স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে যানজট থাকবে না।
অপরদিকে মেঘনা টোল প্লাজায় টোল আদায়ে ধীরগতি থাকে। নিরসনে সকল টোল বুথ চালু রাখতে পারলে যানজট থাকবে না বলে মনে করেন তারা। এছাড়া ছোট ছোট যানবাহন সিএনজি, অটোরিকশা, ভ্যান মহাসড়কে চলাচল করতে না দিলেই হয়তো যানজট নাও থাকতে পারে।
হানিফ পরিবহনের চালক সোলাইমান মিয়া বলেন, এ বছর শিমরাইল থেকে টোল প্লাজা পর্যন্ত যানজটের আশংকা করছি না। তবে পুলিশের তৎপরতায় সিগন্যালগুলো ও মহাসড়কে তিন চাকার বাহন সিএনজি, অটোরিকশাসহ ছোট ছোট বাহন সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই ঈদযাত্রা স্বস্তির হবে।
এ বিষয়ে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নবীর হোসেন বলেন, মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে মেঘনা টোল প্লাজা পর্যন্ত যানজটের তেমন আশংকা নেই। যানজট নিরসনে মহাসড়কের সিগন্যাল ও লোকাল বাসস্ট্যান্ড, তিন চাকার গাড়ি নিয়ন্ত্রণ ও চলাচলে অনুপযোগী গাড়ি চলাচলে বিধি নিষেধ ও বিকল হওয়া গাড়ি দ্রুত সরিয়ে নেওয়া, অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নজরদারিসহ বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। আশা করি অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ঈদযাত্রা স্বাভাবিক হবে। আমরা ঘরমুখো মানুষের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।
(ঢাকাটাইমস/২৪এপ্রিল/আরকেএইচ)

মন্তব্য করুন